ঢাকা, বুধবার   ২৫ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ১১ ১৪৩২

নাসিরনগরে ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা স্থগিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫৯ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৪:০৭ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০ সোমবার

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চার'শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামে প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। শুঁটকি নিয়ে মেলায় পসরা সাজাতেন স্থানীয়রাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। ব্যতিক্রমী এ মেলায় হাজারও লোকের সমাগম হতো, বেঁচাকেনা চলত নগদ অর্থে ও ‘বিনিময় প্রথায়’।
 
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও ধাক্কা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে নাসিরনগর উপজেলার এক প্রবাস ফেরত যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাই ভয়ানক করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে এ বছর কুলিকুন্ডার শুঁটকি মেলার আয়োজন স্থগিত করতে বলেছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অন্যান্য গ্রামের বান্নি (মেলা) ও পূণ্যস্নান আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।
 
নাসিরনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর একটি কুলিকুন্ডার শুঁটকি মেলা। ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা বন্ধ হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এলাকার শুঁটকি ব্যবসার। ক্ষতি পোষাতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রণোদনার দাবী স্থানীয় জেলেদের। 

স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষার পরই তারা চলে যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, দিরাই ও চট্টগ্রাম। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন বিলে মাছ ধরে। ধরা পড়া মাছের ৪ ভাগের তিন ভাগ দিয়ে দেয় বিলের ইজারাধারদের। বাকী একভাগ মাছ দিয়ে তারা শুঁটকি তৈরি করে, যা বৈশাখ মাসের প্রথমদিন কুলিকুন্ডার শুঁটকি মেলায় বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করে। যে জেলেদের জমি নাই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস এ মাছ ধরা ও শুটকি তৈরি। প্রতিবছর একেকজন শুঁটকি ব্যবসায়ী এ মেলায় লক্ষাধিক টাকার অধিক শুঁটকি বিক্রি করে। 

পুলিশের ভাষ্য, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় নাগরিকদের নিরাপত্তার দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লকডাউনসহ জনসমাগম এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিরজমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা ও  পূণ্যস্নানসহ সকল অনুষ্ঠান বাতিল করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারে ঢোল পিঠিয়ে মেলা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হচ্ছে। 

শুঁটকি মেলা স্থগিতের খবরে মন খারাপ উপজেলা দ্বিবর সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, বছরে একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করে উপজেরার প্রায় শত পরিবার। শুঁটকি বিক্রির আয়ের টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। জেলেরা মূলত নিন্ম আয়ের মানুষ। মেলায় শুঁটকি বিক্রি করা বন্ধ হয়ে যাওয়া মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এই নিন্ম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা। তাই এসব পরিবারকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজে আনা দরকার।

জানা গেছে, নাসিরনগরে বৈশাখি মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায় শতাধিক পরিবার শুঁটকি ব্যবসায় জড়িত। আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এ উপজেরার প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এই শুঁটকি মেলাকে কেন্দ্র করে অন্তত পাঁচ একর জায়গা জুড়ে বসে লোকজ মেলা। জেলেদের নিজের হাতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসেন। এসব পসরায় থাকে বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুঁটি ও টেংরাসহ দেশি মাছের বাহারি শুঁটকি। তবে এ বছর ভোজন রসিকরা মেলায় শুঁটকি কিনতে পারবেনা। 

এছাড়াও মেলায় স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি, বাটি, পুতুল ও প্রদীপসহ অন্যান্য সামগ্রী স্থান পায়। এদিকে মেলায় এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু, ডাল, সরিষা, পেঁয়াজ, কাঁচা আম, গম, রসুনসহ নানা জাতের পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি বেচাকেনা করেন। তবে সেটা সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়। এর পর চলে অর্থের বিনিময়ে বেচাকেনা।

পুলিশের বক্তব্য নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঘটতে পারে এমন সব জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বছর উপজেলার সকল মেলা না বসতে আমরা জনসাধারণকে নিরুৎসাহীত করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী জানান, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ থাকায় এ বছর বৈশাখি উৎসব পালন করা হচ্ছে না। তাই পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরের সকল উৎসব স্থগিত করা হয়েছে।
কেআই/