ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

ডিলু ভাই উত্তর দিলেন, ‘নেত্রীকে সালাম দিব না?’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫৮ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার

সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ আজ বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভেঙে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। অনেকেই শামসুর রহমান শরীফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন। 

সেই ডিলু ভাইকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেছেন বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পাঠকদের জন্য সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘নেত্রী রুপপুর যাবেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, কাছেই জনসভাও করবেন।

আমরা প্রথম হেলিকপ্টারে গেলাম। পদ্মার ধু ধু বালুচরে হেলিপ্যাড বানানো হয়েছে। নামার সময়ই বুঝলাম কি পরিমাণ বালু উড়েছে হেলিকপ্টারের পাখার কারণে। হেলিপ্যাড থেকে বসার কক্ষগুলো অনেকটা দূরে। আমরা সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে গেলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার আসার আগে।

উদ্বোধন হলো, দুপুরের খাওয়া হলো, অনেক নেতা-কর্মী-সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জনসভা হলো। এবার ফেরার পালা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় দিতে ডিলু ভাইকে সাথে করে আমরা হেলিকপ্টারের সিড়ির কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উঠে গেলেন, হেলিকপ্টারের দরজা বন্ধ হতেই আমরা ৮-১০ পা পিছিয়ে এসে ক্ষণিকের জন্য দাঁড়ালাম তারপর পাখাগুলো ফুল স্পিডে ঘুরতেই সবাই দৌঁড় লাগালাম দূরে দাঁড়ানো গাড়িগুলোর ভেতরে ঢুকতে। হেলিকপ্টারের পাখাগুলো তখন পূর্ণগতিতে, যে কোন সময় হেলিকপ্টার উড়াল দিবে।

আমি গাড়ির হাতল ধরে পেছনে তাকিয়ে দেখি ডিলু ভাই ওখানে দাঁড়িয়েই আছেন। ভয় পেয়ে গেলাম। এতবড় একটা সচল হেলিকপ্টারের পাখার সামনে ৭৫ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ কোনভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না।

চিৎকার করে ডিলু ভাইকে আমি ডাকছি ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর জন্য। হেলিকপ্টার যে কোন সময় উড়ে যাবে। ডিলু ভাই দাঁড়িয়েই আছেন।

হেলিকপ্টারের একদম মুখোমুখি দশ হাত দূরে দাঁড়ানো ডিলু ভাইয়ের ছয় ফিট লম্বা ঈশ্বরদীর গরমে ঘামে ভেজা পায়জামা ও পাঞ্জাবি উড়ছে, মুজিব কোট উড়ছে, বাবরি করা চুলগুলো, সব পেছন দিকে উড়ছে, কিন্তু ডিলু ভাইয়ের লম্বা শরীরটা খুঁটির মতো দাঁড়িয়েই আছে!

মুহূর্তের মধ্যে ডিলু ভাইয়ের মাথার হাত পাচেক ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারটা চলে গেল। আমি দূর থেকে দৃশ্যটা দেখে হা হয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে বললাম এটা কি করলেন!!?? মারা পড়তেন তো।

আত্মবিশ্বাস আর সারাদিনের কর্মসূচির সফলতার একটা তৃপ্তির মৃদু হাসি দিয়ে ডিলু ভাই উত্তর দিলেন, ‘নেত্রীকে সালাম দিবো না?’। আমি বুঝলাম কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।

ডিলু ভাইকে মহান আল্লাহতালা রাব্বুল আলামীন জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।’

প্রসঙ্গত, জননেতা আলহাজ্ব শামসুর রহমান শরীফ এমপি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অত্যাচার, জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন বর্ষিয়ান এই নেতা। পাশাপশি ১৯৯৬ হতে পর পর ৫ বার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়াবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। 

বিগত সময়ে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি শুধু ঈশ্বরদী বা আটঘরিয়া নয় পাবনা জেলার মধ্যে সকলের প্রিয় ডিলু ভাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

জাতীয় সংসদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য থাকলেও ভাষা সৈনিক কেউই ছিলেন না। তার সময়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র ভাষা সৈনিক। পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

জননেতা শরীফ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৯ শে মার্চ ঈশ্বরদীর মাধপুরে পাকবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে আশিতেও তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে একজন তরুণের মতো ছুটে বেড়িয়েছেন।

এমবি//