ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫

কাজে আনুন স্মার্টনেস...

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ২১ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৩:৫৩, ২২ জুলাই ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

চব্বিশ ঘণ্টা ব্যস্ততা আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। দিনরাত কত কর্মযজ্ঞই না আমাদের সম্পাদন করতে হয়। এই কাজগুলোর ওপরই নির্ভর করে আমাদের সফলতা-ব্যর্থতা। দিনরাত কাজ করলেই যে সফলতার চূড়ায় উঠা যাবে, সেটি কিন্তু কেউ দিব্যি দিয়ে বলতে পারে না। ব্যর্থতার গÐি পেরিয়ে সফল হতে হলে কৌশলী হতে হবে। কাজে স্মার্টনেস আনতে হবে। কর্মক্ষেত্রে স্মার্ট যারা তাদেরই জয়গান রচিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে সময় বাঁচিয়ে সর্বোচ্চটুকু আদায় সম্ভব হবে একমাত্র আপনার কৌশল ও স্মার্টনেসের মাধ্যমে। জেনে নিন কাজে নৈপুণ্য এবং স্মার্টনেস আনার কয়েকটি উপায় -

সক্ষমতাকে সর্বোচ্চ বিন্দুতে নিয়ে যান
আপনার সক্ষমতা সম্পর্কে আপনিই ভালো জানেন। সেটিকে কাজের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। অ্যাথলেটরা সক্ষমতার এই অংশকে বলেন `ইন দ্য জোন`। এই পর্যায়ে আপনি এতটাই মনোযোগী থাকবেন যে, বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ আপনাকে একচুলও টলাতে পারবে না।

কাজ করুন সিরিয়াসলি
একযোগে বহু কাজ করতে গিয়ে অনেকে খেই হারিয়ে ফেলেন। তাই একসঙ্গে বহু কাজ না কওে একটিই করুণ। সেটি মনোযোগ দিয়ে। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল বলেছিলেন, সূর্যরশ্মি কখনো পোড়ায় না, যদি না তা একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা হয়। তাই মনোযোগ এক বিন্দুতে জড়ো করতে অভ্যস্ত হন, যদি স্মার্টনেসের পরিচয় দিতে চান।


পাল্টা কৌশল
নির্দিষ্ট কাজের পেছনে যে কৌশল ব্যবহার করা হয়, এর বিপরীত কৌশলগুলোকেও ভিন্নভাবে কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কর্মদক্ষতা শুধু কাজের প্রক্রিয়া জানার মাধ্যমেই আসে না, গতানুগতিক ধারার বাইওে গিয়ে কাজ করেও কর্মদক্ষতা প্রমাণ করা যায়।


সময়ের আগে কাজ
সিরিল নর্থকোট পারকিনসন বলেছিলেন, শেষ মিনিট পর্যন্ত আপনার অপেক্ষার অর্থ হলো আরো এক মিনিট বেশি সময় নেওয়া। আমাদের সবার জীবনে প্রতিনিয়ত এই নিয়মের প্রয়োগ ঘটে। খেয়াল করে দেখুন, এক মাস আগে যে প্রজেক্টটি শুরু করেছিলেন, হয়তো তার আসল কাজটুকু হয়েছে শেষতম সপ্তাহে। অর্থাৎ, বাকি সময়টুকু পুরোই জলে গেছে। পারকিনসনের এই বিখ্যাত ল-এর মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নৈপুণ্য আনা হয়েছে।


দুই মিনিটের নিয়ম মানুন
প্রতিদিন অফিসে গিয়েই দুই মিনিট সময় নিয়ে নিন ই-মেইলে ইনবক্স পরিষ্কার করতে, ভয়েস মেইল চেক করতে। এর মাধ্যমে আগামীর বড় বড় কাজের অনেকাংশই আঞ্জাম দেয়া হয়ে যায়।


অসীম ইচ্ছাশক্তি
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেলি ম্যাকগোনিগাল বলেন, ইচ্ছাশক্তির তিনটি ভিন্ন প্রায়োগিক দিক থেকে সফলতা বাগিয়ে আনা যায়। এগুলো হলো-আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাব না- এর মাধ্যমে লোভ সংবরণ করা হয়। আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাব- এর মাধ্যমে মূল কাজের সঙ্গে বিকল্প উপায় অবলম্বন করা হয়। আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাতে চাই- এর মাধ্যমে আপনার লক্ষ্য, গন্তব্য, ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নেওয়া ইত্যাদি বিষয় বারবার মনে আসে। ইচ্ছাশক্তি অনেকটা পেশিশক্তির মতো। সফল না হলে এটি নিজেই `আমি শক্তির প্রয়োগ ঘটাব না` উপায় গ্রহণ করে। কিন্তু ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে তুলে আবার পেশিকে শক্তিশালী করে তোলেন বুদ্ধিমানেরা।


