ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বিত্তবানরা কোথায়? 

মঈন বকুল

প্রকাশিত : ০৩:৫৪ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৫৫ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার

বিশ্বের দুইশরও বেশি দেশে ছেয়ে গেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। সংক্রমণ রোধে সবধরণের চেষ্টা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না প্রকোপ। উল্টো প্রতিদিন আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন কোনো দেশ। এতে করে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা, ভারি হচ্ছে লাশের সারি। 

সরকারের দেয়া তথ্যমতে, করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ জন। তবে অনেকের অভিযোগ, করোনার আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও পরীক্ষার অভাবে তাতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। 

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটি নতুন করে প্রাণ কেড়েছে ২ হাজার ৩৮৯ জনের। যার অধিকাংশই ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ২৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে।  

অপরদিকে, কয়েকগুণ বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি নতুন করে ৪৮ হাজার ৪৬১ জনকে সংক্রমিত করেছে। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৫ জনে পৌঁছেছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ২১৮ জন। 

মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে ভয়াবহ রুপ দেখছে ইউরোপসহ অন্যান্য মহাদেশের মানুষ। জনজীবন থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্থনীতির চাকার মুখ থুবড়ে পড়েছে করোনায়। যার ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মহামন্দার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। 

সম্প্রতি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষ তহবিলে বালাদেশ জাতীয় দলের ২৭ জন ক্রিকেটার বেতনের অর্ধেকটা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আর্থিক অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই মানবিক উদ্যোগের পেছনে মাশরাফি বিন মুর্তজার একটা বড় ভূমিকা আছে। তিনিই প্রথম টি২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ও ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে বিষয়টি নিয়ে ভাবনার খোরাক দেন। 

গতকাল ফোনে মাহমুদুল্লাহ সেটাই জানালেন, ‘দুই দিন আগে মাশরাফি ভাই আমাকে ফোন করে বললেন, ক্রিকেটারদের দিক থেকে কোনো অনুদান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা। এরপর আমি তামিমের সঙ্গে কথা বলেছি। ও উদ্যোগ নিয়ে বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটি বাস্তবায়নের পেছনে বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার সাব্বির ভাইয়ের ভূমিকা আছে।’

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি পাওয়া ১৭ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে সম্প্রতি জাতীয় দলে খেলা আরও ১০ জন মিলে এক মাসের বেতনের অর্ধেকটা দেবেন। পরিমাণে সেটা খুব বেশি না হলেও দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করার মতো উদ্যোগ। ২৭ জনের এক মাসের বেতনের অর্ধেকটা হয় ৩১ লাখ টাকা। সেখান থেকে ট্যাক্স কেটে নেওয়ার পর ২৬ লাখ টাকা যাবে বিশেষ তহবিলে। 

এই মহৎ উদ্যোগের পেছনে যার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল সবচেয়ে বেশি, সেই তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘মাশরাফি ভাই যোগাযোগ করার পর রিয়াদ ভাই, মুশফিক, মুমিনুলের সঙ্গে কথা বলি। তারা সবাই সাড়া দিলে বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’ 

জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের আর্থিক অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন টাইগার সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি তিন অধিনায়ককে ধন্যবাদও জানান তার ফেসবুক পেজে।

তবে ক্রিকেট বোর্ড বা ক্রিকেটারদের আর্থিক অনুদানের টাকা কোন তহবিলে দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তহবিল গঠন করা হয়নি। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পরই টাকা ছাড় করানো হবে।

এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহায্য সহযোগিতা করছেন অনেকেই। ব্যক্তির পাশাপাশি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছেন। 

এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে চীনা দূতাবাস। তারা জানায়, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ বাংলাদেশিদের জন্য প্রচুর পরিমাণে টেস্ট কিটসহ জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মহামারি প্রতিরোধে চীন সবসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হবে।

এছাড়া বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে মাস্ক, টেস্ট কিট আর নিরাপত্তা পোশাক অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনের অনলাইনভিত্তিক খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আলিবাবা। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা নিজের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এছাড়া মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস) এর কান্ট্রি ডিরেক্টর স্বপ্না ভৌমিকের নেতৃত্বে বুয়েটের একদল অ্যালামনাই সদস্য করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করছেন সুরক্ষা পোশাক।

দেশের এই বিপদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন, কেন বিদেশিদের প্রতি আমরা তাকিয়ে আছি? আমাদের যা আছে তাই নিয়ে কেন নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি না। কেন আমাদের দেশের বড় বড় গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে না? 

প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে দেশের এই ক্রান্তিকালে বিদেশি দেশ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে সেখানে দেশের বড় বড় ব্যাংক, গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানগুলো কই? এত এত ব্যাংক, এত এত ইস্যুতে বিভিন্ন তহবিলে দান করে, এখন তারা চুপ কেন? এলাকার এমপি-মেয়ররা কই? বিত্তবানরা কোথায়? তাদের ভূমিকা কী এই বিপদে? 

বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যারা যাকাত দেয়ার নামে ফুটানি মারে তারা আজ কোথায়? যারা শাড়ি লুঙ্গি বিলাতে গিয়ে মানুষ মারে। তারা তো এই যাকাতের টাকা গরীবদের দিয়ে কেন বলছে না, ‘এই টাকা দিয়ে চলো, এক মাস আর ঘর থেকে বের হইয়োনা।’

এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে, দেশের এই ক্রান্তিকালে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি গার্মেন্টস মালিকরা কোথায়? যেখানে দিনের পর দিন কষ্ট, শ্রম আর মেধা দিয়ে শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী করে তুলছে। যেখানে মালিকদের আরও বিত্তশালী করছে। সেই শ্রমিকদের আজ নিরাপত্তা দেবে কে? কে নেবে তাদের দায়িত্ব?