ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

ঈশ্বর আমাদের সঙ্গেই আছেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৯ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:৫২ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার

পোপ ফ্রান্সিস

পোপ ফ্রান্সিস

আত্মবিশ্বাস ও আশা সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। যাদের মধ্যে আশা এবং আত্মবিশ্বাস নেই তারা কখনো জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। যেকোন অর্জনের পেছনেই দরকার দৃঢ় আশা, মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস। কাজেই সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। 

বর্তমানে সারাবিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৪ লাখ ৮১ হাজার ২৮৭ জন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে। আর এ মহামারীতে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৪৩৬ জনের। এছাড়া বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে দুই হাজার ৯৪৮ জন।

এক্ষেত্রে মুসলিম, হিন্দু, খ্রীষ্টান, ইহুদি সব ধর্মের মানুষরা নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন। যেন পৃথিবীতে আবারো শান্তি ফিরে আসে। দুর্দিন, মহামারি, আশাহত মানুষের এই সময়ে কী করণীয় এ বিষয়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের বই ‘অন হোপ’ থেকে একটি লেখা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজে প্রকাশিত হয়েছে। নিচে এর কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

আত্মবিশ্বাস আমাদের হতাশ করে। কিন্তু আশা কখনও নিরাশ করে না। সব অবস্থায় আমাদের আশা রাখতে হবে, নিরাশ হলে চলবে না। মাঝে মাঝে আমরা এমন কিছু সময় ও পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। তখন সবকিছুই অন্ধকার মনে হয়। আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। শয়তানের কুচক্র, চারপাশের সীমাহীন সহিংসতা, রোগ-শোক আর হাজারও মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আমাদের মনকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। আমরা দিশেহারা হই, ভেঙে পড়ি। 

কারণ আমরা দুর্বল অসহায় ও ক্ষমতাহীন। আমাদের মনে হয়, এই অন্ধকার কখনও শেষ হবে না। তখন শুধু আশাবাদী হওয়া ছাড়া আমাদের আর উপায়ান্তর থাকে না। আমরা অবশ্যই আশাবাদী হব। শেষ পর্যন্ত আশাকে আমাদের ছেড়ে যেতে দেব না। কারণ ঈশ্বর আমাদের সঙ্গেই আছেন। অপার ভালোবাসা নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই হেঁটে চলেছেন।

আমরা সবাই একটা বাক্য উচ্চস্বরে বলতে পারি, ‘আমি আশাবাদী কারণ ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন।’ 

প্রত্যেকেই এই কথাটা বলতে পারেন, ‘আমি আশাবাদী, আমার আশা আছে। কারণ ঈশ্বর আমার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছেন। তিনি হাঁটছেন আমাদের হাত ধরে। ঈশ্বর কখনও আমাদের একা ফেলে চলে যান না।’

মহান ঈশ্বরই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে আশাবাদী হতে হয়। তিনি এর গুরুত্বও আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমরা যদি আমাদের পবিত্র গ্রন্থে কান পাতি, শুনি আর ঈশ্বর প্রেরিত মহাপুরুষ হজরত ঈসার (আ) শিক্ষাগুলো স্মরণ করি তাহলে আশার বাণীই শুনতে পাই। 

পবিত্র গ্রন্থে ঈসা (আ) তার সম্প্রদায়ের মানুষকে বিপদের দিনে শান্তির বার্তা দিয়ে বলছেন, ‘ও আমার দেশবাসী, ঈশ্বর তোমাদেরকে শান্ত থাকতে বলেছেন।’ 

অসহায় মানুষের জন্য শান্তির শুরু হয় ঈশ্বরের পথে চলার মধ্য দিয়ে। এটা নতুন একটা পথ, যা সোজা ও সহজেই অতিক্রম করা যায়। সুতরাং কখনই আশা হারাইয়ো না। যা কিছুই ঘটুক, অন্তরে সবসময় বিশ্বাস রাখ। হযরত ঈসা তার সম্প্রদায়ের মানুষকে এভাবেই আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, যখন তারা ব্যাবিলনে নির্বাসনে ছিল এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিল।

তারপর একদিন তারা তাদের ঈশ্বরের পক্ষ থেকে বার্তা পেল, এবার তারা তাদের স্বদেশভূমিতে ফিরে যেতে পারে। যে পথ দিয়ে তারা হেঁটে যাবে তাদের জন্য সেই পথকে করা হয়েছে প্রশস্ত ও মসৃণ। সে পথে কোনো উঁচু-নিচু খাদ নেই, নেই কোনো পর্বত। সেটা পথ মরুভূমির মধ্য দিয়ে। এটা ছিল ঈশ্বরের পক্ষ থেকে সকল বাধা ও বিপত্তি থেকে মুক্তির পথ। মরুভূমি এমন স্থান যেখানে তাদের বসবাস করা খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু একটা সময় তারা সহজেই তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসে। শত বিপদে আশা না হারানোর ফলেই এক সময় তারা সফল হয় এবং তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আমরা যখন বিপদে পড়ি, আমাদের মুখ থেকে হাসি চলে যায়। কিন্তু আশাই আমাদেরকে হাসতে শেখায় এবং নতুন পথ খুঁজে বের করতে শক্তি জোগায়, যা আমাদের ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায়।

মানুষের জীবনও কখনও অনেকটা মরুভূমির মতো হয়ে ওঠে। বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আমরা যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখি সবকিছু সুন্দর ও সহজ হয়ে যায়। সংকীর্ণ রাস্তাও মহাসড়ক হয়ে যায়। তাই আশাহারা হইও না। সবসময় বিশ্বাস রাখো, যা কিছুই ঘটুক। আশা একটা শিশুর মতো। আমরা যখন এর সামনে দাঁড়াই শত সমস্যা ও শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও আমাদের হৃদয় হেসে ওঠে। সেই হাসি চোখে-মুখে ছড়িয়ে যায়। কারণ তখন আমরা আমাদের সামনে আশা দেখতে পাই।

এমবি//