ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ত্রিমুখী দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পঞ্চগড়ের মফিজার

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ১৬:৪৭, ২২ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৬:৪৮, ২২ মার্চ ২০২০

জমি দখল করে নিজের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে মফিজার রহমানের বিরুদ্ধে- সংগৃহীত

জমি দখল করে নিজের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে মফিজার রহমানের বিরুদ্ধে- সংগৃহীত

পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নে মফিজার রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা বলে নয়-ছয়, নিয়োগে পাঁচ কোটি টাকার ওপরে দুর্নীতি, বিভিন্ন বয়সীদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করণের নামে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

এ নিয়ে গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করলেও তদন্ত সাপেক্ষে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে ক্ষোভ রয়েছে অভিযোগকারীদের। পরে চলতি বছরের মার্চে ডাক যোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগের চিঠি পাঠান স্থানীয়রা। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মফিজার তৎকালীন পঞ্চগড় ছিটমহল বিনিময় কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিট মহল বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ৭৮ নং গাড়াতি ছিট মহল পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত হয়। বিলুপ্ত গাড়াতিতে বঙ্গবন্ধু আলিয়া মাদ্রাসা, বঙ্গবন্ধু কলেজ, রাজমহল উচ্চ বিদ্যালয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে স্থানীয়দের জানান মফিজার রহমান। 

সাহাব উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি করা হবে -এ আশ্বাসে তার ১৫০ শতাংশ জমি কলেজের নামে লিখে নেন তিনি। তবে মফিজার রহমান নিজেই প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হয়ে কলেজের নামটিও নিজের নামে করে নেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মমিনুল ইসলাম, মো. ফয়জুল হক, নূর হোসেন ও কলেজের জমিদাতা সাহাব উদ্দিন একুশে টেলিভিশনকে জানান, মফিজার রহমান ডিগ্রি কলেজ, সায়মা ওয়াজে পুতুল অটিজম ও প্রতিবন্ধী স্কুল, রাজমহল উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু আলীয়া মাদ্রাসায় প্রায় ১১০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেন অভিযুক্ত। টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেন মফিজার। নিয়োগে বাণিজ্য করে তিনি প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নামে বেনামে সম্পত্তি কিনছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান করার কথা থাকলেও টাকার জোরে লোক দেখানো কমিটি করে নিজেই সভাপতি হয়েছেন। এমনকি কমিটির সদস্যদের মধ্যে নিজের আত্মীয়দের রেখে সব কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখছেন।

অভিযোগ দায়েরকারী মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার বেকার শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার কথা থাকলেও কোনটিই করেননি মফিজার। টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশের কথা বলে বাড়ি বাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করেন।’ 

নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে কথা বললে মফিজার রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মো. নুরুল্লাহ বলেন, ‘কিছু প্রার্থী টাকা দিয়েছেন, তবে সেই সব টাকা আমরা কলেজের অবকাঠামোতে ব্যয় করেছি। কোনও নতুন প্রতিষ্ঠান শুরু করতে হলে টাকার প্রয়োজন হয়। আমার সরকারের কাছ থেকে কোন টাকা পাইনি। নিজেদের টাকা এবং অনুদানের টাকা দিয়েই চলতে হয়।’ 

নিয়োগ প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা বিভিন্ন খাতে খরচ করার বিষয়টা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো নিয়োগকর্তা নই। আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মাত্র। কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয়নি। অনেক শিক্ষক নিজেরাই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আমিও এ কলেজে ৬০ শতাংশ জমি দান করেছি।’ 

আরও অভিযোগ রয়েছে, বিলুপ্ত ছিট মহলের বিভিন্ন বয়সীদেরকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে তিনি চাঁদা আদায় করেন মফিজার। 

মফিজারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার শাহাদাত সম্রাট বলেন, ‘আমি মফিজারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে অবগত। আসলে অনেক ক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু করার থাকে না। মফিজার রহমান ঢাকা থেকেই অনেক কিছু করে আনেন।’

তবে নিজের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মফিজার রহমান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়গুলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এখানে কোনও প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রমে দুর্নীতি করা হয়নি।’ নিজের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বোর্ডের নিয়ম মেনেই করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 

মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে ছিটমহল নিয়ে একটি মহাসম্মেলন হয় তখন খরচ বাবদ কিছু টাকা আদায় করা হয়েছিল।’ সম্মেলন ২০১০ সালে হয়ে থাকলে সেই টাকা কেন ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আদায় করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। 

এদিকে মফিজার রহমানের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত দেয়া হয়েছিল বলে জানান স্থানীয়রা। তবে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি জেলা প্রশাসন। বিষয়টি জানতে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল তার কপি মাত্র দুই তিন দিন আগে এসেছে। এর আগে কি হয়েছে তা এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারছি না। তবে বিষয়টি আমরা দেখছি। যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এমএস/এসএ/এনএস
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি