ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বর্ষায় ফ্যাশন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০৮ পিএম, ৪ মে ২০২০ সোমবার

বর্ষার ফ্যাশন

বর্ষার ফ্যাশন

বৃষ্টির দিনে গ্রামের রাস্তার সদ্য বৃষ্টিস্নাত মাটির সোঁদা গন্ধ, প্রকৃতির লীলায় ধুয়ে পরিস্কার হয়ে যায় প্রকৃতি, গাছের পাতাগুলোর দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। মনটা ভরে যায়। আকাশ জুড়ে দিনভর নানান ভঙ্গিমায় মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতির বিচিত্র রঙের খেলা দেখার আশায় অনেকেই সারা বছর মুখিয়ে থাকেন টানা বর্ষণ কখন শুরু হবে। বৃষ্টির অবসরে এক ফালি মিষ্টি রোদ জানালার ফাকঁ গলে এসে মনটাকে উচ্ছ্বসিত করে দিবে। 

কিন্তু এই ইটপাথরের শহরে বর্ষার সঙ্গটা যেন অন্য রকম মনে হয়। নগরে বর্ষায় প্রকৃতি খুব একটা উপভোগ করা যায় না। অনেকেই ঝুম বৃষ্টিতে বারান্দায় বসে গরম চা-কফি খেতে পছন্দ করেন। কেউবা জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টির স্পর্শ নেন। কেউবা অপেক্ষায় থাকেন সেই ছোট্টবেলার মতো বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়াতে না পারলেও দেহটা ভেজাবেন কবে। 

আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন, বাতাসটাও স্যাঁতসেতে, রাস্তাটা কর্দমাক্ত হলেও কি থেমে থাকবে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, জীবনের প্রয়োজনেই যে যার কর্মস্থলে যাবো। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় যেতে হবে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও। এইসব দৈনিক কাজকর্মের জন্য হলেও পোশাকের মান ও সৌন্দর্য নিয়ে আমরা ভাবি। আবহাওয়ারর ভয়ে ভীত না হয়ে আনুষাঙ্গিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে এই একঘেয়ে দিনগুলোতে ও আমরা সতেজ থাকতে পারি। তার জন্য অবশ্যই পোশাক সচেতন হতে হবে। প্রস্ফুটিত করতে পারবো নিজের ফ্যাশন সচেতনার ভাবমূর্তি। 
 
বিরুপ আবহাওয়া মনে বিরুপ প্রভাব ফেলতেই পারে তাই পোশাক এমন হওয়া উচিত যা দেহ মনকে চাঙ্গা রাখতে সহায়ক হয়। আর তাই উজ্জল রঙ্গের পোশাক রাখুন বর্ষার দিনে তালিকায় যা আপনার মনকে করবে উচ্ছ্বসিত। বর্ষায় যা-ই ব্যবহার করেন না কেন সব হতে হবে আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই। এই সময়ে আগাম জানান না দিয়েই বৃষ্টি শুরু হবে। প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে ফ্যাশন হাউজগুলোতের দেখা দেয় পরিবর্তনের হাওয়া। বর্ষার রং, ডিজাইন, এমনকি কাপড়ও থাকে বর্ষার সঙ্গে মানানসই। কাপড়ে ফুটে ওঠে মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি এবং বর্ষার ফুল, বর্ষার লতাপাতা। অনেক ফ্যাশন হাউজ আকাশি রং, সবুজ রং, ছাই রং ও নীল রং কে-ই বেশি ব্যবহার করে থাকে। 

গ্রামের বর্ষা মনে রিমঝিম বৃষ্টি আর শহুরে বর্ষা মানে কাদামাটির মাখামাখি, যে যেভাবেই দেখি না কেন। কোন সমস্যায়ই আমাদের ফ্যশনে বাধা নয়। সব পরিস্থিতিতেই ফ্যাশন করা যায়। আমাদের দেশ ষড় ঋতু দেশ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই কাপড়ের ধরণ ও রং-এ পরিবর্তন এসে যায়। অনেকে তো বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টির দিনের পোশাক নিয়ে ভাবতে বসে যান। এই সময়ে কখনও আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন আবার কখনও বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। বাইরে তো যেতেই হবে, একটু চিন্তা ভাবনা করলেই বাড়তি ঝামেলা এড়িয়ে চলা সম্ভব। একটু সচেতন হলেই বৃষ্টিকে উপভোগ করা যায়। 

বৃষ্টির দিনের আকাশের অবস্থা বুঝতে পারাটাই যেন বড় দায়, কখনও মিষ্টি রোদ হেসে উঠবে, কখনওবা ঝুম বৃষ্টি। একটু অসচেতন হলেই আপনার কাছে থাকা সব কিছু ভিজিয়ে দিয়ে যাবে বৃষ্টি, সাথে থাকা জিনিস নষ্টও হতে পারে। বৃষ্টি সবার পছন্দ হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু বৃষ্টিকে ফেরানো কিংবা থামানোর উপায়ও আমাদের নেই। তাই বৃষ্টিকে উপভোগ করতে না পারলেও বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির দিনে মনটা যেন আরও ভালো থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
  
কাপড়:
বৃষ্টির দিনের আবহাওয়া কিছুটা গুমোট থাকে। তাই বাসায় পরার জন্য সুতি কাপড়কেই অনেকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সহজেই শুকিয়ে যায় এমন কাপড় বৃষ্টির দিনে পরতে হবে। সুতি কাপড় সহজে শুকায় না, তাই সিল্ক বা জর্জেট জাতীয় কাপড় পরাই ভালো। বৃষ্টিতে স্বাচ্ছন্দে চলা ফেরা করা যায় এমন কাপড়ই পরা উচিৎ, তবে ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য জর্জেট জাতীয় কাপড় পরে যাওয়া ভাল, যা সহজেই ধোয়া যায়, ভিজা কাপড় শুকিয়েও যায় তাড়াতাড়ি। আর জামার ক্ষেত্রে সিনথেটিক ফেব্রিক্সের কাপড় পরাই ভালো। কাপড়ের রংটাও গাঢ় হওয়াই ভালো। অনেকেই নীলের কম্বিনেশনের কাপড় পরে থাকেন। বর্ষার সঙ্গে নীলের সম্পর্ক রয়েছে। কাপড়ে কাদার দাগ লাগলে সহজেই উঠে যায়, আর ভিজলেও গায়ের সাথে লেপটে যায় না। বৃষ্টির মৌসুমে মেজেন্ডা, বেগুনি, লাল, গাঢ় সবুজ, হলুদ রঙগুলো দারুণ মানায়। বর্ষায় অনেকেই ট্রাডিশনাল কাপড়ের পরিবর্তে ওয়েস্টার্ন কাপড়কেই বেছে নেন। যাই পরুন না কেন লং কাপড় চলা ফেলার সময় ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশিই থাকে।

ছাতা:
হঠাৎ বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ছাতাই নিত্য সঙ্গী। আর সে জন্য ফোল্ডিং ছাতা সঙ্গে রাখলে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে আবারও তা গুটিয়ে রাখা যায়। ছাতা শুধু যে বৃষ্টি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে তা নয়, ছাতা আপনাকে আরও ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারে। আজকাল বিভিন্ন রঙ এবং ধরণের ছাতা পাওয়া যায়। যা দেশি এবং বিদেশিও হতে পারে। বৃষ্টি শুরু হলেই ফুটপাত থেকে শুরু করে নামী দামী মার্কেটেও দেখা যায় বিভিন্ন রঙ বেরঙের ছাতা। কারণ ছাতাটা এই সময়ের জন্য অপরিহার্য। আমরা নিয়মিত ছাতা ব্যবহার করে অভ্যস্ত নই, তাই ছাতা হারানোর সম্ভাবনা প্রকট। একাধিক ছাতা কিনে রাখাই শ্রেয়, কালো ছাতা ব্যতিত অন্য রঙ, কিংবা বিভিন্ন রঙের মিশ্রনের ছাতা কিনলে ব্যবহার করে ভালো লাগবে। আকার আকৃতি দেখে এমন ছাতা কেনা উচিত যা সহজে বহন করা যায়।

