ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

করোনা কমছে যেসব দেশে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৫ পিএম, ১ এপ্রিল ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০১:০৮ পিএম, ১ এপ্রিল ২০২০ বুধবার

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস ইতোমধ্যে আরও ২০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। 

গত তিন মাসে বিশ্বের ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে আট লাখের বেশি মানুষ। 

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ১৫১ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮৫ জন। 

করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে ১২ হাজার ৪২৮ জন। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেছে ইতালির প্রতিবেশি স্পেনে। দেশটিতে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এই ভাইরাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেছে ফ্রান্সে ৩ হাজার ৫২৩ জন। চতুর্থ সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৪১৫। এবং ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৯। ইরানে ২ হাজার ৮৯৮ জন মারা গেছে। 

মহামারি আকার ধারণ করা এই করোনা ভাইরাস ইউরোপে ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নেপাল ও ভুটান।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। সেখানে নতুন করে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। গত দুইদিন আগে দেশটিতে নতুন করে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে নতুন করে আক্রান্ত ৩১ জনের মধ্যে একজন স্থায়ী বাসিন্দা এবং বাকিরা বিদেশি নাগরিক।

দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৪৭০ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৩০৯ জন। অপরদিকে, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৭শ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।

গত কয়েকদিনে দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বিদেশি নাগরিক। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার সংখ্যা ছিল খুবই কম।

করোনা ভাইরাস মহামারিতে পুরো বিশ্ব যখন লড়াই করছে, তখন এর বিরুদ্ধে সফল হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে তাইওয়ান। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের খুব কাছাকাছি তাইওয়ানের অবস্থান হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন মাত্র একজন।

নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারেও এই ভাইরাস ছড়ালেও উল্লেখযোগ্য কোনো মারা যায়নি। এছাড়া এসব দেশে কমতে শুরু করেছে করোনার প্রাদুর্ভাব। 

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রকোপ শুরু হলেও দেশটি তা নিয়ন্ত্রণ করেছে ভালোভাবেই। তবে সেখানেও ১৫৮ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ১১৪ এবং জাপানে ৫৪ জন করোনায় মারা গেছেন।

এছাড়া আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ছয়টিতে এখনও করোনাv থাবা পড়েনি। দেশগুলো হল- সাউথ সুদান, বুরুন্ডি, সাও টোমে অ্যান্ড প্রিনসাইপ, মালাউই, লেসোথো, কমোরোস। 

এছাড়াও করোনামুক্ত রয়েছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র পালাউ, টঙ্গো, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়া।

অন্যান্য ছয় মহাদেশে করোনা তাণ্ডব চালালেও বরফ আচ্ছাদিত এন্টার্কটিকা মহাদেশ এ ভাইরাস থেকে মুক্ত রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলো বলছে- ঈশ্বরের কৃপা, বিশ্বের সঙ্গে কম বিমান ফ্লাইট সংযোগ থাকায় আমরা এখনও করোনামুক্ত রয়েছি।

সাউথ সুদান : দীর্ঘ ছয় বছরের গৃহযুদ্ধ থেকে উঠে এসেছে পূর্ব আফ্রিকার দেশটি। তীব্র দুর্ভিক্ষ, রোগবালাইয়ের মুখোমুখি হয়েছে। অবকাঠামো ব্যবস্থাও খুবই নাজুক।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, করোনা দেশটিতে হানা দিলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। ডা. অ্যানগোক গর্ডন কুওল বলেন, সাউথ সুদানে মাত্র ১২ জনের টেস্ট করা হয়েছে, কারো পজিটিভ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, অন্য দেশ থেকে সেখানে বিদেশীদের ভ্রমণ কম হওয়ায় তারা ভাইরাসমুক্ত রয়েছেন। কারণ অধিকাংশ দেশই বিদেশিদের থেকে সংক্রমিত হয়েছে।’

এর পরেও সতর্কতা হিসেবে স্কুল, বিয়ে, শেষকৃত্যানুষ্ঠান, খেলাধুলার মতো জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫০০ টেস্ট কিট ও ২৪ বেডের আইসোলেশন সেন্টার।

