ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪

৪৮ বছর পরেও শেখ জামালের স্মৃতি ভুলতে পারেনি বন্ধু শাহেদ জামিল

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ১৮:৪৯, ১৮ আগস্ট ২০২৩ | আপডেট: ১৮:৪৯, ১৮ আগস্ট ২০২৩

১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের কালরাতে বাঙ্গালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যা করা হয়। সেই কলঙ্কময় রাতে একদল বিপদগামী সেনা সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাঁর তিন ছেলে-শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ও তাঁর তিন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় হত্যাকান্ড থেকে প্রাণে বেঁচে যান। স্বজন হারানোর ব্যথা আজও তাড়িত করে বেড়ায় বঙ্গবন্ধুর দুই আত্নজাকে।

ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সেই সমপরিমাণ শোক বুকে নিয়ে সমগ্র বাঙালি গুমরে কাঁদে। এই অপূরণীয় ক্ষতি বাঙালী প্রতিনিয়তই অনুভব করে। এমনি এক ১৫ আগস্টের বিকেলে বনানী কবরস্থানে দেখা মিললো শেখ জামালের বাল্যবন্ধু শাহেদ জামিলের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুশফিকিন সালেহিন এর সন্তান। শেখ জামালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাহেদ জামিলের অজস্র বাল্য স্মৃতি।

প্রতিবছর ১৫ আগস্টে বাঙালি শোকে বিহব্বল হয়। শাহেদও অশ্রু বিগলিত হৃদয়ে বন্ধুর কবরের সামনে দাঁড়ান এক বুক হারানোর ব্যাথা নিয়ে। কবর জিয়ারতের শেষে শাহেদ জামিল স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ জামাল আমার 'স্কুল জীবনের বন্ধু ছিল। স্কুল সময় পেরিয়ে বন্ধুত্ব থেকে যায় আজীবন। আমরা করাচি থেকে ফিরেই ভর্তি হই রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে। রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে গড়ে ওঠা সে পরিচয় রূপ নেয় বন্ধুত্বে, যাকে বলা হয় প্রথম দেখায় বন্ধুত্ব।এমন কোন দিন ছিলো না যে আমরা দুইজন দুইজনের বাসায় থাকতাম না। অনেক কিছু বলার মাঝেও যে কথাটি বলতেই হয় বন্ধু জামাল ও বড়ভাই কামালের মতো এমন অসাধারণ মানুষ আমি জীবনে আর দেখিনি।

বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান হলেও তারা খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। মানুষের সাথে মেশার আলাদা দেয়াল কখনো তৈরি করেনি বরং অসাধারণ হয়েও খুব সাধারণের মতো জীবনযাপন করতো তারা। মানুষের প্রতি মনুষত্ব,ভালোবাসা, মমতায় পরিপূর্ণ ছিলো শেখ জামালের হৃদয়। শ্রেণীকক্ষের সবার সাথে একটি বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রেখেছিল।আজও আমরা তাকে ভুলতে পারিনি।

আজকের এই দিনে বন্ধুর জন্য হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বঙ্গমাতার প্রসঙ্গে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, খালা (বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব) ছিলেন মাটির মানুষ। ওনার স্নেহ ভালোবাসা ছিল স্মরণে রাখার মতো। নিজের সন্তানের মতোই তিনি আমাদের স্নেহ করতেন। আমাদের বাসা ছিল ধানমন্ডির ৮ নাম্বারে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছেই থাকার সুবাদে আমি প্রতিদিন ৩২ নাম্বারের বাড়িতে যেতাম। জামালের সঙ্গে দেখা হতো, একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম।খেলাধুলা শেষে প্রত্যহ আমাকে খাওয়া দাওয়া করে বাসায় ফিরতে হতো।কেননা বঙ্গবন্ধু পরিবার খুবই অতিথিপরায়ণ ছিলেন।সে বাড়ী থেকে না খেয়ে আসা সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গমাতা অমায়িক মানুষ ছিলেন। হাসিনা আপা এবং রেহেনা আপার মধ্যে সেই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তাঁরা দুজন মায়ের মতন মানুষকে আগলে রাখতে জানেন। জনগণকে নিজের আত্নার সাথে সম্পৃক্ত রাখেন এবং অগাধ ভালোবাসেন।

প্রতি ১৫ই আগষ্টে আমি বন্ধু জামালকে দেখতে এই বনানী কবরস্থানে আসি। তার জন্য দোয়া করি এবং সেই রাতে নিহত সকলের রূহের মাগফিরাত কামনা করি।

কেআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি