ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

কর্মজীবনের মাঝ পথে কেন এই অনিশ্চয়তা?

সোনিয়া স্নিগ্ধা

প্রকাশিত : ০৩:৫১ পিএম, ১৪ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৫৬ পিএম, ১৪ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

সোনিয়া স্নিগ্ধা

সোনিয়া স্নিগ্ধা

গণমাধ্যম, যে মাধ্যম মানুষের বঞ্চনার কথা বলে, কথা বলে অসঙ্গতির। অথচ এই মাধ্যমে কাজ করা মানুষদের বঞ্চনার কথা কেউ জানে না, এ যেন প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। আমরা যারা টেলিভিশন, পত্রিকায় বা রেডিওতে কাজ করি, তারা মেধা বা কর্মদক্ষতায় অন্য কোন পেশার মানুষের চেয়ে  কম যোগ্যতার নই, কর্মক্ষেত্রেও অদক্ষ নই। তাহলে কর্মজীবনের মাঝ পথে এসে কেন এই অনিশ্চয়তা? 

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম। অথচ করোনা দুর্যোগের এই সময়ে জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা যেমন ডাক্তার, পুলিশ ব্যাংকার সবাই যখন প্রণোদনা পাচ্ছে তখন সংবাদকর্মীর জন্য কোন বরাদ্দ নেই। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নেই তারপরেও কিসের নেশায় তারা তথ্য দিয়ে সেবা করে যাচ্ছেন দেশের মানুষকে। এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন আরো প্রায় শতাধিক কর্মী। শুধু মৌখিক ধন্যবাদ আক্রান্ত পরিবারকে নিশ্চিন্ত করতে পারছে না। 

করোনা দুর্যোগের এই সময়ে এসে বার বারই বিপর্যস্ত মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩ জন সংবাদকর্মী বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে, তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে জোড় দাবি উঠেছে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে সে বিষয়ে কোন আশ্বাস মেলেনি। হাতে গোনা দুএকটি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকী কোথাও নেই কর্মীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার বিষয়টি।

যেহেতু প্রভিডেন্ট ফান্ড বা কোন ইন্সুরেন্স সুবিধা নেই তাই কোন কর্মী আক্রান্ত হলে তার পরিবারকে থাকতে হয় সাহায্যের আশায়, সেটা কেন হবে? গণমাধ্যমে কাজ করা বেশিরভাগ মানুষই বিশেষ মেধা সম্পন্ন, তারা বা তার পরিবার কেন অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে? প্রাপ্য অধিকার আর সাহায্যের মধ্যে ফারাক বিস্তর। 

গণমাধ্যম কর্মীরা যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সেখানকার মালিকরা  রীতিমত বিত্তশালী। তাহলে কেন কর্মীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষায় কোন কাঠামো দাঁড়ায়নি এখন পর্যন্ত। সে দায় শুধু মালিকপক্ষের নয় কিছুটা দায় সাংবাদিকদেরও। 
 
কখনো টিভি পর্দায় দেখা যায় কখনো বা পত্রিকার পাতায় নাম, গণমাধ্যম কর্মীদের জীবনের একমাত্র সম্বল, আত্মতৃপ্তির জায়গা। সময়ের পালে হাওয়া লেগেছে বহু আগে। কর্মজীবনের বেশ কয়েকটি বছর কেটে গেছে, অভিজ্ঞতার ঝুলিও সমৃদ্ধ হয়েছে। হয়তো আর অল্প সময় সার্ভিস দেয়া যাবে গণমাধ্যমকে। তারপর এমন হবেনা তো নটেগাছটি মুড়োলো আমার গল্প ফুরোলো।

সহায় সম্বলহীন অবস্থায় দাঁড়াতে হবে না তো সন্তানের কৃপা প্রার্থী হয়ে? সময় এসেছে কথা বলবার, জীবন এবং জীবিকার এই টানাপোড়েন সময় থাকতেই মেটাতে হবে। নিজেকে এবং পরিবারকে অন্যের দয়ার মুখাপেক্ষী না করার জন্য ভাবতে হবে সংবাদকর্মীকে। সে জন্যই পাশে চাই মালিকপক্ষ এবং অবশ্যই সরকারকে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

এমবি//