কাজের ফাকে ৫ মিনিট
বিশ্রামে উদ্যম ফিরে আসে। ঘন্টার পর ঘন্টা টানা কাজ করলে মাথা হ্যাং হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, মানুষের মনোযোগী থাকার সহজাত প্রবণতার চক্রটি মস্তিষ্কে টানা ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়। এরপর ২০ মিনিটের বিশ্রামের দরকার হয় মস্তিষ্কের। তাই কাজের ফাঁকে আপনাকে একটু সময় বের কওে নিতে হবে রিফ্রেশ হতে।


অঙ্গভঙ্গি শক্তির আধার
মানুষের অঙ্গভঙ্গির সামান্য পরিবর্তনে ব্যাপক কিছু ঘটে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ অ্যামি কাডি বলেন, মানসিক দ্বন্দ্ব এবং স্নায়বিক চাপের উদ্ভব হতে পারে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। উদ্দীপনার সঙ্গে কোনো দৈহিক বিন্যাসের কারণে দেহ-মনের শক্তি বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে টেস্টোসটেরনের মাত্রা বাড়ে, যা আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়।


বর্তমানকে গুরুত্ব দিন
অধিকাংশ পেশাদারেরই ধারণা নিয়মিত চাকরি পরিবর্তনেই উন্নতি করা সম্ভব। এটি সবক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এর বদলে বর্তমান চাকরিতেই চ্যালেঞ্জিং কাজ গ্রহণ করে উন্নতি করা সম্ভব। এজন্য সঠিক সুযোগের প্রতীক্ষায় থাকতে হবে এবং বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে।  


আত্মসচেতনতা
সাফলের পথে এগিয়ে যেতে আত্মসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য নিজেকে জানতে হবে এবং নিজের সব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিজের যোগ্যতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে সাফল্যেও চূড়া উঠা সম্ভব এই আত্মবিশ্বাসটুকু আজীবন লালন করতে হবে।


পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে সচেতনতা
স্মার্ট ব্যাক্তি মাত্রই আশপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন। আশপাশের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, মানুষের কার্যক্রম, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, সমাজব্যবস্থা কীভাবে এগোচেছ এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সেই মতে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে।


বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা অর্জন
জীবনের সাফল্যের জন্য বহু অভিজ্ঞতা দরকার। আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডার যত সমৃদ্ধ হবে সাফল্যের সম্ভাবনাও তত ভালো হবে। এজন্য আপনাকে চেষ্টা করতে হবে নিত্য-নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও নতুন বিষয় শিখতে হবে।  


প্রযুক্তি সম্পর্কে আপডেট
বর্তমান যুগটা তথ্য-প্রযুক্তির। এখানে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি জানতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে স্মার্টনেস আনার জন্যও কম্পিউটার, মোবাইলের নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।


প্রশিক্ষণ নিন
পেশাগত জীবনের উন্নতির জন্য সব সময় শিখতে হবে। আপনি যদি মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করেন তবে আধুনিক এইচআরের টার্মিওলজিগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। নতুবা পিছিয়ে পড়বে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিকল্প নেই। নিয়মিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেশাগত জীবনে উন্নতির জন্য সহায়ক।  


প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং
পেশাগত জীবন শুধু নিজের ভেতরকার উন্নতির ওপরই নির্ভর করে না। এজন্য তৈরি করতে হয় নিজস্ব পরিচিত মানুষদের একটি নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক ছাড়া পেশাগত উন্নতি অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।  


আত্মসমালোচনা
গারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে টিভি দেখে সময় নষ্ট না করে নিজেকে নিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে ৫ মিনিট ভাবুন। কোথাও ভুল হচ্ছে কিনা সেটি নিয়ে চিন্তা করুন। সমস্যায় পড়লে সমাধানের উপায় খুঁজুন। এভাবে আত্মসমালোচনা করতে শিখলে আপনি সফল হবেনই। এছাড়া কেউ আপনার সমালোচনা করা মানেই তিনি শত্রু নন। সমালোচনাকারী আপনার ভালো চাইতে পারেন। আর সমালোচনাকারীদের ভালোভাবে গ্রহণ করার ওপর কিছুটা হলেও নির্ভর করে আপনার পেশাগত জীবনের উন্নতি।
বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে

//এআর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি