বই, বইয়ের মেলা
প্রকাশিত : ০০:০৫, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২০:২২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
![](https://www.ekushey-tv.com/media/imgAll/2018January/IQBAL-INNER20180208120557.jpg)
পৃথিবীতে যত রকমের মেলা হতে পারে তার মধ্যে সবচেযে সুন্দর মেলা হচ্ছে বইমেলা। আমার ধারণা, পৃথিবীতে যত বইমেলা আছে তার মাঝে সবচেয়ে মধুর বইমেলা হচ্ছে আমাদের ফেব্রুয়ারি বই মেলা। কোনো কিছু না করে বইমেলার এক কোনায় চুপচাপ বসে থেকে শুধু মেলার মানুষকে দেখে আমি আমার একটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। মেলায় গুরুগম্ভীর বয়স্ক মানুষ যায়, কম বয়সী তরুণ-তরুণী যায়, বাবা মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যায়, প্রত্যেকের ভাবভঙ্গি, চাল-চলন আলাদা। কেউ বই কেনে, কেউ বই দেখে আবার কেউ শুধু ঘুরে বেড়ায়। এই অতি চমৎকার বইমেলাটি সোহরাওর্য়াদী উদ্যানে শুরু হয়েছে, আমি সিলেটে বসে আছি, লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপেক্ষা করছি কবে বই মেলায় যাব।
গতবার বই মেলায় গিয়ে অবশ্য আমার এক ধরনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বাচ্চা-কাচ্চার জন্যে বই লিখি বলে আমাকে এক সময় প্রচুর অটোগ্রাফ দিতে হতো। কমবয়সী ছেলেমেয়েরা বই নিয়ে ভীড়ের মধ্য দিয়ে মেলায় আসতো। এখনও ভীড় করে আসে, কিন্তু তাদের হাতে এখন কোনো বই নেই, তার বদলে আছে একটা স্মার্ট ফোন। সেই ফোন দিয়ে তারা সেলফি তুলতে থাকে। সেলফি বা ছবি তোলার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই; কিন্তু বই মেলায় বইয়ের ওপর আটোগ্রাফ না নিয়ে শুধু একটা সেলফি তুলে সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলে আমি একটু অস্বস্তি বোধ করি। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা ফেসবুকের যুগেও আমি সাংঘাতিকভাবে বইপন্থী মানুষ। যতই দিন যাচ্ছে আমি ততই বেশী বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, একটা মানুষকে পরিপূর্ণ হতে হলে তাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে।
আমার ধারণা মানুষ, আর পশুপাখীর মাঝে বসচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে মানুষ বিমূর্ত চিন্তা করতে পারে, পশুপাখী পারে না। যতরকম বিমূর্ত চিন্তা আছে তার মাঝে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে বই পড়া। কাজেই কেউ যেন মনে না করে বই পড়া শুধু এক ধরণের বিনোদন। এটি তার থেকেও অনেক বড় একটি ব্যাপার। আমাদের একমাত্র সম্পদ হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক। সেই মাস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ব্যায়াম হতে পারে বই পড়া। মাস্তিষ্ককে শাণিত করার জন্য এর থেকে কার্যকর আর কিছু হতে পারে না। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক জাতীয় আপদের প্রবল আক্রমণের সামনে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ হতে পারে বই। তাই আমার মনে হয় রীতিমত যুদ্ধ করে হলেও আমাদের সবাইকে বইয়ের জগতে নিয়ে যেতে হবে। সেই জন্যে ফেব্রুয়ারির বই মেলা দেখে আমি এতো উত্তেজিত হয়ে যাই।
২.
এবারের বই মেলায় আমার জন্যে একটা অত্যন্ত চমকপ্রদ ব্যাপার ঘটেছে। সেটা হচ্ছে, সায়েন্স ফিকশন ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেয়া।
দিন দশেক আগে আমি কোলকাতা গিয়েছিলাম। সেখানে খুব জাঁকজমক করে কোলকাতা লিট ফেস্টিভেল হয়। সেখানে থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পরাবাস্তব লেখার জন্যে। মঞ্চে আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পাশে বসেছিলাম, সেটি আমার জন্যে অনেক বড় একটি অভিজ্ঞতা। সেখানে আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশান লেখালেখি নিয়ে জানতে চেয়েছিল। আমি অনেক জোর গলায় বলে এসেছি বাংলাদেশের পাঠক নিশ্চয়ই সায়েন্স ফিকশন পড়তে খুব পছন্দ করে, কারণ আমাদের দেশে অনেক সায়েন্স ফিকশান লেখক। শুধু তাই নয়, তারা একটা সোসাইটি করেছেন এবং বই মেলায় তারা র্যালি করে গিয়ে দলবেঁধে এক সাথে সায়েন্স ফিকশান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
তবে কোলকাতার মানুষদের যেটা বলিনি, সেটা হচ্ছে দেশের সাহিত্যের মূল ধারার মানুষরা সায়েন্স ফিকশানকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। সবাই ধরেই নেয়, সাহিত্যের কিছু সম্ভ্রান্ত এলাকা আছে যারা সেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে পারে তারাই প্রকৃত সাহিত্যিক। অন্যরা লেখক, দলীল লেখক কিংবা সায়েন্স ফিকশান লেখকের মাঝে বড় কোনো পার্থক্য নেই। আজকাল অনেক রকম সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। নবীন লেখকদের বেলায় কখনো একজন সায়েন্স ফিকশান লেখককে বেছে নিতে দেখিনি। যাদিও অনেকেই আছেন যারা খুব চমৎকারলেখেন।
এরকম একটা অবস্থায় যদি হঠাৎ করে আবিষ্কার করি বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারের মত গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার সায়েন্সফিকশন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়েছে, তাহলে অবশ্যই আনন্দিত হওয়ার কারণ আছে। মনে হচ্ছ সাহিত্যের জগৎটা কাটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা ছিল। শুধু সম্ভ্রান্ত কিছু মানুষ সেখানে যেতে পারেন। হঠাৎকরে কাটাতার তুলেদিয়ে সেখানে অন্যদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। সায়েন্স ফিকশান লেখক ঢুকেছেন তাদের পিছুপিছু। ভৌতিক গল্প লেখকরাও ঢুকে যাবেন, তার পিছু পিছু রহস্য উপন্যাসের লেখক এবং সবার শেষে শিশু সাহিত্যিকেরা।
এই বছর সায়েন্স ফিকশানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মোশতাক আহমেদ, তাঁকে আমি অনেকদিন থেকে চিনি। চেনা মানুষ পুরস্কার পেলে আনন্দ বেশি হয়। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশদের অবদান নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, বইটির নাম নক্ষত্রের রাজারবাগ। মোশতাক আহমেদ আমাকে অনুরোধ করেছিলেন বইটির মোড়ক উন্মোচন করে দিতে এবং আমি অনন্দের সাথে রাজি হয়েছিলাম। কোনো একটা কারণে নির্দিষ্ট সময়ে মোশতাক আহমেদ জরুরি কাজে আটকে পড়ে গেলেন এবং বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হলো না। আমি সেদিনই ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছি।
পরদিন ভোরে আমি অফিসে গিয়েছি, গিয়ে দেখি মোশতাক আহমেদ আমার অফিসের সামনে অপেক্ষা করছেন তার হাতে রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো একটি বই। আমাকে বললেন বইটির মোড়ক উন্মোচন করানোর জন্যে তিনি রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেটে চলে এসেছেন। তিনি ঠিক করেছিলেন আমাকে দিয়ে মোড়ক উন্মোচন করাবেন, কাজেই সেটি তিনি করে ছাড়বেন। আমি সব সময়েই দেখে এসেছি মোড়ক উন্মোচন হয় দশ জনের সামনে, রীতিমত একটা অনন্দঘন অনুষ্ঠান। কিন্তু নক্ষত্রের রাজারবাগ মোড়ক উন্মোচনটি হলো আমার অফিসে। আমি আর মোশতাক আহমেদ ছাড়া কেউ নেই। আমি মোড়কটি উন্মোচন করলাম, তিনি আমার হতে বইটি তুলে দিয়ে তক্ষুণি ছুটলেন ঢাকা। আমার জীবনে এর চাইতে বিচিত্র মোড়ক উন্মোচন আর কখনো হয়নি, মনে হয় আর কখনো হবে না। ২০১২ সালে এই বইটি যখন কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিল তখন আমার চাইতে বেশি খুশী মনে হয় আর কেউ হয়নি।
৩.
