ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

একটি ছিনতাই, অনেক প্রশ্ন...

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩২, ২০ জুন ২০১৮

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন জার্মান তরুণী সুইন্ডে ভিডারহোল্ড৷ হতাশা এবং ক্ষোভ নিয়েই দেশে ফিরেছেন তিনি৷ বিষয়টি নিয়ে একরকম তোলপাড়ই চলছে৷ বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়৷

ফটোগ্রাফির প্রতিষ্ঠান ‘পাঠশালা`র শিক্ষার্থী ভিডারহোল্ড গত বৃহস্পতিবার ভোরে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় করে তার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় ফিরছিলেন৷ জিগাতলা সীমান্ত স্কয়ারের সামনে একটি সাদা প্রাইভেটকারে আসা ছিনতাইকারীরা তার ব্যাকপ্যাক টান দিয়ে নিয়ে যায়৷ ওই ব্যাগে তার ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ক্রেডিট কার্ড এবং দুটি হার্ডডিস্কসহ অন্যান্য জিনিস ছিল৷

ছিনতাইয়ের ঘটনা তার বন্ধু শশাঙ্ক সাহা গণমাধ্যমের কাছে বর্ননা করেছেন৷ তিনি বলেন, সুইন্ডে তার বন্ধুদের জানিয়েছেন, তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুটি হার্ডডিস্ক৷ দীর্ঘ সময় কষ্ট করে তোলা ছবি এতে রয়েছে৷ দু`টি হার্ডডিস্কের জন্য বৃহস্পতিবার সারা দিনই কেঁদেছেন৷ তাকে কিছু খাওয়ানোও যায়নি৷ শুক্রবার ভোরবেলা বন্ধুরা তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে আসেন৷

তিনি আরো বলেন, গত জানুয়ারিতে ধানমন্ডির পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে ফটোগ্রাফি কোর্স করতে ঢাকায় আসেন সুইন্ডে৷ তিনি চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা শিল্প, সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অনেক জায়গায় প্রচুর ছবি তুলেছিলেন৷ ছিনতাইকারী যে গাড়িতে ছিল, সেই গাড়ির নম্বরপ্লেট বাংলায় থাকায় তিনি সেটি বুঝতে পারেননি৷ রিকশাচালকও সেটি খেয়াল করেননি৷ এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সুইন্ডে৷

সুইন্ডে  ঘটনার পর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, আমি পাঁচ মাসে এখানে অনেক জায়গায় গিয়েছি৷ অনেক অভিজ্ঞতা৷ অনেক সহযোগিতা পেয়েছি৷  কিন্তু একটি ঘটনা পুরো বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি কালো মেঘে ঢেকে দিলো৷ না, এটা (বাংলাদেশ) ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নয়৷ একা ভ্রমণ না করাই ভালো৷ আমি কেবল একটি কথাই বলতে পারি, দেখে-শুনে চলো, নিজের ক্ষেত্রে সাবধানে থেকো৷ আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বাংলাদেশ ছাড়ছি৷

পাঠশালার অধ্যক্ষ তানভির মুরাদ তপু ডয়চে ভেলেকে বলেন, সুইন্ডে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার পরই আমরা জানতে পারি৷ এরপর তাকে নিয়ে আমরা থানায় যাই৷ সে একটি মামলা করেছে৷ ঢাকায় থাকাকালে সে একবার দেশের বাইরেও গিয়েছিল৷ আর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সে ছবি তুলেছে৷ সেই সব ছবিই হার্ডডিস্কে ছিল৷ সে ওই ছবিগুলোর জন্যই বেশি কাতর হয়ে পড়ে৷ অবশেষে মনভরা দুঃখ নিয়ে সে বাংলাদেশ ছেড়েছে, যা আমাদেরও কষ্ট দেয়৷

তিনি জানান, হানোফারের সঙ্গে আমাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আছে৷  তার আওতায়ই সুইন্ডে পাঠশালায় ফটোগ্রাফি কোর্স করতে এসছিলেন৷  আমাদেরও তিন জন এখন হানোভারে আছে৷ সুইন্ডে বাংলাদেশ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত ছিলেন৷ সবার সঙ্গে মিশতেন৷ ক্লাসেও ছিলেন মনোযোগী৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দুঃখ নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন৷

ধানমন্ডি থানা পুলিশ এখন সুইন্ডের ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে৷ শুধু থানা পুলিশ নয়, ডিবি, পিবিআইসহ পুলিশের আরো কয়েকটি সংস্থা মাঠে নেমেছে ব্যাগ উদ্ধারে৷ ধানমন্ডি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) পারভেজ হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা আশপাশের এলকার সিসি ক্যামেরার সব ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি৷ সীমান্ত স্কোয়ারের  ভিডিও ফুটেজের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরে আবেদন করেছি৷ ৪-৫টি প্রাইভেট কার চিহ্নিত করেছি৷ আশা করি, ফুটেজ দেখে আমরা ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করতে পারবো৷ আমরা আশাবাদী, সুইন্ডে তার ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র ফেরত পাবেন৷

বাংলাদেশে এর আগেও একাধিক বিদেশি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চ থেকে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনারার ভ্যানিটি ব্যাগ চুরির ঘটনা ঘটে৷ পরে অবশ্য ওই ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ৷

ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ সুইন্ডের ব্যাগ উদ্ধারে তৎপর আছে৷ অতীতেও  এরকম ঘটনা ঘটেছে৷ বিদেশি নাগরিকদের ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারী আটক এবং মালামাল উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি৷ আশা করি, এবারও সক্ষম হবো৷

হোলি আর্টিজান হামলার পর বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক এবং  দূতাবাসের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় সরকার৷ বিদেশি নাগরিকরা এরপর থেকে বাংলাদেশ ভ্রমনে আস্থা ফিরে পায়৷ সেই নিরাপত্তা এখনো অব্যাহত আছে কি-না জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, বিদেশি দূতাবাস এবং নাগরিকদের  নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এখনো কার্যকর আছে৷ আমরা নিরাপত্তার জন্য বিদেশি নাগরিক যারা বাংলাদেশে আসেন, তাদের চলাচলের ওপর খেয়াল রাখি৷ তবে নানা কাজে তারা আসেন৷ কেউ ভ্রমণ করতেও আসেন৷ সবার জন্য সমান নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না৷

সুইন্ডের বিদেশ ভ্রমণের নেশা আছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ  করে ছবি তুলেছেন৷ ঢাকায় গ্যোয়েটে (বানানভেদে গোয়েটে) ইন্সটিটিউটের সামনেও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন তিনি৷ পাঠশালার জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমরান আহমেদের ভাষায়, অত্যন্ত বন্ধু বৎসল সুইন্ডে আমাদের সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু আমরা তাকে হাসিমুখে তার দেশে পাঠাতে পারলাম না৷ এটা আমাদের দুঃখ৷ এখন যদি পুলিশ তার ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করে তাকে ফেরত দিতে পারে, তাহলে আমরা সবাই খুশি হবো৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি