ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ঝুঁকিতে বিশ্ব: জাতিসংঘ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৩ পিএম, ১৪ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে আজ হাহাকার। চারিদিকে আজ শুধু মৃত্যু, রোগ আর চাকরি হারানোর চিৎকার। করোনাভাইরাস মহামারি এমন এক সংকট তৈরি করেছে যা নজিরবিহীন। লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়ে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা বহু মানুষ। এ পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

করোনাভাইরাসের মহামারি বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। মহামারির কারণে সৃষ্ট মানসিক দুর্ভোগ সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। 

নিউ ইয়র্কে এক পলিসি ব্রিফিং উদ্বোধনের সময় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতকে অবহেলা করা হয়েছে আর বিনিয়োগ করা হয়েছে কম। ফলে কোভিড-১৯ মহামারি পরিবার এবং সম্প্রদায়ের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে চীনের উচান শহর থেকে গত বছরের শেষ দিকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্ব জুড়ে ৪৩ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষের। 

জাতিসংঘের পলিসি ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, মহামারির শুরুর দিকে মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষাই মূল উদ্বেগ ছিলো। তবে বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার বড় একটি অংশের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করছে এই মহামারি।

ওই ব্রিফিং উদ্বোধন করে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পরেও দুঃখ, উদ্বেগ আর হতাশা মানুষ ও জনগোষ্ঠীকে আক্রান্ত করতে থাকবে।’ নিজের বা প্রিয় জনের করোনা সংক্রমণ কিংবা এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয় জাতিসংঘের ওই ব্রিফিংয়ে। এছাড়া, মহামারির কারণে জীবিকা হারিয়ে ফেলা কিংবা হারানোর ঝুঁকিতে থাকা, প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে থাকা কিংবা কঠোর লকডাউন পরিস্থিতি মেনে চলার কারণে বহু মানুষের ওপর তৈরি হওয়া মানসিক চাপের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয় এতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডেভোরা কেস্টেল ওই ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা জানি বর্তমান পরিস্থিতি, ভয়, অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়- এর সবকিছুই মানসিক অশান্তির কারণ কিংবা কারণ হয়ে উঠতে পারে।’ মেডিক্যাল কর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির খবরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবা কর্মী এবং ফার্স্ট রেসপন্ডাররা মারাত্মক চাপের মধ্যে কাজ করছেন। এই মহামারিতে তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর জনগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

ওই ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া প্রায় সকলেই মহামারির কারণে নানা ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের কথা উল্লেখ করেন। স্কুলের বাইরে থাকা শিশুরা অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগে ভুগছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বাড়িতে অবস্থানের কারণে নারীদের পাশাপাশি তারাও নির্যাতনের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। এদিকে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে অতিরিক্ত চাপে ভুগছেন বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ থাকা মানুষেরা। এমনকী আগে থেকে মানসিক অসুস্থতায় ভোগা মানুষের নিয়মিত চিকিৎসা ব্যহত হওয়ায় তাদের সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের পলিসি ব্রিফিংয়ে বেশ কয়েকটি দেশের জাতীয় গবেষণার প্রতিও জোর দেওয়া হয়। এসব গবেষণায় মানসিক চাপ দ্রুত গতিতে বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে পরিচালিত এমন এক গবেষণায় দেখা গেছে সেখানকার ৩৩ শতাংশ মানুষ হতাশাজনিত লক্ষণে ভুগছে। মহামারি পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে এই সংখ্যা তিন গুণ বেশি।

ডব্লিউএইচও’র মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডেভোরা কেস্টেল জানান, মহামারির কারণে মানসিক চাপে পড়া মানুষের সংখ্যা ইরানে ৬০ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৪৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। কানাডার একটি গবেষণার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এতে বলা হয়েছে, দেশটির স্বাস্থ্য খাতের প্রায় অর্ধেক কর্মীই মানসিক সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

মহামারির আগে বিভিন্ন দেশ গড়ে স্বাস্থ্য খাতের মোট বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করার তথ্য উল্লেখ করে জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে এই খাতে ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

এমবি//