আমি প্রতি বছরই ভাবি বই মেলায় আসা কয়েকজন নূতন লেখকের বই নিয়ে কিছু লিখব; কিন্তু কখনো সেটি ঠিক করে করতে পারিনি। এই বছরেও সেটি করা হলো না, কারণ মেলায় আসা তিন লেখকের বইগুলো খুজেঁ পড়তে পারিনি। বইটি পড়া হয়নি, কিন্তু বই মেলায় গিয়ে যে বইটি কিনবো বলে ঠিক করে রেখেছি, সে বইটি নিয়ে দু’একটা লাইন অন্তত লিখি।
দুই বছর আগে একজন মা আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছিল। তার শিশু সন্তানটি কোনো একটি রক্তজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। অপ্রতিরোধ্য শোকে দিশেহারা হয়ে সেই মা শিশুটির শেষ কয়েকটি দিনের কথা লিখে আমাকে অনুরোধ করেছিল যদি সম্ভব হয়, তাহলে আমি যেন এই ধরনের শিশুদের নিয়ে কিছু একটা লিখি। একজন লেখক যখন কোনো গল্প বা উপন্যাস লিখে সেটি পড়ে অনেক সময়েই আমরা ব্যাকুল হয়ে যাই, কখনো কখনো সেই কাল্পনিক চরিত্রের দু;খ কাষ্টে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু বই পড়া শেষ হলে আমরা চোখ মুছে হাসি মুখে নিজের কাজে ফিরে যাই, কারণ আমরা জানি আমাদের দুঃখটি সত্যিকারের দুঃখ নয়, কারণ চরিত্রগুলো কাল্পনিক।
কিন্তু একজন মা যখন তার শিশু সন্তানদের জীবনের শেষ মুহূর্তের ঘটনাগুলো গভীর মমতা দিয়ে লিখে পাঠান সেটি পড়ে চোখ মুছে আবার হাসি মুখে নিজের কাজে ফিরে যাওয়া যায় না। কারণ বুকের ভেতর কোথায় জানি ব্যাথা টন টন করতে থাকে।
আমি এরকম মৃত্যুপথযাত্রী কিন্তু প্রানোচ্ছল হাসিখুশী একটি শিশুকে নিয়ে লিখতে পারব বলে মনে হয় না। তাই আমি ভাবছিলাম ওই মাকে চিঠি লিখে বলবো, তোমার এই অচিন্তনীয় কষ্টের কথাটুকু নিজেই কষ্ট করে লিখো। তোমার মত অন্য যারা আছে তারা হয়তো তোমার লেখাটি থেকেই সান্ত্বনা পাবে। আমি তার সাথে যোগাযোগ করার আগেই সেই কমবয়সী মা আমাকে লিখে জানালো সে বুকে পাথর বেধে কাহিনীটি লিখেছে। সে একা নয় তার মতো আরো যারা দুর্ভাগা মা রয়েছেন তারাও লিখেছেন। এই বইটি দিয়ে তারা এরকম অসহায় মাদের নামে একটা যোগসূত্র তৈরি করতে চাইছে যেন শেষ মুহূর্তে তাদের সন্তানেরা সত্যিকার চিকিৎসা পেতে পারে। সম্ভব হলে শিশুটিকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।
বই মেলায় গিয়ে আমি বইটি কিনব। বইটির নাম “ওরা নেই, ওরা আছে”। শোকাতুর মায়ের নাম সায়মা সাদিক সুমী। প্রকাশনীর নাম সখী প্রকাশন।
৪.
এই বছর বইমেলা গিয়ে আমি আরো একটি বই সংগ্রহ করব কিন্তু আমি মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত, সেই বইটি আমি নেড়ে চেড়ে দেখব, চোখ বোলাব কিন্তু পড়ার সাহস পাব না। বইটির নাম “বীরাঙ্গনা রচনা সমগ্র” লেখিকার নাম সুরমা জাহিদ, প্রকাশকের নাম অন্বেষা। সুরমা জাহিদ এবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখার জন্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এর চাইতে যথার্থ পুরস্কার আর কিছু হতে পারে কি না তা আমার জানা নেই।
সুরমা জাহিদের জন্ম ১৯৭০ সালে, একাত্তরে তিনি একজন অবোধ শিশু ছিলেন তরপরও একাত্তর সালের বীরাঙ্গনাদের জন্যে তার ভেতরে একধরণের গভীর মমতা রয়েছে। সেই মমতা এবং ভালোবাসায় তিনি বীরাঙ্গনাদের নিয়ে সাতটি বই লিখেছেন। সেই বইগুলো সংকলিত করে পঞ্চান্নটি ভিন্ন ভিন্ন জেলার মোট ৩৬১ জন বীরাঙ্গনাকে নিয়ে “বীরাঙ্গনা রচনা সমগ্র’ বইটি দাঁড় করিয়েছেন। একদিকে মানুষের নিষ্ঠুরতা, অন্যদিকে নারীদের দু:খ কষ্ট এবং বেদনার ইতিহাসের এর চাইতে বড় কোনো দলীল আছে বলে আমার জানা নেই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার আছে। সেখানে আমরা সুরমা জাহিদের বীরাঙ্গনাদের উপর লেখা বইগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো ইতিহাস আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। কিন্তু তারপরও সুরমা জাহিদের লেখা এই বইগুলো আমি পড়তে পারি না। বুকের ভেতর এক ধরণের রক্তক্ষরণ হয়।
তারপরও আমি হৃদয়ের রক্তক্ষরণের এই বইটি বইমেলা থেকে সংগ্রহ করব।
৫.
