ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

কাজলরা কেন হারিয়ে যান...

খান মুহাম্মদ রুমেল

প্রকাশিত : ০৪:৫২ পিএম, ১০ মে ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৭:৪১ পিএম, ১০ মে ২০২০ রবিবার

সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল

সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল

যে দেশে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার বিচারের জন্য কেটে যায় প্রায় এক যুগ। সেখানে সাংবাদিক কাজলের ফেরত আসাটাই যথেষ্ট স্বস্তির নয় কি! এভাবে ভাবলে অবশ্য সান্ত্বনা পাওয়া যায়। কিন্তু যখন যুদ্ধাপরাধীকে অত্যন্ত সযত্নে, তাজিমের সঙ্গে আদালতে আনা নেয়া করা হয়, আর সাংবাদিক কাজলকে পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়, যখন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রবীর শিকদারের এক হাতে হ্যান্ডকাফ আরেক হাতে ক্রাচ থাকে তখন বুকের কোন গহীন কোণে কেমন জানি চিনচিনে ব্যথা হয়।

সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ ছিলেন দীর্ঘ দিন। তারপর কোন দৈববলে তিনি হাজির হন হঠাৎ। তাও নিজ দেশে অবৈধ প্রবেশ করেন তিনি। যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজীবন বুকের মাঝে লালন করে চলেন কাজল সেই মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশেই অবৈধ প্রবেশ করেন কাজল! এর চেয়ে কষ্টের কথা আর কী আছে? মুক্তচিন্তার, স্বাধীনচেতা, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো মানুষের? নাকি ভয়ে সিঁধিয়ে থাকা, জ্বি হুজুরের ধ্বজাধারী নুপংসুকের? এই প্রশ্ন তোলা কি আজ অবান্তর?

আলোচিত পাপিয়ার সঙ্গে এক রাজনৈতিক নেতার সম্পৃক্ততা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল কাজল! আর তাতেই তার নামে হয়ে যায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা। যাই হোক কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে মামলা হতেই পারে। কোনো আপত্তি নেই। মামলার তদন্ত হবে। কাজল দোষী হলে তার শাস্তি হবে। নির্দোষ হলে স্ব সম্মানে বের হয়ে আসবেন। কিন্তু মামলা হওয়ার পরপরই যখন কাজল নিখোঁজ হয়ে যান। প্রায় দুমাস পর নিজের দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। আর সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কাজলকে গ্রেফতার দেখিয়ে পিছমোড়া করে বাধা হয়- তখন কি একটু খটকা লাগে না?

আসলে কাজলকে গুম করা হয়েছিল। যেমন- গুম করা হয়েছিলো আবু বক্কর সিদ্দিককে। যেমন গুম করা হয়েছিলো মোবাশ্বের হাসান সিজারকে। যেমন মারুফ হাসানকে। যেমন গুম করা হয়েছিলো উৎপলকে। যেমন গুম করা হয়েছে আরো অসংখ্য মানুষকে। ভাগ্য ভালো কাজল, আবু বকর, সিজার, মারুফ, উৎপল ফেরত আসতে পেরেছেন। কিন্তু আরো অনেকেইতো ফেরত আসতে পারেননি। তাদেরকে ফেরত আসতে দেয়া হয়নি। ফেরত এসে কেউই বলতে পারেননি তারা কোথায় ছিলেন। কিভাবে ছিলেন। কে নিয়ে গিয়েছিল। কে ফেরত দিয়ে গেল। কিছুই না। কাজলও কি বলতে পারবেন? তিনি কোথায় ছিলেন? কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিল। ছেলে মনোরম পলককে হাত পিছমোড়া বাধা অবস্থায় কাজল- বুক টানটান করে বলেছেন- ভয় পাসনে বাবা। সত্যের জয় হবেই। আমরা কী তবে আশায় বুক বাধতে পারি- কাজল সব বলবেন? ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ‘অবৈধ প্রবেশের’ পুরো বৃত্তান্ত? এ কোন শক্তি যারা চাইলেই নাগরিককে গুম করে দিতে পারে? এই জট কি খুলবে কোনো দিন। অন্ধকারের কালো শক্তিকে কেউ কি আলোতে নিয়ে আসতে পারবেন? 

আদতে সাংবাদিকরা একটি নিরীহ শ্রেণি। এমনিতে ফালাফালি করে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনো একতা নেই। অধিকার আদায়ের দৃপ্ত শপথ নেই। আছে শুধু হালুয়া রুটির জন্য কামড়া কামড়ি। যে সাংবাদিক দম্পতির হত্যার বিচারের কথা দিয়ে লেখার শুরু হয়েছিল- মনে আছে সেই হত্যার বিচার দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত করেছিলেন সাংবাদিকরা। একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচিতে- বিচার হবে এই আশার আলোক শিখাটি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন সবার মনে, তখনই কোন অদৃশ্য জাদুবলে আমরা দেখি আশার সে আলোক শিখাটি ধীরে ধীরে নিভে গেছে।

আর এবারে সাংবাদিক কাজলের গুম হয়ে যাওয়া, ফেরত আসা- এসব নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হওয়া তো দূরের কথা একটি বুদ্বুদ্ কি উঠেছে কোথাও? তারপরেও আশা রাখি- শফিকুল ইসলাম কাজলই হবেন শেষ মানুষ। এরপর আর কেউ রহস্যময় নিখোঁজ হবেন না। মানুষতো আশা নিয়েই বাচেঁ।

লেখক: অ্যাসাইনমেন্ট ডেস্ক ইনচার্জ, সময় টিভি।

এমবি//