ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিস্তব্ধ ক্যাম্পাসে নয়নাভিরাম সূর্যমুখী 

আব্দুর রহিম

প্রকাশিত : ০৯:৪৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২০ শুক্রবার

ফুল শুধু একটি শব্দ নয়! এটি একটি নিবেদন!একটি অভিবাদন! এক ফশলা ভালবাসা! কেউ তার প্রেম নিবেদনে বা কাউকে বরণ করতে ফুলই মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। দল,মত,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ফুল সবারই পছন্দ। ফুলের সৌন্দর্য তৈরি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় তবুও এই দৃশ্যগুলো অকপটে স্মৃতিতে রয়ে যায়। সৌন্দর্যের দিক থেকে ফুলের মধ্যে সূর্যমুখী অন্যতম। আর এই সূর্যমুখীর অপরুপ সৌন্দর্যে সেজে উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পূর্ব পাশে ও পার্ক ক্যাফেটেরিয়ার সামনের খালি জায়গায় ফুটেছে অসংখ্য সূর্যমুখী। বছরের মার্চ-এপ্রিলের সময়টায় এই দৃশ্য দেখা যায়। নোবিপ্রবির উপাচার্যের  নির্দেশনায় এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর এই সূর্যমুখী চাষ করা হয়। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী এই সূর্যমুখী একটি উৎকৃষ্ট একবর্ষজীবী তেল জাতীয়  ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ করা হয়। হেলিয়ানথাস বৈজ্ঞানিক নামের এই ফুলটি ১৯৭৫ সাল থেকে তেল জাতীয়  ফসল হিসেবে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধানত কিরণী (ডিএস-১),  বারি সুর্যমুখী-২, হাইসান-৩৩ ইত্যাদি জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়। এছাড়া সূর্যমুখী একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে অপরদিকে জ্বালানীর চাহিদাও পূরণ করে। 

প্রতিদিন ক্লাসের শেষে কিংবা অবসরে শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত হয়ে উঠে হলুদ আর সবুজের সমারোহ সূর্যমুখীর এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য্যের মুগ্ধতা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মনেই নাড়া দেয় না,শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ক্যাম্পাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের মনকেও ছুঁয়ে যায়। এমনকি এই সৌন্দর্য মন ভালো করে দেয় সাহিত্যিক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের। সূর্যমুখীর এই অপরুপ সৌন্দর্য দেখে কেউ কবিতা লিখে,কেউ গান গায় ,কেউ ছবি আঁকে, আবার কেউ কেউ ছবি তোলার মাধ্যমে তাদের অনুভুতির প্রকাশ ঘটায়। এসময়ের বিকেল গুলো হয়ে উঠে আড্ডা ও গানে পরিপূর্ণ। সব যেন এই সূর্যমুখী ফুলগুলোকে ঘিরে। ফুলগুলো যেন হেসে উঠে এই প্রাণচাঞ্চল্য দেখে। তারাও  যেন ফিরে পায় নতুন জীবনীশক্তি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকে এই ফুলগুলো কিন্তু মহামারী করোনায় জনশূন্য ক্যাম্পাসের এইবারের দৃশ্য সম্পূর্ণ আলাদা। ফুল গুলো ঠিকই আছে, তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করার কেউ নেই।

বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভেন্দু সাহা বলেন, নিস্তব্ধ ক্যাম্পাস বিষয়টি আমার ভাবনার আসে না কখনো। কিন্তু করোনার ছোবলে প্রিয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কোলাহল না থাকলেও ক্যাম্পাস নিষ্প্রাণ নয়-প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতায় মেতেছে নোবিপ্রবি। তাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে-সূর্যমুখী ফুল। যে ফুলের অপরূপ শোভা অন্তরাত্মায় জাগায় নতুন স্পন্দন।তাইতো কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন- রাত্রি শেষে কখন আবার/ তোমার বাগানজুড়ে ফোটে সূর্যমুখী। করোনার এ আঁধার রাত্রি কেটে যাক,ক্যাম্পাসের সূর্যমুখীর মতোই ফুটে উঠুক আমাদের শিক্ষার্থীরা,মেতে উঠুক ক্লাসরুমে,আড্ডায়, গল্পে আর গানে।

ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাছরিন আক্তার বলেন, ওরে নিশী গন্ধা, এই মধু মন্দা,সুরভী কোথায় পেলি বল? ওরে সূর্যমুখী কেন রইল ঝুঁকি, কোন সে ব্যথায় আখি ছলছল! ছোট বেলা থেকে ফুল আমার বেশ পছন্দ। ফুল দেখলে মুহুর্তের মধ্যে মনটা আনন্দে ভরে উঠে। ক্যাম্পাস বন্ধ হলে ক্লাস,ল্যাব, বন্ধু বান্ধব সবাইকে মিস করি। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু এবার সবচেয়ে বেশি মিস করি সূর্যমুখীর সূর্যের দিকে উঁকি মারা দৃশ্যটি। এবার অন্যান্য বছরের মতো সূর্যমুখীর সাথে ছবি তোলা কিংবা গল্প করা আর হয়ে উঠে নাই। হে সূর্যমুখী তোমার অপরুপ সৌন্দর্যকে খুব বেশি মিস করি। 

বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নুবায়রা হাফিজ বলেন, আমাদের ১০১ একরের ক্যাম্পাস সৌন্দর্যে ভরপুর। প্রতি বছর মার্চ মাসে এই সৌন্দর্য নতুন রূপে ফিরে আসে সূর্যমুখী ফুলের আগমনে। সারি সারি ফুলের সমারোহ  দেখলে মনে হয় সূর্যের সব সৌন্দর্য মাটিতে নেমে এসেছে।  সূর্যমুখী বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় সকলে। এত এত সূর্যমুখী ফুল দেখলে অবাক হই মাঝে মাঝে। সবার আকর্ষণের কেন্দ্র যেন এই সূর্যমুখী। আজ এই সূর্যমুখী আছে কিন্তু আমরা নেই। খুব মনে পরে এই ক্যাম্পাসের সূর্যমুখীর মুগ্ধতাকে।

আরকে//