বুরুন্ডি : গত সপ্তাহে বুরুন্ডি সরকারের মুখপাত্র প্রসপার নাটাহোরওয়ার্মি বলেছিলেন, বুরুন্ডিকে সুরক্ষিত রাখায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে সরকার ধন্যবাদ জানাচ্ছে। দেশটিতে এখনও সংক্রমিত না হলেও কিছু প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত, ব্যাংক এবং রেস্তোরাঁয় প্রবেশের আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা অন্যতম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তার সমালোচনা করে বলেন, ‘বুরুন্ডিতে আক্রান্ত কাউকে না পাওয়ার অর্থ হলো এখানে কোন টেস্ট কিট নেই।’

সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপি : ঘন বনাঞ্চলসমৃদ্ধ ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এখনও কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি অ্যানি অ্যানসিয়া বলেন, দেশটির করোনা টেস্ট করার কোনো সক্ষমতাই নেই।

এর পরেও আমরা প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনা-বিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে আসা প্রায় ১০০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। দুই লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র চারটি।

মালাউই : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জোশুয়া মালাঙ্গো বলেন, ‘আমাদের টেস্টিং কিট রয়েছে। আমরা টেস্ট করছি। এখনও কেউ আক্রান্ত হইনি।’ দেশটির ডাক্তারদের সংস্থার প্রধান ডা. ব্রিগেট মালেওয়েজি বলেন, ‘আমরা এখনও শতভাগ প্রস্তুত নই। মালাউই আক্রান্ত হবে না এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।’

লেসোথো : কেউ আক্রান্ত না হলেও ২০ লাখ জনসংখ্যার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটিতে সোমবার থেকে লকডাউন জারি করা হয়েছে। গত সপ্তাহেও দেশটিতে কোনো টেস্ট কিট ছিল না। চীনা বিলিয়নিয়র জ্যাক মা দেশটিকে টেস্ট কিট দিয়েছেন।

কমোরোস : ভারত মহাদেশের দ্বীপরাষ্ট্রটি মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিকের মাঝে অবস্থিত। কমোরোসের রাজধানী মোরোনির ডাক্তার আবদোউ আদা বলেন, গণহারে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী চিকিৎসার কারণে কোভিড-১৯ থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে কমোরোস।

এছাড়া ওয়ার্ল্ডওমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, এখনো তুলনামূলক কম ও করোনামুক্ত দেশগুলো হচ্ছে- ইথিওপিয়া, তুরস্ক, তানজানিয়া, মিয়ানমার, কেনিয়া, উগান্ডা, সুদান, উজবেকিস্তান, এংগোলা, মোজাম্বিক, ঘানা, ইয়েমেন, ভেনেজুয়েলা, মাদাগাস্কার, কোতে দি ভিয়ের, উত্তর কোরিয়া, বুরকিনা ফ্যাসো, মালি, কাজাখস্তান, জাম্বিয়া, গুয়াতেমালা, সিরিয়া, চাদ, সোমালিয়া, জিম্বাবুয়ে, গিনি, রুয়ান্ডা, বেনিন, বুরুন্দি, বলিভিয়া, হাইতি, কিউবা, দক্ষিণ সুদান, চেক রিপাবলিক, হন্ডুরাস, তাজিকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, সিয়েরা লিওন, লাওস, লিবিয়া, নিকারাগুয়া, ক্রিজিস্তান, এল সালভাদোর, তুর্কেমেনিস্তান, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, পানামা, ইতেরিয়া, উরুগুয়ে, মঙ্গোলিয়া, জ্যামাইকা, নামিবিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা, গেবন, লেসোতো, গিনি বিসুয়া, ইকোয়াতোরিয়াল গিনি, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তিমুর লেসতে, মইরুত, সাইপ্রাস, ইওয়াতিনি, দিজবুতি, ফিজি, কমোরোস, গায়ানা, সলোমন আইল্যান্ড, মন্টিনিগ্রো, সুরিনেম, কাবো ভার্দে, ব্রুনাই, বেলিজি, বাহামা, ভানুয়াতু, বার্বাডোজ, সাওতোমি ও প্রিনসিপি, সামোয়া, সেন্ট লুসিয়া, কিরিবাতি, মাইক্রোনেশিয়া, গ্রানাডা, সেন্ট ভিনস্টে ও গ্রেনাদিনেস, টংগা, সেচেলিস, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, পলাউ, তুভালু, নাউরু, হোলি সি।

এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৩৯৭ জন। মারা গেছে ৩৫ জন। পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯১৪ জন, প্রাণহানি ঘটেছে ২৬ জনের। 

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে মারা গেছেন ৫ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন। সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীন থেকে আনা হয়েছে কিট। 

এমবি//