ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জনসচেতনতা

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানেই বিষ

প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ২৫ জুন ২০১৯

ওষুধ তৈরির উপদানেই রয়েছে বিষ। আর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানেই বিষ। এছাড়া অনেক ওষুধের দোকানে কোনও ব্যবস্থাপনা ছাড়া ওষুধ প্রদান করা হয়। অনেক সময় নানা রোগের জন্য এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রিপশান ছাড়াই প্রদান করা হয়। তাই যে ওষুধ মানুষের জীবন রক্ষা করে, সেই ওষুধ যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়, তাহলে তা কি মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারবে? আসলে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সচেতনতার অভাবে ফার্মাসি থেকে সেই বিষ কিনে খাচ্ছি আমরা।

অনেক সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খায়। তারা ভাবতেও পারে না যে ওষুধের দোকানি তাকে ওষুধের বদলে বিষ বিক্রি করবে। কিন্তু অনেক দোকানিই মানুষকে ঠকাতে এই অপকর্মটি করে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ শুধু জনগণের স্বাস্থ্যগত ক্ষতিই করে না, এগুলো পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।

এছাড়া, ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার বিশাল। তাই মুনাফালোভী কোম্পানিগুলোর অনৈতিক কাজ করতে বাধছে না। তারা দেদার উৎপাদন করে চলেছে মানহীন ওষুধ। কিন্তু ওষুধ তো শখ করে খাওয়ার কোন ‘রসগোল্লা’ নয়, এ হচ্ছে এক অর্থে জীবনরক্ষাকারী দরকারি বস্তু। অথচ জীবন রক্ষার জন্য ওষুধ সেবন করতে গিয়ে সে ওষুধ জীবন সংহারে সক্রিয় হয়ে উঠছে! আবার অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজার থেকে তুলে নিতেও গড়িমসি করে অনেক কোম্পানি।

এ জন্য সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর ২ জুলাইয়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব ওষুধ ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সোমবার দুপুরে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশ দেন।

এদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নামের বিষটির ব্যবহারে মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি করে তা সংক্ষেপে বলার মতো নয় বলে মনে করেন ওষুধ বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, এই বিষ মানুষের কিডনি, লিভার, হৃতপিণ্ড, ফুসফুস, অস্থিমজ্জা, পাকস্থলী, রক্তকোষ, জননেন্দ্রিয় ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক হলে তা তৈরি করতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণু, যা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা চরম আশঙ্কায় রয়েছেন।

এই ওষুধ বিশেষজ্ঞ বলেন, নকল-ভেজাল-নিম্নমান-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি তাই নিছক একটি সাধারণ অপরাধ নয়। অসংখ্য মানুষের প্রাণঘাতী স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটছে বলে এটি গণহত্যার সমান অপরাধ এবং অপরাধীর সেভাবেই বিচার হওয়া উচিত। কারণ এই অপরাধ শুধু একজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে না, কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। নীরব মৃত্যু বলে এই গণহত্যা চোখে দেখা যাচ্ছে না।

আসলে ওষুধ উত্পাদনের পর এর উত্পাদনকারী কোম্পানি এর একটি মেয়াদ লিখে দেয়। এই সময়সীমা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়। এই সময়সীমার পর ওষুধটি আর ওষুধ থাকে না। তখন এটি বিষে পরিণত হয়। তাই ওষুধ বিক্রেতাকে ওষুধ বিক্রির সময় এই তারিখের আগে বিক্রির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়।

আসলে নিয়ম হচ্ছে, কোনও দোকানে কোনও কোম্পানির ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা কোম্পানিকে জানাতে হয় কমপক্ষে তিন মাস আগে। কোম্পানি তখন সেগুলো দোকান থেকে নিয়ে যায় এবং তার বদলে সমপরিমাণ ওষুধ দোকানিকে দিয়ে যায়। যেসব ওষুধ কোম্পানি অনিয়মের আখড়া বা মানুষ মেরে হলেও দ্রুত বড়লোক হতে চায় তারা এগুলো দোকান থেকে তুলে নিতে গড়িমসি করে। তখন নিয়ম হচ্ছে দোকানি ওষুধ প্রশাসনকে বিষয়টি জানাবে। তখন বাকি কাজগুলো ওষুধ প্রশাসন করবে। কোনও অবস্থাতেই দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা যাবে না। অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি না করলে দোকানির সামন্যতম কোনও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কিন্তু তার পরও যদি কোনও দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থেকে যায়, তাহলে স্বতঃসিদ্ধভাবেই বুঝতে হবে দোকানির কুমতলব রয়েছে। জনগণের স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের বিনিময়ে সে অন্যায় মুনাফা করতে চায়।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি