ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেই জানাজাস্থলে তদন্ত কমিটির পরিদর্শন

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:০২ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১১:১৯ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২০ রবিবার

লকডাউন ভেঙে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজার নামাজে লাখো মানুষের সমাগম হওয়ার ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রোববার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বেড়তলা এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে ঘুরে স্থানীয়  কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে তদন্ত কমিটির প্রধান ইকবাল হোসেন সাংবাদিকরে জানান, আগামী যথাসময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

এ সময় তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) পঙ্কজ কুমার দে উপস্থিত ছিলেন।

লকডাউন ঘোষণা উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জানাজায় অংশ নেন। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জকে করোনাভাইরাস সংক্রমনের এলাকা হিসেবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। করোনা আক্রান্তের ৪৪ ভাগই ঢাকা কেন্দ্রীক। এছাড়াও নরসিংদী, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলাও আছে অধিক ঝুঁকিতে। সারা দেশের ন্যায় এসব এলাকায় চলছে লকডাউন। তার পরও এসব এলাকা থেকে কিভাবে হাজার হাজার লোক শনিবার সকাল আটটা থেকে সরাইলের বেড়তলা মাদরাসার মাঠে জড়ো হতে থাকে! এ প্রশ্ন এখন সারা দেশবাসীর। 

এদিকে পুলিশ লোকসমাগম ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। ফলে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এএসপি থেকে শুরু করে ওসি ও তদন্ত ওসিকেও। সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা! এ ব্যর্থতা শুধু পুলিশ প্রশাসনের একার? স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে লোকাল প্রশাসন কি এ দায় এড়াতে পারে? প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর নেই একটিরও।

সরাইল উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এমপিরা নেই দীর্ঘদিন হলো। এক এলাকায় দুইজন এমপি আছেন সংসদে। একজন নির্বাচিত অন্যজন সংরক্ষিত নারী সদস্য। তাঁরা কেউ থাকেননা নিজ নির্বাচনী এলাকায়। এক দিকে মারামারি-খুনখারাপি। অন্যদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউন অমান্য করার হিড়িক। কে শুনে কার কথা। এ যেন প্রতিদিনের চিত্র এ এলাকার মানুষের। 

জানাজার নামাজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে করোনভাইরাসের সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন উপজেলার ৮ গ্রামের প্রায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষেকে হোমকোয়ান্টোইনে থাকার জন্য কঠোর নিদের্শনা দিয়েছেন প্রশাসন। এসব গ্রামগুলোকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে এ লকডাউন কার্যকর হবে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেক পোষ্ট। সকাল থেকেই জেলাপ্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। গ্রামগুলো হলো আশুগঞ্জ উপজেলার খরিয়ালা, মৈশাল, বৈইকইর, সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের শান্তিনগর, সিতাহরণ, বড়ই বাড়ির বেড়তলা, সদর উপজেলার মালিহাতা গ্রাম। এই উপজেলার কেউ ১৪ দিনের মধ্যে ঘের থেকে বের হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল পৌনে ৬টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মার্কাস পাড়ায় নিজ বাসভবনে মৃত্যু হয় খলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর। দেশে ওয়াজ মাহফিলের অন্যতম জনপ্রিয় বক্তা ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। শনিবার ১৮ এপ্রিল সকাল ১০টায় সরাইল উপজেলার বেড়তলা এলাকায় মাওলানা জুবায়েরের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। মানুষের ভিড় মাদ্রাসার সীমানা ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গিয়ে ঠেকে। 

আনসারীর জানাজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনা চট্টগ্রাম ডিআইজি কার্যালয় এডিশনাল ডিআইজি ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার (অপরাধ) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন (প্রশাসন)। কমিটিকে আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। 

আরকে//

 

আরকে//