ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৪ ১৪৩১

সঠিক ডায়েট করছেন তো?

ইসরাত জাহান

প্রকাশিত : ০৫:২৪ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০২০ শনিবার

পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান

পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান

আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে নানা ধরণের সমস্যায় ভুগছেন মানুষ। তার ওপর মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে যে কোনো সংক্রমণকে প্রতিহত করা যায়। এমন কিছু খাবারের তালিকা এখানে দেয়া হলো। 

তাহলে দেখে নিন-
১. ভিটামিন-ই ও ভিটামিন-সি জাতীয় সবজিগুলোতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারে টমেটো, লেবু, জাম্বুরা, মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে, কালোজামের মতো খাবার রাখুন।

২. মিষ্টি আলু: গাজরের মতো মিষ্টি আলুতেও থাকে বিটা-ক্যারোটিন। মানুষের শরীরে ঢুকে এটি হয়ে যায় ভিটামিন-এ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এমনকি বুড়ো হয়ে যাওয়া ঠেকাতেও কাজ করে বিটা-ক্যারোটিন।

৩. চিকেন স্যুপ: বাসায় বানানো চিকেন স্যুপ মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকে কারনোসিন নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে মানুষের শরীরকে বাঁচাতে ভূমিকা রাখে।

৪. রসুন: রসুন থাকে সবার বাসাতেই। রান্নায় খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় রসুন। কাঁচা রসুন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে, ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে ভালো কাজ করে রসুন। শরীরের কোলেস্টরলের পরিমাণ কমাতেও কাজ করে এটি।

৫. আদা: খাবারের ঝাঁজ বাড়াতে আদার তুলনা নেই। এছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেরও ভালো উৎস আদা। আর ফলমূল বা সবজি থেকে পাওয়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে কাজও করে তাড়াতাড়ি।

৬.তরমুজ: তরমুজে থাকে গ্লুটাথায়োন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার সক্ষমতা বাড়ে।

৭. মাছ:  ওমেগা-৩ ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছ, ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন মাছ খান।

৮. দুধ ও দই:  জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন- দুধ ও দই, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুধ হজম না হলে দুধের তৈরি খাবার খান। দিনে অন্তত ১০০ গ্রাম দই অথবা ১ কাপ দুধ খাবার চেষ্টা করুন।
 
৯. ক্যারোটিন: ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধে খুব সাহায্য করে। গাজর, টোমাটো, কুমড়া বেশি করে খান। সারাদিনে ১ কাপ গাজরের জুস খেতে পারলে দারুন উপকার পাবেন। গাজরের জুস দুধের থেকে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর।

১০. মধু ও দারুচিনি:  মধু ও দারুচিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

১১. আমলকী:  আমলকীর সাথে অল্প আদা ও খেজুর বেটে নিন। ভিটামিন-সি তে ভরপুর আমলকীর এই চাটনি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।

১২. পানি:  সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন। এছাড়া হারবাল চাও খেতে পারেন, কেননা তা শরীরকে নীরোগ রাখতে সহায়তা করে। সফট ড্রিঙ্ক কম খান।

১৩. গ্রিন-টি: তুলসী ও গ্রিন-টি দেহের জন্য দারুণ উপকারী। এগুলো অর্গানিক, ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী, ক্যালোরি অনেক কম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। গ্রিন-টি খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।

১৪. টক দই: টক দইয়ে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য খনিজ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকর। টক দইয়ে ভাল কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা দেহের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।

১৫. কাঠবাদাম: কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন-ই, যা খুবই শক্তিশালী একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ঠাণ্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বজায় রাখে।

এছাড়া, শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য শরীরের পাঁচটি প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরালো করার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এই পাঁচটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো- শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, শরীরের স্টেম সেল ব্যবস্থা, আমাদের ডিএনএ ব্যবস্থা, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং রক্তনালীর কার্যক্রম ব্যবস্থা। 

এই পাঁচটি জিনিস ঠিক রাখতে পারলে সুস্থ থাকা যায়। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ, খারাপ খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে এই পাঁচটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই এই পাঁচটি ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে পারলেই রোগ-ব্যাধি থেকে শরীরকে অনেকাংশেই মুক্ত রাখা সম্ভব। তবে তার জন্য সবার আগে নজর দিতে হবে সুষম খাবারের দিকে।

লেখক- পুষ্টিবিদ।

এনএস/