ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শান্তি চাই আর চাই শৃঙ্খলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১২:২৬, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহত হওয়ায় আটকাবস্থা হতে মুক্তিলাভ করেন বঙ্গবন্ধু। জেলখানা থেকে বের হয়ে উঠেন নিজ বাসভবনে। এই খবরটি মুহূর্তেই জানাজানি হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য তাঁর বাসভবনের সামনে বাঁধভাঙা জোয়ার নামে মানুষের। 

বাসভবনে পৌঁছার স্বল্পক্ষণ পরে স্বীয় বাসভবনের দ্বিতল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমবেত জনসমুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, তাঁর মুক্তিলাভে দেশবাসীর বিজয় সূচিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ এক, অভিন্ন ও ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এ ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মাহুতি কখনও বিফলে যাইবে না, যাইতে পারে না।’

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রামের প্রতিশ্রতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশবাসীর প্রতিটি দাবি নিয়ে তিনি অবিরাম সংগ্রাম করে যাবেন, কেননা তিনি বিশ্বাস করেন যে, দেশ ও দেশবাসীর অধিকার ও স্বার্থের স্থান সর্বোচ্চ।

দেশের উভয়াংশের ছাত্র-জনতা যেভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাঁর মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে সেজন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, জনগণ এক মহান লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, জাতি কোনদিন তা বিস্তৃত হবে না।

দৃপ্তকণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, দেশবাসীর দাবি-দাওয়ার প্রশ্নে তিনি পর্বতের মতো অটল আছেন এবং তিনি করেন যে, দেশবাসীর অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রাক্কালে ব্যক্তি বা গোষ্ঠি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।

এক পর্যায়ে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যে সূর্য-সন্তানেরা অকালে হৃদয় নিংড়ানো রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে গেলেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা আমার নাই। আজকের দিনে কোটি কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বলি, ‘জয়, ছাত্র-জনতার জয়।’

অগণিত ভক্তের প্রেম-ভালোবাসার অনিবার্ণ শিখার সামনে আকণ্ঠ মাল্যভূষিত হয়ে শেখ মুজিব দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, সংগ্রামী ছাত্ররা যে এগার-দফা দিয়েছেন তার প্রতি আমারও সমর্থন রইল। কারণ, এগার-দফার মধ্যে আমার দলের ছয় দফার রূপরেখাও রয়েছে।

দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার প্রশ্নটি অবতারণা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সফল করার পূর্বশর্ত। সংগ্রামকে সঠিক পথে পরিচালনার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে তিনি আরও বলেন, সংগ্রাম হবে দুর্বার হতে দুর্বারতর। সে সংগ্রামও পরিচালনায় মুহূর্তের জন্য যেমন বিরতির সুযোগ নাই, ঠিক তেমনি মুহূর্তের জন্য উচ্ছৃঙ্খলতার প্রশ্রয় দেওয়ারও কোন অবকাশ নাই।

দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, সংগ্রামী বীর যাঁরা মুক্তি সংগ্রামে আত্মহুতি দিয়েছেন আমরা তাঁদের রুধির ধারাকে ব্যর্থ হতে দিব না। প্রয়োজনবোধে আমার নিজের রক্ত দিয়া বিগত কালের সংগ্রামী রক্তের সাফল্যকে চিরন্তন ও চিরজাগরুক রাখবো।

বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের বাইরে এবং চতুর্দিকের রাস্তায় তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। কেবল মানুষ আর মানুষের ঢেউ এসে যেন আছড়ে পড়ছিল তাঁর বাসভবনের সম্মুখের সড়কে, লেকের পাড়ে। পাঁচ-দশ মিনিট পর পরই গাড়ি বারান্দায় এসে বঙ্গবন্ধুকে দেখা দিতে হয়েছিল আগ্রহী জনতার সঙ্গে।

তথ্যসূত্র : এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি