ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

রোজা পালনে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলে

প্রকাশিত : ২২:২৬, ১৩ জুন ২০১৮ | আপডেট: ২৩:২৬, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

অনেকে মনে করতে পারেন রোজা থাকলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। বরং রোজা পালনে বেশ কিছু রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোজা তারুণ্যকে ধরে রাখে, ব্যায়ামের চেয়েও বেশি কাজ দেয় এবং সেই সঙ্গে কমায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্চ অ্যাটাকের ঝুঁকি। গবেষণায় জানা গেছে, এসব তথ্য। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের ধারণা ছিল, কম ক্যালরি খেতে থাকলে মানুষ বোধহয় অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত ভরপেট খাওয়ার চেয়ে মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকাটা বরং সুস্বাস্থ্যের জন্যে বেশি সহায়ক।

বছর ‍দুয়েক আগে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিং-এর নিউরোসায়েন্টিক ড. মার্ক ম্যাটসন ও তার সহকর্মীদের প্রকাশিত একটি গবেষণা-প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকলে মাস্তিষ্কের বয়স জনিত রোগ যেমন: আলঝেইমার, হান্টিংটন, পার্কিনসন্স ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তারা বলেন, উপবাসের ফলে দেহে এমন কিছু প্রোটিন উৎপন্ন হয়, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেশন জনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। উপরন্তু বাড়িয়ে দেয় স্নায়ু কোষের কার্যকারিতা। ফলে মস্তিষ্কের ক্ষয় হয় অনেক কম।

রোজা রাখলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। ম্যাটসন বলেন, নিয়মিত খাওয়া দাওয়া মানে দেহ কোষগুলোতে ইনসুলিনের নিরন্তর সরবরাহ। এভাবে চলতে থাকলে দেহ কোষগুলোর সক্রিয়তা ও কাজের প্রয়োজন কমতে থাকে। একসময় তৃপ্ত ও অলস এই দেহ কোষগুলো হয়ে উঠে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বা ইনসুলিন প্রতিরোধী। অর্থাৎ এদের ওপর ইনসুলিনের প্রভাব কমে আসে ধীরে ধীরে। আর এটাই ডায়াবেটিসের লক্ষণ। কিন্তু মাঝে মাঝে কিংবা নিয়মিত বিরতিতে খাওয়া বন্ধ থাকলে শরীরের সর্বত্রই দেহকোষগুলো আরও ইনসুলিন সংবেদনশীল হয়ে উঠে, ইনসুলিনের প্রভাবে ভালোভাবে সাড়া দিতে পারে। এবং বিপাক করতে পারে দক্ষভাবে। এর ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমার সঙ্গে সঙ্গে কমে উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও।

তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই কঠোরভাবে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণের চেয়েও অনেক ভালো ফল দিতে পারে যে অভ্যাসটি সেটি হলো, স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে নির্দিষ্ট সময়ের উপবাস। আসলে শরীরের জন্যে কিছু সময়ের এই ক্ষুধা বোধের উপকারিতার মূল সূত্রিটি নিহিত রয়েছে আমাদের ডিএনএ-র মধ্যেই।

প্রাচীনকালে আমাদের পূর্বপুরুষরা পশু শিকার করে খাবার যোগাড় করতো। এভাবে একবেলা খাওয়ার পর পরবর্তী শিকার না পাওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে হতো। আর এই ক্ষুধা–অনাহারের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে টিকে থাকার একটি সহজাত ক্ষমতা আমাদের দেহে সঞ্চারিত হয়েছে বিবর্তন-প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

কিন্তু আধুনিক মানুষকে তো খাবারের জন্যে না করতে হয় শিকার, না করতে হয় কোনো রকম অপেক্ষা। এখন ঘরে খাবার, ফ্রিজে খাবার, তা-ও না থাকলে হোটেল-রেস্তোরাঁ-দোকানপাট তো আছেই। ফলে আনাহারের কষ্ট থেকে আমরা বেঁচেছি বটে, কিন্তু সঙ্গী করেছি অন্য ঝুঁকিকে। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কয়েক ঘণ্টা পর পর নিয়মিত খাওয়া দাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মান দীর্ঘসময় ধরে উঁচু থাকে। দেহে বিভিন্ন কাজের জন্যে দরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি বা শক্তি আর সেই শক্তি উৎপাদনের জন্যে দৈনন্দিন খাবার থেকে প্রাপ্ত শর্করাকে বিপাক হতে হয়। এই বিপাকের একটি উপজাত হলো অক্সিডেশন বা জারণ,যার ফলে দেহে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু। এবং এর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো-এটি বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, শরীরকে বুড়িয়ে দেয়।

ড. ম্যাটসন বলেছেন, উপবাস এই প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দেয়। আনাহারের ফলে দেহে যে সাময়িক শক্তি-সংকট হয় তা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয়, যা উদ্বেগকর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার শক্তি যোগায়, এমনকি তখন নতুন ব্রেন সেল বা নিউরোনও জন্মাতে পারে। আর পুরো দেহেই ইনসুলিন ছড়িয়ে পেড়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায়।

এজন্যেই হয়তো বলা হয় যে, মানুষ না খেয়ে মরে না বরং কখনো কখনো অতি পুষ্টিই বিপদ ডেকে আনে। তাই নিজ নিজ ধর্মমতে রোজা বা উপবাস পালন করুন। আর ইফতারে খান পরিমিত ও সহজপাচ্য খাবার। আপনার সুস্থ কর্মময় দীর্ঘ জীবনের সম্ভাবনা তাতে বাড়বে।

তথ্যসূত্র: হেলথ এন্ড নিউট্রিশন, টাইম ম্যাগাজিন।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি