ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪

আপনার সন্তান বিষণ্নতায় ভুগছে না তো?

প্রকাশিত : ২৩:১৯, ১০ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১২:৪২, ১৪ জুলাই ২০১৯

সহপাঠীদের হাতে অত্যাচারিত হবার কারণে আমেরিকায় প্রতি পাঁচজনে একজন হাইস্কুল ছাত্র আত্মহত্যা করার কথা ভাবে। ৭০% কলেজছাত্র স্বীকার করেছে কখনো না কখনো তারা স্কুলের সহপাঠীদের সাথে প্রতারণা করেছে। আর তিনভাগের একভাগ শিক্ষার্থীই ভুগছে এত মারাত্মক বিষণ্নতায় যে পড়াশোনাসহ অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেয়া তাদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়েছে!

আমেরিকার টিনএজ বয়সীদের মানসিক অবস্থার এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের যে রিপোর্টটিতে, তারই খানিকটা এখানে তুলে ধরা হলো। বলা হয়, সোশাল মিডিয়া আর প্রযুক্তির কারণে সন্তান লালনে বাবা-মায়েদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে গত কয়েক দশকে, তারই ফসল হলো আজকের তরুণপ্রজন্মের এই সেলফি সিনড্রোম। এই নার্সিসিজম বা আত্মপ্রেমরোগ।

অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে মার্কিন যুবসমাজ এখন অনেক বেশি স্বার্থপর আর আত্মকেন্দ্রিক। ৩০ বছর আগেও একজন তরুণ যেমন অন্যের কথা ভাবতো, বড় লক্ষ্যের কথা ভাবতো, এখন আর তা নেই। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, তরুণদের ৫৮% ভাগই এখন বড় হচ্ছে একটা স্বার্থপর আর আত্মকেন্দ্রিকতা নিয়ে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে নার্সিসিজম বা আত্মপ্রেমরোগ বলা যেতে পারে! স্কুলে বুলিং আর ঠকবাজি এবং পরিণামে অসুখী হওয়াই এখন এদের নিয়তি।

মার্কিন এই তরুণ সমাজের হাওয়া যে আমাদের সমাজেও কিছুটা লাগে নি তা নয়। আর এর একটা বড় কারণ হচ্ছে বাবা-মায়েরা এখন সন্তানদের একাডেমিক বা দক্ষতা শিক্ষার দিকে যতটা মনোযোগ দিয়েছেন, তাদের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা এবং সামাজিক শিক্ষা দিচ্ছেন ততটাই কম।

সন্তানকে তারা বড় করছেন পরিবার বিচ্ছিন্ন, সমাজ বিচ্ছিন্ন একটা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হিসেবে। এমনকি ভাইবোনদের মধ্যেও এখন যোগাযোগ বা বন্ধন এত কম যে, অনেক পরিবারে হয়তো খাওয়ার টেবিলেও দেখা হয় না তাদের। যে যার রুমে ঘরবন্দি।

সন্তানকে পরিবারের অংশ করে তুলতে তাই বাবা-মায়েরা কিছু ছোট ছোট করণীয় অনুসরণ করতে পারেন-

১. ছোটবেলা থেকেই তাকে শেয়ার করতে শেখান। অন্য ভাইবোন, কাজিন বা সমবয়সীদের সাথে খেলনা, চকোলেট বা পছন্দের যে-কোনো জিনিস ভাগ করে নিতে শেখান।

২. নিজের কাজগুলো তাকে নিজেকেই করতে দিন। নিজের বই, কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখা, নিজের খাবার নিজে নিয়ে খাওয়া, স্কুলের জন্যে তৈরি হওয়া, গোসল করা ইত্যাদি কাজগুলো যাতে সে নিজে নিজেই করতে পারে, সেভাবে তৈরি করুন।

৩. শুধু নিজের কাজই নয়, ঘরের কাজেও তাকে সাহায্য করতে দিন। সংসারের যে কাজগুলো বাবা-মা হিসেবে আপনাদের করতে হয়, সময়-সুযোগমতো সেসব কাজে তাকেও শরিক করে তুলুন। কষ্ট হবে, পারবে কি না, ইত্যাদি ভেবে এসব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।

৪. একেবারে ছোট থেকেই একা একটা ঘরে থাকার অভ্যাস করতে দেবেন না। অন্য ভাইবোনদের সাথে শেয়ার করতে দিন। বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকেও সে রুমে রাখুন।

৫. সারাক্ষণই মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার অর্থাৎ এ জাতীয় ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে তাকে থাকতে দেবেন না। বরং আপনারা তাকে সময় দিন। তার পছন্দ, শখ এসব নিয়ে গল্প করুন। বেড়াতে নিয়ে যান। পছন্দের কাজে ব্যস্ত রাখুন।

৬. বড় হবার পর একা থাকতে হলেও সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকার অভ্যাস যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৭. বাড়িতে আত্মীয় বন্ধুরা এলে তাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। কারো বাড়িতে গেলে বা কোনো নিমন্ত্রণে গেলে তাদেরকেও সাথে নিয়ে যান।

৮. সারাক্ষণ শুধু পড়া পড়া বা কোচিং, ট্রেনিং ইত্যাদিতে তাকে ব্যস্ত রাখবেন না। কথা বলার সময়ও সারাক্ষণ শুধু এসব নিয়েই কথা বলবেন না। তার সাথে নানান বিষয় নিয়ে গল্প করুন।

৯. নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুসারে সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দান করুন। ধর্মগ্রন্থের মর্মবাণী অনুধাবনে, অনুশীলনে তাকে উদ্বুদ্ধ করুন।

১০. ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে ভালো কাজে, ভালো বা সৎসঙ্ঘের সাথে সম্পৃক্ত করুন। দান, অন্যকে সহযোগিতা, অন্যের প্রতি মমতায় তাকে উদ্বুদ্ধ করুন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি