ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

৬২ দিনেও হয়নি কোটার প্রজ্ঞাপন: ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৬, ১৩ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৫৩, ১৭ জুন ২০১৮

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোনল করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। চারদিনের লাগাতার কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার ৬২ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তাঁরা কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। এমনকি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের যে কথা ছিল তা-ও হয়নি। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। ঈদের ছুটির আগে কর্মদিবস বাকি একটি। আগামীকাল প্রজ্ঞাপন আসার কোনো আভাস মিলে নি। এদিকে প্রজ্ঞাপনের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ফুঁসছেন। তারা ঈদের আগে প্রজ্ঞাপন না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোনলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তিন-তিন বার আন্দোলন স্থগিত করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ঈদের পর সারাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করবে।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও প্রতিবন্ধীদের মতো অবহেলিত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে এই বিষয়টি ঠিক করার কথা। কোটা বিলুপ্ত হবে নাকি সংস্কার হবে সেটি এখনও সুস্পষ্ট হয়নি।

এবিষয় জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নুরু একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা তিন তিন বার আন্দোলন স্থগিত করেছি। আমরা তাঁর উপরে ভরসা করে আন্দোলন স্থগিত করি কিন্তু দুই মাস পার হলেও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তাঁরা একদিকে আমাদেরকে সান্তনা দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপনের কথা বলছেন। অন্যদিকে প্রশাশন ব্যবহার করে আন্দোনলকে দমনোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে আশ্বাস দিলেও এখন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় নাখোশ আন্দোলনকারীরা। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নেমে আসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।

কোটার সংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়েছে হয়নি। আর সরকারের পক্ষ থেকে একই গান বাজানো (প্রজ্ঞাপন হবে) হচ্ছে। ফলে আমরা আর আস্থা রাখতে পারছি না। আমিসহ কেন্দ্রীয় কমিটি সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন পার করছি। আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে ঈদের পর আবারও কঠোর আন্দোনে যাবো। এ বিষয় আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি সবাই ঈদের পর মিলে সিদ্ধান্ত নেব এবং সংবাদ সম্মেলনের মধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি জানাব।

এবিষয় জানতে চাইলে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে তিন তিনবার ডেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা তাদের দেওয়া কথা রাখেনি। যে কারণে, আমরা আর কোনও আশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। ঈদের পরে আমরা প্রজ্ঞাপন  নিয়েই মাঠ ছাড়বো। প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে, তবুও প্রজ্ঞাপন ছাড়া বাংলার ছাত্রসমাজ রাজপথ ছাড়বে না।

এ বিষয় জানতে চাইলে পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান একুশে টিভি অনলাইন বলেন, ঈদের পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কী ধরণের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে হয়তো মানববন্ধন বা বিক্ষোভ পালন করা হবে। এরপরও যদি প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়। সারাদেশের ছাত্র সমাজ নিয়ে  কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এবিষয় জানতে চাইলে আরেক যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ হাসান শাওন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, কোটার প্রজ্ঞাপনের জন্য সরকারকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ঈদের পরে আমরা সারাবাংলার ছাত্রসমাজ নিয়ে একযোগে রাজপথে অবস্থান করবো। এমনকি দাবি আদায় না হওয়া পযর্ন্ত রাজপথ ছাড়বো না।

বর্তমানে দেশে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতি-পুতিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, ৫ শতাংশ উপজাতি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রয়েছে। সব মিলিয়ে সংরক্ষিত কোটা রয়েছে ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ পদে চাকরির জন্য লড়াই করতে হয় মেধাবীদের। এতে প্রকৃত মেধাবীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে ভেঙে পড়ছে জনসেবা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। যা একটি দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অন্তরায়। এছাড়া মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি রয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারছেন না। কোটা সংস্কারের বিষয়ে  কমিটি করার একটি প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

 

 টিআর/ এআর

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি