ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবস ও আজকের শিশুরা

ড. সালেহা কাদের 

প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার

চেরী ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে জাতীয় ও বিশেষ দিবসগুলো বেশ ঘটা করে উদযাপিত হয়। কিন্তু এবার বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে সারা পৃথিবীর ন্যায় আমাদের দেশও আক্রান্ত হয়েছে। সকল স্কুল কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে এবারের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সকল আয়োজন সংকুচিত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সরকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। যার ফলে আমাদের স্কুল বন্ধ। প্রতি বছর এই দিনে আমাদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা বেশ সাগ্রহে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে স্কুল প্রাঙ্গন সাজিয়ে তোলে শৈল্পিক কারুকাজে। প্রতিবছর স্বাধীনতার দিনে কচিকাঁচাদের উৎসব-আয়োজনে মুখরিত থাকে আমাদের স্কুল। এইদিনে গত বছরের কিছু স্মৃতি আমাকে তাড়া করছে। 

ক্লাস পরিদর্শনে গিয়ে দেখি পিছিয়ে নেই দ্বিতীয় শ্রেণির ছোট্ট সোনামণিরা। অনেকেই ছবি আঁকছে তাদের স্কুল ও ক্লাসরুম সাজাবে বলে। কেউ মুক্তিযোদ্ধার হাতে পতাকা বা রাইফেল আঁকছে, কেউ যুদ্ধের ছবি আঁকছে। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের ছবি আঁকছিল ছোট্ট আমরোজিয়া। পাশে লিখেছে , "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।"

ছোট্ট সোনামণিদের দুই একটা বানান ভুল ছিল। সেগুলো তখনই শিখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম | এত ছোট শিশুরা বঙ্গবন্ধুকে মনের মাঝে ধারণ করে রেখেছে। এইভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন । আনন্দে মনটা ভরে গেল। আমরোজিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম তার ছবিতে লেখা "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম "কথাগুলো কীভাবে জানল।

সে বললো বঙ্গবন্ধুর ভাষণে কথাগুলো শুনে শিখেছে।  আবেগে আপ্লুত হলাম। আশায় বুক বাঁধলাম। দেশপ্রেম শিশুদের অন্তরে মিশে আছে। আমরা শিক্ষক, অভিভাবক- সকলের দায়িত্ব এটার বিচ্ছুরণ ঘটানো।

একজন একজন করে জিজ্ঞেস করলাম স্বাধীনতা বলতে কে কী বোঝে। সুন্দর সুন্দর উত্তর দিলো তারা তাদের বয়স অনুযায়ী। এবার আমরোজিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম একই প্রশ্ন। সে চট করে একটা ছবি এঁকে ফেলল। দরজা খোলা একটা খাঁচার ভেতর থেকে একটা পাখি উড়াল দিয়ে আকাশে এক ঝাঁক পাখির কাছে মনের আনন্দে চলে যাচ্ছে- এমন একটা ছবি। বললো, এই হলো স্বাধীনতা।

ছবি দেখে মনে হলো বাস্তবে এ শিশু খাঁচায় বন্দি পাখিটাকে স্বাধীন করে ছেড়ে দিল আর পাখিটা মনের আনন্দে উড়ে গেল তার নিজের ঠিকানায়। স্বাধীনতার মর্মকথা এর চেয়ে সহজে আমি বুঝতে পারতাম না হয়তো। আমি আনন্দিত হয়ে বললাম, তোমাকে একটা পুরস্কার দেব। বলো কী চাও। 
সে বলল, আমি শিক্ষার স্বাধীনতা চাই। 
আমি আবার চমকে গেলাম।
সে বলল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীন করেছেন সবাইকে সুখে রাখার জন্য। আমাদের শিক্ষা হয়ে আছে পরাধীন। তুমি আমাদের স্বাধীন শিক্ষার ব্যবস্থা করো। 
শিশুরা স্বাধীন শিক্ষা চায় যা সময়ের দাবি। আর এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে আমাদেরকেই। 

শিশুরা অত্যন্ত পবিত্র এবং স্বাধীন। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর আগামী উপহার দিতে হলে অবশ্যই তাদের স্বপ্ন সার্থক করতে হবে আমাদের। আমাদের স্বাধীনতাকে আরো বেশি অর্থবহ করে তুলতে নতুন প্রজন্ম অর্থাৎ শিশুদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি পাশাপাশি সহশিক্ষাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাই বাঙালি সংস্কৃতির যেকোনো অনুষঙ্গকে আমি স্কুলে বাধ্যতামূলক করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ তিনি শিশুদের ব্যাপারে ভীষণ আন্তরিক। তিনি শিশুদের প্রতিভা বিকাশে নির্ভীকভাবে কাজ করে চলেছেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তিনি ভাবেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী যাদের আমরা বিশ্বের শিশু বলে থাকি তাদের আঁকা ছবি তিনি কেনেন। এবং যেকোন জাতীয় দিবসে সেই ছবি দিয়ে আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহার করা হয়। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার তার এই মানসিকতা আমাদের সকলের জন্য পাথেয়। শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদেরকেও বাড়িয়ে দিতে হবে উদারতার হাত।

আজকের যে শিশুটি বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে পারে, স্বাধীনতার ছবি আঁকতে পারে। স্বাধীনতাকে মুক্তবিহঙ্গ পাখির মতো সংজ্ঞায়িত করতে পারে আমি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে নিশ্চিত করে বলতে পারি শিশুরাই একদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। সেই শিশুদের সুন্দর চেতনাই গড়ে উঠুক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।সেই সঙ্গে তাদের পবিত্র হাসিতে ঘুচে যাক পৃথিবীর সকল পাপ তাপ। সকলকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক-ড. সালেহা কাদের। প্রিন্সিপাল ও  চেয়ারম্যান চেরী ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
আরকে//