ঢাকা, বুধবার   ১৪ মে ২০২৫

ঢাকায় জারের পানির ৯৭ শতাংশই দূষিত (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৫, ৫ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪৮, ৫ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

পৃথিবীতে উদ্ভিত ও প্রাণী বেচেঁ থাকার জন্য যেমন পানি প্রয়োজন তেমনি মানুষের সুস্থ থাকার জন্য জীবাণুমুক্ত সুপেয় পানির কোনো বিকল্প নাই। বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা পেতে রাজধানীরবাসীর নির্ভর করছে জার ও বোতলজাত পানির উপর।

কিন্তু রাজধানীর জারের পানির নামে যে পানি বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। জার বা বোতলজাত পানিতেই দেখা মিলছে মারাত্মক ক্ষতিকর জীবাণুর! জীবাণুযুক্ত ও মানহীন জারের পানিতে সয়লাব রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা।

দেদারসে ৪০ হইতে ৫০ টাকায় বিক্রি এসব দূষিত পানির জার। আর সরল বিশ্বাসে রাজধানীর মানুষ এসব পানি কিনে পান করছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা ৯৭ শতাংশ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু কলিফর্ম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টি ব্র্যান্ডের সরবরাহ করা বোতলজাত ও জারে ভরা পানির ২৫০টি নমুনা সংগ্রহ করিয়া গবেষকরা দেখেছেন, সংগ্রহ করা নমুনাসমূহে বিপজ্জনক মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে টোটাল ও ফেকাল কলিফর্ম জীবাণু। টোটাল কলিফর্ম পরিমাপে পানিতে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্রে উপস্থিত অণুজীব ও মলমূত্র দিয়ে দূষণের সম্মিলিত মান পাওয়া যায়। আর ফেকাল কলিফর্ম মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্র ও মলমূত্রের দ্বারা দূষণের মাত্রাকে নির্দেশ করে।

গবেষকরা দেখিয়েছেন, পানিতে টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্মের পরিমাণ শূন্য থাকিবার কথা থাকিলেও ৯৭ শতাংশ জারের পানিতে দু’টিরই উপস্থিতি রয়েছে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রায়। তাছাড়া, স্ট্যান্ডার্ড মান অনুযায়ী পানিতে নাইট্রেট, লিড, ক্রোমিয়াম ও আয়রন থাকবে না। কিন্তু নমুনা জারের পানিতে এসবেরও দেখা মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট গবেষকরা মনে করেন, স্যুয়ারেজ লাইনে ছিদ্রসহ বিভিন্নভাবে ওয়াসার পানিতে মলমূত্রের জীবাণু মিশে থাকে। আর সেই পানিই নামমাত্র শোধন করিয়া বা শোধন ছাড়াই জারে ভরে বা বোতলজাত করে বিক্রি হচ্ছে।

সরজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছে এসব পানি। এমনকি কোনো কোম্পানি এই পানি সরবরাহ করছে তার নাম বা চিহ্নও নেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ এই পানি খাওয়া কারণে বিভিন্ন সময় অসুবিধা সৃষ্টি হয় পেটে। তারা বলছেন, পানিতে বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা থাকে। এমনকি বিভিন্ন টয়লেট থেকে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকেও বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশে বিএসটিআইর অনুমোদিত পানির কারখানা দুই শতাধিক। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। আইন বা নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বাসা বাড়িতে মধ্যে, দোকান ঘর, ওয়াসা বা চাপকলের পানি জারে ভরে বাজারে ছাড়ছে এক শ্রেণীর অতি মুনাফালোভী মানুষ।

রাজধানীর কারওয়াবাজার রেলগেট বাজার গিয়ে দেখা গেছে, বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়ে বসানো হয়েছে একটি পানি সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান। নেই কোন প্রতিষ্ঠানিক নাম। মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়া ওয়াসার পানি জারে ভরে বিক্রি  হচ্ছে।

এদিকে সাবরিনা ডিংকি ওয়াটার কারখানাটি নিয়ন নীতির তোয়াক্কা না করে পানি সরবারহ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারখানাটির মালিক জানান, জায়গা সংকটের কারণে ল্যাবরুম তৈরি করা হয়নি। এমনকি কিছু টাকা নিয়ে বিএসটিআই’র অনুমতি দিয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি। আরকে মিশন রোড়ের ভাইটার ফুট এ্যান্ড বেভারেজের অবস্থা একই রকম।

এদিতে আসমা ড্রিকিং ওয়াটার নামে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা আরও বেগতিক। নেই কোনো ল্যাবও। রাখা হয় না মান নিয়ন্ত্রণের কোনো যন্ত্র। মালিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান বাসার কিছু কাজ বাকি থাকার কারণে এখনও ল্যাব বসানো হয়নি। কিন্তু ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ২ বছর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম একুশে টিভিকে বলেন, পানিতে তো সমস্যা আছেই। বোতল জাত পানিতেও ধরা পড়ে বিভিন্ন সমস্যা। পানির বোতলে লেখা বিভিন্ন উপাদানের বাস্তব মিল পাওয়া যায় না। গবেষণার এই ফল প্রকাশের পরপরই ব্যার ও বিএসটিআই যৌথভাবে শুরু করে অভিযান। কয়েক মাসে প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। বন্ধ করা হয় অন্তত ১৬টি প্রতিষ্ঠান। জরিমানা করা হয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। এছাড়া সাজাও দেয়া হয় কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তাদের। বেশির ভাগ অভিযানেই নেতৃত্ব ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, এসব জারের পানি সরবরাহে ব্যবসায়ীরা কোন নিয়ম মানছেন না। তিনি বলেন, মানহীন পানি সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, পানির মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিদিন পরীক্ষার কথা থাকলেও একদিনও পরীক্ষা করা হচ্ছে না।

 

/ এআর /

 

 

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি