ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনা নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে চীন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০২০ সোমবার

থামানো যাচ্ছে না করোনা দাপট। উৎপত্তির তিনমাসে যাতে আক্রান্ত হয়েছে পৃথিবীর সাড়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ। প্রাণ গেছে ৬৯ হাজারেরও বেশি জনের। বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এ ভাইরাস (কোভিড-১৯) গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসের ব্যবধানে চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৮২ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয় ৩ হাজারের বেশি মানুষের। 

চীন করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উহান শহরকে লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর অনেক শহরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। চীনের নানামুখী পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত দেশটিতে স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এখন চীনা সরকার বলছে, নতুন করে যেসব করোনা আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে—তারা প্রায় সবাই বিদেশ থেকে এসেছেন। বিদেশিদের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ যেন না বাড়ে সেজন্য বিদেশিদের আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন।

করোনা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আসায় অবরুদ্ধ জীবন, কোয়ারেন্টাইন ও ভ্রমণ বিধি-নিষেধ আস্তে আস্তে উঠে যাওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে দেশটি। চীনের শ্রমিকরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। চিকিত্সকরা এখন অনেকটা শঙ্কামুক্ত। স্কুল, কারখানা, পাবলিক প্লেস ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো আবারও খুলে দিতে শুরু করেছে চীন সরকার। আগামী সপ্তাহ থেকে উহানের বাসিন্দাদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে শহরটির কর্তৃপক্ষ লোকজনকে বেশি বেশি বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে।

চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি থেকে চীনের কারখানাগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। ফলে ওই মাসে উত্পাদন সূচক রেকর্ড সর্বনিম্ন নেমে আসে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশে। তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসায় এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আশাবাদী চীনা সরকার।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ সপ্তাহ পর উহানের বাসিন্দারা ঘরবন্দি জীবন থেকে দিনের আলোয় আসতে শুরু করেছেন। ট্রেনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। দোকানপাট শপিং মল খুলছে। সরকার পরিচালিত কোম্পানি ও উত্পাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। উহানের বিমানবন্দর আগামী সপ্তাহে খুলবে। ২৩ জানুয়ারি লকডাউন শুরুর পর এই শহরের বাসিন্দাদের প্রথমবারের মতো বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।

চীনা নেতারা দাবি করছেন, করোনা বিরুদ্ধে তারা অনেকাংশে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এই যুদ্ধে জয়ী হওয়াটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন ব্যাপার। কারণ, এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ প্রতিহত করা এবং অর্থনীতির চাকা পুনরায় সচল করার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। এটা স্পষ্ট যে, কর্মকর্তারা দুটি বিষয়ই একসঙ্গে অর্জন করতে পারবে না। শিকাগোর ‘চায়না-ফোকাসড’ মার্কো পলো থিংক ট্যাঙ্কের জ্যেষ্ঠ গবেষক নিল থমাস ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, দ্বিতীয় ধাপে করোনার বিস্তার ঠেকাতে চীনকে অবশ্যই কিছুটা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অন্যদিকে চীন যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চাইছে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ করোনার প্রকোপে বিধ্বস্ত। বিশ্ব অর্থনীতি এক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এ কারণে চীনা কারাখানাগুলোর কার্যক্রমও সীমিত হবে। চীনা কর্তৃপক্ষ সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারকারীদের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এর ফলে নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র মি ফেং।

গত সোমবার সিপিসির সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনগুলোকে এক হাতে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অন্য হাতে কাজ ও উত্পাদন প্রক্রিয়া ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর জন্য দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণকে ঠেকাতে হবে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইস্টারের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা স্বাভাবিক হবে। কিন্তু দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ অবস্থান থেকে তিনি পিছু হটেছেন। এ কারণে চীনের অর্থনীতি আবারও সচল করার প্রচেষ্টা এতোটা মসৃণ হবে না। কারণ, উহানে এখনো প্রায় আড়াই হাজার মানুষ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছে।

ফ্রান্সের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নাটিক্সিস এর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রধান এলিসিয়া গ্রাসিয়া হেরেরোর মতে, অর্থনৈতিক স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা নিয়ে এখনই চীনের উদ্বিগ্ন হওয়ার এখনই কিছু নেই। কারণ, অভ্যন্তরীণভাবে জিনিসের চাহিদা কম, বিদেশে পণ্যের চাহিদা আরো কম। এখন উত্পাদনে গেলে পণ্যের দাম পড়ে যাবে। তাই চীনা নেতারা বলতে পারেন যে, তারা পরিচ্ছন্নতার কারণে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করছেন।

(সংকলিত)

এমএস/