ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

ওরা পথে ঘাটে থাকে, ওদেরও ক্ষুধা আছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৩৪ পিএম, ৩ মে ২০২০ রবিবার

শার্শার অভুক্ত ভিক্ষুক, পাগল, প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরেদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন মিজান। -ছবি একুশে টিভি।

শার্শার অভুক্ত ভিক্ষুক, পাগল, প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরেদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন মিজান। -ছবি একুশে টিভি।

করোনা দুর্যোগের এ সময় অসহায় রাস্তার পাশে, ছাদের নীচে যারা শুয়ে থাকে, যাদের খবর কেউ নেয়না। সেই ভবঘুরে পাগল, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী মানুষ ও বেওয়ারিশ অভূক্ত কুকুরের মুখে খাবার তুলে দিতে যশোরের শার্শার এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে চলেছেন। গত একমাস ধরে যশোরের শার্শা থেকে ঝিকরগাছা ও চৌগাছা এলাকায় ঘুরে ঘুরে এসব অসহায়দের খুঁজে বের করে মুখে তুলে দিচ্ছেন আহার।

বলছিলাম দেশসেরা উদ্ভাবক যশোরের মিজানুর রহমান মিজানের কথা। শার্শার বেওয়ারিশ অভুক্ত কুকুর, ভিক্ষুক, পাগল, প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরে মানুষের মাঝে একবেলা খাবার তুলে দিতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। 

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের থাবায় সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও শ্রমজীবি মানুষ। তবে তাদের সাহায্যার্থে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাশে আছেন সরকার, নামী-দামী মানুষ ও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বেওয়ারিশ অভুক্ত কুকুর, ভিক্ষুক, পাগল ও ভবঘুরে মানুষগুলোর কথা ভাবছেন কয়জন? এমনই প্রশ্ন তার।

করোনা আতঙ্কে যশোরের শার্শা উপজেলার সব জায়গাতেই থেমে গেছে মানুষের কোলাহল। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বেকারি। এতে করে খাদ্য সংকটে  পড়েছে পাগল, প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে মানুষ ও বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। কেননা হোটেল-বেকারির উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে এ প্রাণীটি। আবার রাস্তায় যখন মানুষের চলাচল থাকে, বহু মানুষের ভিড়ে কেউ না কেউ এই অসহায় পাগলগুলোর মুখে খাবার তুলে দেন। তবে আজ সবই বন্ধ, তাই মানবিক কারণে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের উদ্ভাবিত স্কুটি চালিয়ে এসব ভবঘুরে, পাগল ও অভুক্ত কুকুরদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান মিজান।

শার্শা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, উদ্ভাবক মিজান বেওয়ারিশ অভূক্ত কুকুর, পাগল ও ভবঘুরেদের খাবার দিচ্ছেন। করোনা দুর্যোগ দীর্ঘ হওয়ায় যাতে তাদের খাবার দেওয়া বন্ধ না হয়, সেজন্যই আমরা তাকে সহযোগিতাও করছি। রোববার (৩ মে) পর্যন্ত টানা ৩২ দিন ধরে বেনাপোল বাজার, শার্শা উপজেলা সদর, নাভারন ও বাগআচড়া বাজারের ৫০-৬০টি কুকুরকে বিস্কুট, পাউরুটি, খিচুড়িসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি। এসব বাজারের ভিক্ষুক, পাগল ও ভবঘুরে মানুষের জন্য সাদা ভাত কিংবা খিচুড়ি রান্না করার পর প্যাকেট করে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন মিজান। 

আর দশটা ছেলের মতোই সীমান্তের অবহেলিত জনপদের ছেলে মিজানুর রহমান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগতা যোগ্যতা না থাকলেও সে নিজ মেধা গুণে এখন দেশের সেরা উদ্ভাবক। ইতোমধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাত থেকে তার মেধা গুণের জন্য এবং তার উদ্ভাবনি আবিস্কারের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

মিজানুর রহমান মিজান বলেন, লকডাউনের শুরুতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিলি, মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও সাবান দিতে গিয়ে দেখেছি- হাট বাজারে পাগল, প্রতিবন্ধী ও কুকুরগুলো অনাহারে কাঁদছে, হন্যে হয়ে খাবার খুঁজছে। তখন অনুভব করলাম এদেরও ক্ষুধা আছে, খাবারের জন্য ওরা হাহাকার করছে। করোনায় যখন রাস্তায় কোন মানুষই নেই এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরী। তাই সেদিন রাতেই এদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে বেরিয়ে পড়ি। আজ ৩০ দিন যাবত কুকুরগুলোকে একবেলা করে খাবার দিচ্ছি।  মাঝে মধ্যে শার্শা থেকে ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলাতেও যাচ্ছি। 

মিজান আরও বলেন, কুকুরগুলো এখন আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। রাস্তায় যখনই বের হই তারা আমার পিছু নেয়। আমার দোকানের সামনেও ১০-১৫টি কুকুর সার্বক্ষণিক থাকে। ওদের ভালোবাসা পেয়ে আমি মুগ্ধ। আমার এই কাজে সহযোগিতা করেছেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও ফেসবুক বন্ধুরা। 

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, দেশসেরা উদ্ভাবক মিজান উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে যেসব ভবঘুরে পাগল, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী ও কুকুর থাকে তাদের মাঝে প্রতিদিন খাবার সরবরাহ করছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা করছি। 

এনএস/