ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নারী কর্মসংস্থানের স্বপ্ন ফেরি করছেন জুঁই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৩৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেছিলেন জেসমিনা সুরুজ জুঁই। ইচ্ছে করলে চাকরি করে ভালোই কাটিয়ে দিতে পারতেন জীবনটা। কিন্তু তার মনে যে স্বপ্ন বাসা বেধেঁছিল। তাই তিনি অফিসের ৯ টা ৫ টার ছকে জীবনকে বেঁধে রাখলেন না।

জুঁই স্বপ্ন দেখেন সমাজের অবহেলিত নারীদের নিয়ে কিছু করার। তারা স্বনির্ভর হবে, মাথা তুলে দাঁড়াবে। তাই চাকরি ছেড়ে শুরু করেন স্বপ্নের বাস্তবায়ন। নিজ হাতে নারীদের জন্য গড়ে তুলেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

রাজধানীর জুরাইনের মুরাদপুর এলাকায় ‘নকশী কাঁথা’ নামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন জুঁই। এখান থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী করতে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জুঁই। এছাড়া তিনি বিভিন্ন এনজিও ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।

ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার নারী। তাদের অধিকাংশই এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনে কর্মরত।

নিজের কর্মের কিছু স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা। ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০১২’ ছাড়াও পেয়েছেন বেশকিছু বেসরকারি পুরস্কার।

সম্প্রতি তিনি প্রতিষ্ঠান ও পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনকে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন: কেমন আছেন?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: ধন্যবাদ, অনেক ভাল আছি।

একুশে টিভি অনলাইন: চাকরি ছেড়ে আপনি কেন উদ্যোক্তা হলেন? 

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি শুরু করি ব্র্যাকে। কিন্তু চাকরি আমাকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি। স্বপ্ন ছিলো দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে কাজ করব। স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিসিক থেকে ছোট-খাটো অনেক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নারীর কর্মসংস্থানের লক্ষে ‘নকশী কাঁথা’ গড়ে তোলি। এটি বর্তমানে সরকার অনুমোদিত নারীদের আত্মকর্মসংস্থান কেন্দ্র।

একুশে টিভি অনলাইন: কাজের শুরুতে বাধা-বিপত্তি এসেছে কি না?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: আমরা যারা (নারী) ব্যবসায় এসেছি তাদেরকে সমাজে অনেক ফাইট করে আসতে হয়েছে। তবে আমি পরিবার ও আমার স্বামীর অনুপ্রেরণার মধ্য দিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। এ কাজের মাধ্যমে আমি আমার নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছি, পাশাপাশি অন্য মেয়েদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করছি। এটার মধ্যে আমি আলাদা আনন্দ খুঁজে নিয়েছি।

একুশে টিভি অনলাইন: কেমন পুঁজি নিয়ে আপনি প্রতিষ্ঠান চালু করেন?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: চাকরি ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিই। এ প্রশিক্ষণকে পুঁজি করে মাত্র ৫০হাজার টাকা দিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করি। পাশাপাশি নিজের প্রশিক্ষণের কাজটিও চালিয়ে যাই। রান্না শিখি হোটেল অবকাশ ও শেরাটনে। এভাবে আমার যাত্রা শুরু হয়।

একুশে টিভি অনলাইন: নকশী কাঁথায় কি কি বিষয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: এখানে দেশি-বিদেশি ব্লক, বাটিক, নকশি কাঁথা সেলাইয়ের কাজ, হাজার বুটিক, জাপানি টাইডাই, পাটের ব্যাগ, মোম, মোমের শোপিস তৈরি, রঙের কাজ, এমব্রয়ডারি, কাপড় কাটিং ও বিভিন্ন ফেলনা সামগ্রী দিয়ে খেলনা তৈরির কাজ শেখানো হয়। পাশাপাশি দেওয়া হয় দেশি-বিদেশি রান্নার প্রশিক্ষণ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদিনই সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন নারীরা।

একুশে টিভি অনলাইন:এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য কি ধরনের যোগ্যতা লাগে?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: এখানে যেকোনো নারীই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বছরের শুরুতে ও ৪মাস পর নতুন শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। এমনকি পিছিয়ে পড়া নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত নারীও এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

একুশে টিভি অনলাইন: বর্তমানে নিজের প্রতিষ্ঠানের বাইরে আর কিছু করছেন কী না?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: বর্তমানে আমি নিজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা ছাড়াও মাস্টার ইনস্ট্রাকটর হিসেবে ব্র্যাক, আহসানিয়া মিশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, উদ্দীপন, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কারিতাস, এসএসই, এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন সংস্থায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

একুশে টিভি অনলাইন: সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: পরিকল্পনা তো অনেক বড়। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী কিন্তু তারা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তেমন কোনো প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান নি। আমার মনে হয় স্কুল-কলেজে কারিগরি ট্রেনিংটা বাধ্যতামূলকভাবে করানো দরকার। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যদি কারিগরি কাজ শেখেন, তাহলে লেখাপড়া শেষ না করতে পারলেও কারো জন্য কাজের অভাব হবে না। দেশে কিংবা বিদেশে যাওয়ার জন্যেও তৈরি হয়ে যাবে দক্ষ জনশক্তি। বিশেষ করে মফস্বল শহরের অভাবী পিতামাতার সন্তানরা আর বাল্যবিয়ে কিংবা যৌতুকের নির্যাতনের শিকার হবেন না।

এখনও অনেক নারী আছেন, যারা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্কুলের বাইরে গল্প করে সময় কাটান। ওই সময়টাকেও যদি তারা কাজে লাগাত, তাহলে দেশটার আরও উন্নতি হতো। এই বিষয়গুলোতে নারীদের সচেতন করা প্রয়োজন। নিজে স্বাবলম্বী হওয়া, নিজের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা খুবই জরুরি।

একুশে টিভি অনলাইন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: পিছিয়ে পড়া নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে আমার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। এক্ষেত্রে সরকার বা বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি দেশকে অনেক ভালো কিছু উপহার দিতে পারতাম।

একুশে টিভি অনলাইন: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

জেসমিনা সুরুজ জুঁই: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।

/ এএ / এআর

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি