ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অলরাউন্ডার শিক্ষার্থী যেভাবে হবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৮:২৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

(ফাইল ফটো)

(ফাইল ফটো)

শিক্ষাজীবন মানেই হচ্ছে নানান রকম প্রতিযোগিতা এবং পড়াশোনার চাপ। আর তার ওপর পরীক্ষা কাছাকাছি আসলে তো কথাই নেই। প্রজেক্ট শেষ করা, ফাইনাল পেপার তৈরি করা, প্রেজেন্টেশন দেওয়া এবং অবশ্যই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া—সবকিছু মিলিয়ে একটা হুলুস্থুল অবস্থা। এর পাশাপাশি যদি চাকরিজনিত জটিলতা থাকে, তবে প্রশান্ত মন নিয়ে থাকাটা বেশ মুশকিল হয়ে যায়। এ সমস্ত চাপজনিত টেনশনে থেকেও মনকে প্রশান্ত রাখার জন্য করতে পারেন মেডিটেশন। যা আপনাকে সব ধরনের চাপ থেকে দূরে রাখবে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, প্রতিদিনের নিয়মিত মেডিটেশন সব ধরনের মানুষের জন্য, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য দারুন কিছু সুফল বয়ে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে এবং শিক্ষার্থী জীবনটাকে আরও আনন্দপূর্ণ করে তোলে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা। শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন গবেষণা থেকে বেশ চমকপ্রদ ফলাফল পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো :

অঙ্ক ও ইংরেজিতে ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা-
অঙ্ক ও ইংরেজিতে ভালো করতে পারছিল না ক্যালিফোর্নিয়ার এমন ১৮৯ শিক্ষার্থীর ওপর ২০০৯ সালে একটি গবেষণা চালানো হয়। তিন মাস ধরে প্রতিদিন দুবেলা তাদেরকে মেডিটেশন করতে বলা হয়। ফলাফল চমৎকার। দেখা গেল তিন মাস পর এদের মধ্যে ৭৮ জনই শুধু অঙ্ক আর ইংরেজিই নয়, সব বিষয়েই আগের চেয়ে ভালো করছে। বাকিরাও ভালো করছিল তাদের চেয়ে, যারা এই মেডিটেশন প্রোগ্রামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

মানসিক সমস্যার সমাধান এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি-
এটেনসন ডেফিসিট হাইপার-এক্টিভিটি ডিস-অর্ডার হচ্ছে এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ দেখা যায়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে এত বেশি মাত্রায় সিরিয়াসনেস কাজ করে যে, কোনো একটা বিশেষ কাজে তারা মন দিতে পারে না। ফলাফল হলো শুধুই অস্থিরতা। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা এবং মনোযোগ বাড়াতে মেডিটেশন খুবই ভালো একটি প্রক্রিয়া। জার্নাল অফ সাইকোলজিতে এ নিয়ে গত বছরে দারুন একটা লেখা ছাপা হয়েছে । মাধ্যমিক স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। সেখানে তাদের তিন মাস প্রতিদিন দুই বেলা মেডিটেশন করতে বলা হয়েছে। তিন মাস পরে দেখা গেল, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা এবং এই মানসিক রোগের উপসর্গ প্রায় ৫০% কমে গেছে। গবেষকরা আরো দেখেছেন, মেডিটেশন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতা বহুগুণে বাড়িয়েছে।

মানসিক চাপ থেকে মুক্তি-
মানসিক চাপ অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরই একটা বড় সমস্যা। দেখা যায়, ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও মানসিক চাপের কারণে পরীক্ষায় ভালো করতে পারছে না বা নানারকম শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৭ সালে সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ৬৪ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ওপর একটি পরীক্ষা করেন। পরীক্ষাভীতি ছাড়াও নার্ভাসনেস, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মনোযোগ কম ইত্যাদি নানারকম সমস্যা এদের ছিল। তিন মাস নিয়মিত দুবেলা মেডিটেশনের পর দেখা গেল, এদের মনোযোগ, সচেতনতা এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়েছে এবং পরীক্ষার সময়, যখন নাকি সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী থাকে তখনো তারা বেশ রিল্যাক্সড ছিল এবং আগে এসময় যে-সব শারীরিক সমস্যায় তারা ভুগত, এবার আর তা হয়নি।

আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন-
মেডিটেশন যে মস্তিষ্কের কর্মকাঠামোতে পরিবর্তন ঘটায় এটা এখন গবেষণাতেই প্রমাণিত। ২০১০ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওরিগনের ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। এদের মধ্যে ২২ জনকে বাছাই করা হয় মেডিটেশনের ওপর একটা পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেওয়ার জন্যে। বাকিদেরকে শুধু রিলাক্সেশনের মতো হালকা কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে ব্রেন ইমেজিং পরীক্ষা করে দেখা যায়, যারা মেডিটেশনের কোর্সে অংশ নিয়েছে তাদের ব্রেনে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে ব্রেনের যে অংশ আবেগ এবং আচরণকে প্রভাবিত করে, সে অংশে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। যার মানে হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, বিরোধপূর্ণ আচরণে না জড়ানো এবং মানসিক চাপ সামলানো তাদের পক্ষে এখন বেশ সহজ। মজার ব্যাপার হলো, মাত্র ১১ ঘণ্টা মেডিটেশন অনুশীলন করেই তাদের মধ্যে এ পরিবর্তন দেখা গেছে। অন্যদিকে যারা কন্ট্রোল গ্রুপে ছিল, তাদের মধ্যে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি-
ড্রাগ বা মাদকে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা তরুণদের মধ্যেই বেশি। এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আবার শিক্ষার্থী। দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করে তারা সাধারণত মাদকাসক্ত হয় না। এলকোহলিজম ট্রিটমেন্ট কোয়ার্টারলি-তে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, শিক্ষার্থী হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক—মেডিটেশন করলে তাদের সবার মধ্যেই মাদকাসক্তির প্রবণতা কমেছে, কমেছে অসামাজিক আচরণের প্রবণতা এবং এটা সিগারেট থেকে শুরু করে মদ, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি যে-কোনো মাদকের ক্ষেত্রেই সমানভাবে কার্যকরী বলে দেখা গেছে। এমনকি প্রচলিত কাউন্সেলিং বা সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম যা করতে পারেনি, শুধু মেডিটেশন করেই তার চেয়ে তিনগুণ বেশি ফল পাওয়া গেছে।

অনুপস্থিতির হার কমায়-
২০০৩ সালে গবেষক ভার্নন বার্নেস, লিনেট বাউযা এবং ফ্রাংক ট্রিবার কিশোরদের ওপর মেডিটেশনের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করেন। ৪৫ জন আফ্রিকান-আমেরিকান হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হলো। এক গ্রুপ চার মাস ধরে নিয়মিত মেডিটেশন করল। আরেক গ্রুপ কিছুই করল না। গবেষণা শেষে দেখা গেল, যারা মেডিটেশন করেছে তারা ক্লাসে অনুপস্থিত কম ছিল। শিক্ষক বা ক্লাসমেটদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে এবং সবার সঙ্গে সহজভাবে মিশতে পেরেছে। অন্যদিকে যারা মেডিটেশন করেনি, তাদের মধ্যে অস্থিরতা, আবেগের ভারসাম্য না থাকা, সহপাঠীদের সঙ্গে অসহিষ্ণু বা সহিংস আচরণ, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মবিধ্বংসী আচরণও দেখা গিয়েছিল।

সুখানুভূতির অনুরণন এবং আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলা-
মেডিটেশন একজন মানুষের মধ্যে ‘আমি সুখী এবং পরিতৃপ্ত’ এরকম একটা অনুভূতি সৃষ্টি করে। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের একদল গবেষক ৬০ জন ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা করেন। চার মাস নিয়মিত মেডিটেশন করার পর দেখা গেল, আগের চেয়ে তাদের মধ্যে ইতিবাচক আবেগ বেড়েছে, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি এবং মমত্ববোধ বেড়েছে, আত্মমর্যাদাবোধ এবং মানসিক পরিপক্কতা বেড়েছে।

দেহ ও হার্টের সুস্থতা-
মেডিটেশন শিক্ষার্থীদের মনের পাশাপাশি দেহের জন্যও বেশ উপকারী। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, প্রতিদিন মেডিটেশন করলে ব্লাড প্রেসার, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা বেশ কমে যায়। তেমন কোনো বাছবিচার না করে এ গবেষণাটির জন্যে মোট ২৯৮ জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। এদের কেউ কেউ মেডিটেশন করত, কেউ কেউ করত না। কেউ আবার ছিল উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এমন ঝুঁকির সম্মুখীন। তিন মাস পর এদের ব্লাড প্রেসার মাপা হলো, দেখা হলো তাদের মানসিক এবং আবেগের অবস্থা। দেখা গেল, বিশেষত উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকা ছাত্রদের এই ঝুঁকি কমে গেছে প্রায় ৫২ শতাংশ।

বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি-
ছাত্রজীবনে প্রায় সবাই বেশ চিন্তাগ্রস্ত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, একজন শিক্ষার্থী যে সমস্ত চাপ, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতায় ভোগে—তা দূর করার জন্য মেডিটেশন হলো সবচেয়ে ভালো সমধান। চার্লস ড্রিউ ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, যে শিক্ষার্থীরা মেডিটেশন করেছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার উপসর্গগুলো অনেক কমে গেছে। কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম। এমনকি এদের কেউ কেউ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের রোগী পর্যন্ত ছিল।

বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি-
মস্তিষ্ককে শাণিত করার এক চমৎকার মাধ্যম হচ্ছে মেডিটেশন। এজন্যেই বলা হয় নিয়মিত মেডিটেশন করলে বুদ্ধিমত্তা বাড়ে। মহাঋষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন করে হাইস্কুলের স্টুডেন্টদের সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তা বেড়েছে। বেড়েছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। এমনকি বাস্তব বুদ্ধি আইকিউও বেড়েছে মেডিটেশন অনুশীলনের ফলে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে সংগ্রহীত।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি