ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩২

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি কতটুকু?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৮ এএম, ২০ এপ্রিল ২০২০ সোমবার

একটি শিশু জন্ম থেকে তার জীবনের শেষ দিন অবধি বেড়ে ওঠে এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাঝে। জীবনের বাঁকে বাঁকে খেলতে হয় ভাঙ্গা - গড়ার এক বিরামহীন খেলা। একদিন ধর্মীয় নিয়ম মেনেই শেষ হয় সবকিছুর। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাস নিয়ে জনমনে নানা ভ্রান্ত সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে ফলশ্রুতিতে অনেক জায়গায় লাশ দাফনে আসছে বাধা। অনেকে জীবনের শেষ এই প্রাপ্তিটুকু না পেয়েই চলে যাচ্ছেন অদৃশ্য এক জগতে। সম্ভবত জাগতিক সব মায়াকে বিভ্রম প্রমাণ করতেই করোনার আবর্তন। কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে নিয়ম মেনে লাশ দাফনে নেই সংক্রমণের ঝুঁকি, সম্ভাবনা নেই এলাকার কোন সুস্থ্য ব্যক্তির আক্রান্ত হবার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনে সম্ভাব্য কোন ঝুঁকির কথাও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ও উল্লেখ নেই।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনের ঝুঁকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. সওকত আরা বিথী জানান- সাধারণত কবর দেয়ার পর লাশটি থেকে ভাইরাস সংক্রমণের কোন সুযোগ থাকে না। কবরের আশেপাশের মাটি বা পাশে কোনো জলাশয় থাকলেও এই ভাইরাস সংক্রমণ হবে না৷

আইইডিসিআর এর প্রশিক্ষিত লোকজনই লাশের গোসল করিয়ে দেবে। এরপর লাশ কাফনের কাপড়ে জড়িয়ে বিশেষভাবে প্যাকেট করবে, যেন ভেতরের কোনো ভাইরাস বাইরে সংক্রমিত না হয়। মৃতদেহ বহনকারী সেই ব্যাগটি কাউকে খুলতে দেয়া হবে না।

এছাড়া লাশ দাফন সংক্রান্ত বিষয়ে আইইডিসিআর এর সাবেক এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন- লাশ দাফন করা জরুরি হবার অন্যতম কারণ হলো মানসিকভাবে সমাজের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা। লাশ দাফন না হলে অনেকের মধ্যে ভয় আর আতঙ্কের মাত্রা বেড়ে দাড়াবে কয়েকগুণে, শুরু হবে নতুন সমস্যার। 

করোনায় আক্রান্ত লাশের দাফন থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের ডায়াবেটিস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এজাজ বারী চৌধুরী জানান- দাফন কাজ কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে সেটা নিয়ে মানুষ সচেতন হতে পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে কবর দিতে বাধা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হলো আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি-কাশির সময় বের হওয়া ক্ষুদ্র ড্রপলেট। এই ড্রপলেট সুস্থ মানুষের শরীরে শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটায় । কিন্তু নির্দেশনা মেনে মৃত্যু লাশ দাফনে সংক্রমণের সুযোগ নেই। বিশেষ এই প্রক্রিয়ায় লাশটি একটি সিল করা বাক্স বা কফিনে করে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। লাশটি পরিবহন করতে হবে বিশেষ সতর্কতার সাথে। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের প্রত্যেককে প্রতিরোধমূলক পোশাক পিপিই পরিধান করতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক , মেডিসিন, রক্তরোগ ও ব্লাড ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহাম্মাদ ওয়াসিম বলেন- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে, তার লাশের সৎকার করা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল মেনেই কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা এই ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলার সিভিল সার্জন অথবা সরাসরি আইইডিসিআর-এ অবহিত করতে হবে। সংস্থাটি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় লাশের গোসল থেকে শুরু করে সেটা প্যাকেট করা এবং পরিবহনের ব্যবস্থাও করে থাকে।

এছাড়া করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিং অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান- করোনা আক্রান্ত রোগী যারা মারা গেছে, তাদের কাছ থেকে যেন সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

অধ্যাপক সেব্রিনা বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর সময় সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। যেহেতু তাঁর কাছাকাছি একজন যান। যাঁরা এ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, তাঁদের পিপিই দিয়ে আমরা সম্পন্ন করছি সুতরাং সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। তাছাড়া আইইডিসিআর এর কর্মকর্তারা এরপরও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে কবরের চারিদিকে ভালভাবে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেন।

এমবি//