ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উঠে এলো সেরা পরিবেশবান্ধব সমাধান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৬, ১৩ মার্চ ২০২৪

সম্প্রতি, রাজধানীর হোটেল বেঙ্গল ক্যানারি পার্কে আয়োজিত হয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের “বিল্ডিং এজেন্সি ফর ইয়ুথ ইন ক্লাইমেট অ্যাকশন” কার্যক্রমের আওতাধীন “অ্যাকসেলারেটিং গ্রিন ইনোভেশন থ্রু ইয়ুথ অন্টারপ্রনারশিপ”র (এগিয়ে ২.০) গ্র্যান্ড ফিনালে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সাথে যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই)। আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।

“এগিয়ে” মূলত ব্রিটিশ কাউন্সিলের “বিল্ডিং এজেন্সি ফর ইয়ুথ ইন ক্লাইমেট অ্যাকশন” কার্যক্রমের একটি অংশ, যা টেকসই জীবিকা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং জলবায়ুগত ঝুঁকির মুখে থাকা সমাজ ও সম্প্রদায়ের মানুষদের টিকে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। 

এগিয়ে ২.০’র প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবসার পরিকল্পনা জমাদানের জন্য উন্মুক্ত আহ্বান জানানো হয়, যার মাধ্যমে ১৩৫টি পরিবেশবান্ধব ব্যবসার ধারণা (গ্রিন বিজনেস আইডিয়া) জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে পরবর্তীতে সেরা ২০টি ব্যবসার ধারণা জমাদানকারী সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের নিয়ে ৯-১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়োজিত হয় “গ্রিন অনট্রেপ্রনারশিপ বুটক্যাম্প” (জিইবি)। খুলনায় আয়োজিত এই বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীদেরকে পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশগত পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পাশাপাশি বিপণন, বন্টন, ও অর্থ সংস্থান সহ নানা ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর প্রশিক্ষণ দান করা হয় ও প্রাসঙ্গিক দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে শীর্ষ ১০টি আইডিয়া আয়োজনের গ্র্যান্ড ফিনালে’তে পৌঁছায়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন স্টার্টআপ খাতসংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী ও প্রতিনিধিবৃন্দ, স্বনামধন্য আইএনজিও ও আইজিও’র কর্মকর্তাগণ, এবং বেসরকারি খাতসহ বিভিন্ন খাতের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ।

সেরা আইডিয়াগুলোর কেন্দ্রে ছিল দেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলার বৈশিষ্ট্য ও প্রাসঙ্গিকতা, যার মধ্য দিয়ে দেশের কুমোর, নানা ঐতিহ্যবাহি শিল্পের কারিগর এবং চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী কৃষকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উন্নত সক্ষমতা তৈরির উদ্দেশ্য ফুটে ওঠে। কয়েকটি আইডিয়ায় প্লাস্টিক ও অন্যান্য অটেকসই উপকরণের জৈবিকভাবে পচনশীল বিকল্প তৈরির পরিবেশগত সুবিধার ওপর জোর দেয়া হয়। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যেও কার্যকরী ব্যবসায় পরিকল্পনার ধারণা দেন শীর্ষ প্রতিযোগিরা। এছাড়াও, তাদের আইডিয়ায় লবণাক্ততার সম্মুখীন অঞ্চলসমূহে সুপেয় পানির অভাব, নিরাপদ খাদ্য সংস্থানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে চূড়ান্ত ১০ প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সেরা ৪টি আইডিয়া বাছাই করেন জুরি প্যানেলের বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী। বিভিন্ন শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত জুরি প্যানেলের বিবেচনায় নির্বাচিত এই ৪টি ব্যবসায় ধারণাকে বাস্তব রূপদান ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে সিড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থায়ন ও দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। জুরি প্যানেলের সদস্য হিসেবে ছিলেন লাইটক্যাসেল পার্টনার্স এর সিইও বিজন ইসলাম; ফিউচার স্টার্টআপের সিইও রুহুল কাদের; বিকাশ ও ব্র্যাক ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস’এর সদস্য ফাহিমা চৌধুরী; ইউবিআইএনআইজি’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফরিদা আক্তার; এবং জেডএ ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজরি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাকিবুল ইসলাম।

আয়োজনে মোহাম্মদ আজিজুল হকের “ইকোকাটলার”, ফারহা বিনতে ফিরোজের “থার্স্ট রিলিফ”, ফারহান বিন হাবিবের “নিরাপদ শুঁটকি ঘর” এবং মালবিকা দীপান্বিতা রয়ভেলির “গুণবতী” শীর্ষক ব্যবসায় আইডিয়া গুলো যথাক্রমে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্থান অর্জন করে।

“ইকোকাটলার” প্লাস্টিকের ছুরি-চামচের বিকল্প হিসেবে বাঁশ, কাঠ, পাটের খড়ি, এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য বাঁশের খড়ের ব্যবহার উৎসাহিত করে। “থার্স্ট রিলিফ” লবণাক্ততা-প্রবণ উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের পানি বিশুদ্ধীকরণের প্রস্তাবনা রাখে। “নিরাপদ শুঁটকি ঘর” রাসায়নিকমুক্ত উপায়ে শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়নের সুযোগ তৈরি করে। “গুণবতী” কারুশিল্পকে প্লাস্টিকের পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পের কারিগরদের ক্ষমতায়নে কাজ করে।

বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস ডেভিড নক্স আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করেন। তার বক্তব্যে জনমিতিক লভ্যাংশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি জলবায়ু-সচেতন যুবপ্রজন্ম গড়ে তোলা এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় উদ্যোগ সমূহ আরো উৎসাহিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ধারাবাহিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।

বাংলাদেশের নানাবিধ সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান উপস্থাপন করায় জুরি প্যানেলের অন্যতম সদস্য ফাহিমা চৌধুরী শীর্ষ ১০টি আইডিয়ার প্রশংসা করেন। এগিয়ে’র মতো কার্যক্রম কীভাবে তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে তারা কীভাবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সুযোগ অনুসন্ধান করতে পারেন – সে প্রসঙ্গে জোর দেন ফাহিমা চৌধুরী।

বিওয়াইইআই-এর কো-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সৈয়দ মুনতাসির রিদওয়ান প্রান্তিক সমাজের তরুণদের মধ্যে নিহিত অপার সম্ভাবনার উল্লেখ করে বলেন, “ব্যবসায় উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনীকে কাজে লাগিয়ে তারা তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনীতি এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতায় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থার প্রয়োজন”।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি