ঢাকা, রবিবার   ২৬ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ১২ ১৪৩১

করোনা অবরোধ শিথিলীকরণ: কিছু কথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২৪ পিএম, ৫ মে ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:২৭ পিএম, ৫ মে ২০২০ মঙ্গলবার

যে সব দেশ আগামী দিনগুলোতে করোনা-অবরোধ শিথিলীকরণের কথা ভাবছে, তারা পূর্বে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে নিয়ে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নিতে পারে: 

এক, অবরোধ শিথিলীকরণ একটি বিভাজিত লক্ষ্যভিত্তিক উপায়ে করতে হবে। সেটা বিভাজন খাতভিত্তিক, জনগোষ্ঠীভিত্তিক বাএলাকাভিত্তিক হতে পারে। যেমন- যে সব খাত সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান এ ভোগের জন্যে অত্যাবশ্যকীয়, সেগুলোর অবরোধ আস্তে আস্তে শিথিল করা যেতে পারে। রপ্তানী পণ্য খাতের কথাও বিবেচ্য। এ সব ক্ষেত্রে সামাজিক জনদূরত্ব ব্যাপারটি মানার বিষয়টি মাথায় রাখা যায়। 

তেমনি ভাবে, এ জাতীয় শিথিলীকরণের প্রথম সুবিধাভোগী হতে পারে শিশুরা। যেহেতু করোনার সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং যেহেতু মুক্ত পরিবেশে তাদের আসাটা খুব জরুরী, তাই শিথিলীকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ শিশুদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। 

দুই, অবরোধ শিথিলীকরণের দু’টো দিক আছে - অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও সামাজিকতার কার্যক্রম পুনরাম্ভ। বলার অপেক্ষা রাখেনা, অবরোধ শিথিলীকরণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে প্রথমটি। সুতরাং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলেও রেস্তোঁরা, শুঁড়িখানা, সামাজিক জমায়েতের ওপরে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা প্রয়োজন, যেমনটা কি না নিউজিল্যান্ড করছে। 

এর কারণ হচ্ছে, ঝুঁকি নিয়েও অবরোধ শিথিল করার পেছনে যে যুক্তি সবলভাবে কাজ করছে, তা হচ্ছে অর্থনৈতিক চাকা আবার সচল করার। সুতরাং অবরোধ শিথিলের ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। সন্দেহ নেই, রেস্তোঁরা খুলে দেয়ার সঙ্গে অর্থনীতি-সম্পৃর্কতা থাকলেও সামাজিক জনদূরত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কারণে সেগুলো খোলার ব্যাপারে আর বেশী সময় অপেক্ষা করতে হবে। 

তিন, অবরোধ শিথিল করলেই দরিদ্র মানুষের খাদ্য সঙ্কট, অর্থের ঘাটতি কিংবা কর্মসংস্থানের সমস্যার তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান হয়ে যাবে না। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সহায়তার প্রয়োজন হবে। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সেখানে মূলধারার কাজ করছে।

অবরোধ শিথিল করা মাত্র অর্থনীতি আপনা আপনি চাঙ্গা হয়ে উঠবেনা। তার জন্যে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার প্রয়োজন হবে। নীতিমালা, অর্থায়ন, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি কার্যক্রম অতীব প্রয়োজনীয়। সরকারি প্রণোদনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্ষুদ্রকৃষক, ক্ষুদ্র ও মধ্যম শিল্পেদ্যোক্তা, প্রান্তিক শ্রমিক। 

চার, মনে রাখা প্রয়োজন পর্যায়ক্রমে করোনা অবরোধ শিথিলীকরণের কারণ স্বাস্থ্যগত নয়, সেটা অর্থনৈতিকও। ধীরে ধীরে শিথিলীকরণের পক্ষে স্বাস্থ্যগত যুক্তি হচ্ছে যে, এর ফলে সংক্রমণের বিস্তারের রাশ টেনে ধরা যাবে। কিন্তু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি যুক্তিসঙ্গত। ধাপে ধাপে অবরোধ শিথিল হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও অনুক্রমনিকভাবে করা যাবে। সেই সঙ্গে শুরুকরে দেয়া কর্মকাণ্ড থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অন্য সব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে কাজে লাগানো যাবে।

পাঁচ, করোনা অবরোধ শিথিলীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নির্ণায়ক হচ্ছে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ভয়। শিথিলীকরণের সব ধাপ, সব স্তর, সব পর্যায় অত্যন্ত সতর্কভাবে বিবেচনা করতে হবে যাতে দ্বিতীয় পর্যায় সংক্রমণের সম্ভাবনা ন্যূনতম হয়। এর কারণ হচ্ছে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হলে তার তীব্রতা, ক্ষতিকারক ক্ষমতা অনেক বেশী থাকে। ১৯১৮ সালে স্প্যানিস ফ্লুর সময়ে সানফ্রান্সিসকোর ঘটনাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। 

শেষের তিনটে কথা বলি। প্রথমত: প্রক্রিয়াটি হওয়া উচিৎ করোনা-অবরোধ শিথিলীকরণের, অবোরধ উত্তোলনের নয়। দু’য়ের মাঝে আমরা যাতে গুলিয়ে না ফেলি।

দ্বিতীয়ত: এই শিথিলীকরণ প্রক্রিয়ায় বস্তুনিষ্ঠতা, সুবিবেচনা ও সতর্কতা যেন আমাদের চালিত করে।

তৃতীয়ত: দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ সর্বোতভাবেই পরিত্যাজ্য। 

এনএস/