বই মেলা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি এবারে সম্পূ্র্ণ ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে লিখি। সেটি হচ্ছে নূতন লেখক এবং তাদের প্রকাশিত বই।
আমি মোটেও জানতাম না যে, আমাদের বই মেলায় নতুন লেখকরা যে বই প্রকাশ করেন, সে বইগুলো তারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে ছাপান। বিষয়টি জানার পর আমি প্রকাশকদের সাথে কথা বলেছি, তারা আমাকে জানিয়েছেন বই মেলায় প্রকাশিত শতকরা সত্তর থেকে আশি ভাগ বই নাকি এরকম নিজের পকেটের টাকায় ছাপানো বই। অন্যরা বলেছেন সংখ্যাটি নাকি আরো বড়।
যদি একজন লেখক নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কোনো একজন প্রকাশককে দিয়ে তার বই বের করেন তাহলে সেই প্রকাশককে “প্রকাশক” বলা যাবে না, তাকে “মুদ্রক” বা এই ধরনের কিছু বলতে হবে। প্রকাশক তিনি, যিনি কোনো একজন লেখক গবেষকের কাজটুকু নিজের দায়িত্বে পাঠকদের সামনে তুলে ধরবেন। সেই কাজটুকু করার জন্যে তার যদি অর্থের প্রয়োজন হয় সেই অর্থটুকু প্রকাশকের নিজের জোগার করতে হবে। যদি প্রকাশকের সেই অর্থ না থাকে তাহলে তার জন্যে নয়। তাকে অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিতে হবে।
ঠিক একইভাবে নূতন লেখকের জন্যেও বলতে হবে যদি কোনো লেখক নিজের পাকেটের টাকা দিয়ে একটা বই প্রকাশ করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে তার বইটি এখনো প্রকাশের উপযোগী হয়ে উঠেনি। কেউ যদি সত্যি লেখালেখি করতে চায় তাহলে তাকে কোনো ভাবেই নিজের টাকা নিয়ে বই প্রকাশ করা চলবে না। এটি এক ধরণের অসম্মান। একজন সত্যিকারের লেখক কোনোভাবেই নিজেকে অসম্মানিত করতে পারে না।
নূতন লেখাকদের সবসময়ই বলতে শোনা যায় তারা নূতন লেখক, বলে তাদের লেখা ছাপাতে চায় না। এই অভিজ্ঞতাটি অনেক পুরানো, মানিক বন্দোপাধ্যায় সেটি মানতে রাজি ছিলেন না, তার বন্ধুদের বলেছিলেন অভিযোগটি সত্যি নয়, ভালো লেখক হলেই ছাপা হবে। শুধু তাই না বন্ধুদের সাথে বাজী ধরে একেবারেই অপরিচিত নূতন লেখক হিসেবে তিনি “অতসী মামী” নামে একটি গল্প লেখে সেই সময়কার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ম্যাগাজিনে ছাপিয়ে ছিলেন। মনিক বন্দোপাধ্যায়ের মত উদাহরণ আমাদের দেশেও অনেক আছে। সবচেয়ে বড় কথা এখন যারা প্রতিষ্ঠিত লেখক তারা সবাই এক সময় নূতন লেখক ছিলেন, অপরিচিত লেখক ছিলেন। কাজেই নূতন লেখককে কেউ গুরুত্ব দেয় না সেই অভিযোগটি আমি শুনতে রাজি নই।
এখন ইন্টারনেট এবং ব্লগ আছে, কাজেই নূতন লেখকেরা সেখানে লেখালেখি করতে পারেন। সেখানে বুঝতে পারবেন তার লেখালেখি কতোটুকু মান সম্মত হয়েছে। যদি লেখক হিসেবে তার একটা পরিচিতি হয় তখন প্রকাশকেরা আনন্দের সাথে তার বই ছাপতে রাজি হবেন।
আমি মনে করি প্রতিষ্ঠিত লেখক, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক তাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদেরকে সবসময় ভালো তরুণ লেখকের খোঁজ করতে হবে। যদি কাউকে খুঁজে পান তাকে দশজনের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। বই মেলার আগেই যদি করা যেতো তাহলে আরো ভালো হতো। নূতন ভালো লেখকের অনুপ্রেরণা পেতেন উৎসাহপেতেন।
আমাদের এতো সুন্দর একটা বই মেলা সেটা শুধু বই ছাপানোর মাঝে আটকে থাকবে সেটা তো হতে পারে না, পাঠক প্রকাশক লেখক মিলে বই মেলায় সত্যিকারের যে উদ্দেশ্য সেটাকেও তো সত্যি করে তুলতে হবে।
এমএইচ/টিকে