রেইনকোট:
শুধু ছাতাই যে আমদেরকে ঝুম বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারে এমটা নয়। বিশেষ সময়ে ছাতা শুধু আপনার শরীরের উপরের অংশ ছাড়া আর কোন অংশই বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে রেইনকোট সঙ্গে থাকলে সেই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। দ্বি-চক্রযানে রেইনকোট তো অপরিহার্য একটা পরিধান। একটু খেয়াল করে কিনলে এই রেইনকোট আপনাকে আরও ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারে। রেইনকোট পরতে আমরা অনেকেই অভ্যস্ত নই, তারপরও প্রয়োজনে পরতে হয়। তাই যারা অভ্যস্ত নন তারা যেই রঙ এবং ধরণ পরতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন সেটাই পরুন। যারা অভ্যস্ত তারা একটু উজ্জল রঙ পরতে পারেন। বাচ্চাদের জন্যও রেইনকোট কিনুন, শুধু বাহারি রঙ নয়, বিভিন্ন কার্টুন আঁকা রেইনকোট হাতের নাগালেই পাওয়া যাবে। 

স্যান্ডেল বা জুতা:
বৃষ্টির মুখোমুখি হতে হবে যে কোন সময়। তাই বাড়ি থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে। এই সময়টায় জুতার জন্য বিশেষ যত্নবান হতে হবে। পায়ে যা-ই পরিধান করি না কেন, এমন জিনিস ব্যবহার করতে হবে যা ভিজে পিছলে পড়ে না যান। বর্ষায় সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা হলো জুতা বা স্যান্ডেল, বাজারে বিভিন্ন রঙ এবং ডিজাইনের রাবারের স্যান্ডেল পাওয়া যায়। এই সময়টায় বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রঙ ও ধরনের রেইনবুটও পাওয়া যায়। বৃষ্টির পানিতে ভিজে জুতা নষ্ট হওয়া ও ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তাই বিভিন্ন ধরণের জুতা সংগ্রহে রাখুন। প্লাস্টিক বা নন লেদার জুতা হলেই ভালো। বর্ষায় পরার মতো বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিকের জুতা সবখানেই পাওয়া যায়। খেয়াল রাখতে হবে জুতা যে উপকরণ দিয়ে তৈরি তা বর্ষার উপযোগী কিনা। বৃষ্টির দিনে বেল্টওয়ালা জুতা পরলে মাঝ রাস্তায় জুতা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং স্বাচ্ছন্দে হাটা যায়। এমন জুতা পরতে হবে যাতে কাদা যেন লেগে না থাকে, আর ভিজলেও যেন নষ্ট না হয়ে যায়। এই সময়ের জন্য পানি নিরোধন জুতা ব্যবহার কারায় শ্রেয়। আবার খেয়াল রাখতে হবে জুতার কারণে যেন কাদা না ছিটে ওঠে।
  
ব্যাগ: 
ব্যাগ ছাড়া চলা যেন অসম্ভব। ছেলেরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ছোট্ট একটা মানিব্যাগ যা প্যান্টের পিছন পকেটেই এঁটে যায়। আর মেয়েরা তাদের প্রয়োজনেই একটু বড় আকারের ব্যাগ নিয়ে বের হন। বৃষ্টির সময় ব্যাগ আরও একটু বড় আকারের ব্যবহার করলে, ছাতা ও রেইনকোট বয়ে নিয়ে বের হতে পারবেন। যতদিন বৃষ্টি থাকতে ততদিন চামড়ার কোন কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো। কাপড়ের কোন কিছু যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। একটু খোঁজ করলেই মানসম্মত এবং ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই প্লাস্টিকের ব্যাগও পাওয়া যাবে। মেয়েদেরকে হ্যান্ডব্যাগ ছাড়া দেখা যায় না বললেই চলে, ব্যাগগুলো তাদেরকে আরও ফ্যাশনেবল করে উপস্থাপন করে। যারা রেকসিনের ব্যাগ ব্যবহার করতে চান না, তারা শুধু বৃষ্টির দিনের জন্য এমন ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন, যা লেদারের উপরে পাতলা করে ফেব্রিক কাপড় দিয়ে তৈরি।

এমএস/এনএস