ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আমাদের শান্তির প্রতিশ্রুতি সর্বাত্মক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৭, ১৪ মার্চ ২০২০

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

কানাডার রাজধানী অটোয়ায় ১৯৭৩ সালের ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, ‘আমরা শান্তির জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 

কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মাত্র সেদিন আমরা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দুর্ভোগ পোহাইয়াছি এবং জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের জন্য বর্বর শক্তির ভয়াবহতার অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছি। সুতরাং, শান্তির জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সর্বাত্মক।’

তিনি বলেন, এই জন্যই আমরা স্থায়ী শান্তি অর্জনের স্বার্থে উপমহাদেশের দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য কোন চেষ্টাই বাকি রাখি নাই। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা সব সময় এই কথাই বলিয়াছি যে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সার্বভৌম ক্ষমতার ভিত্তিতে একসঙ্গে বসিলে সমস্ত অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান করা সম্ভব। দুর্ভাগ্যবশত বাস্তবতা স্বীকারে পাকিস্তানের ব্যর্থতা, সমস্যা সমাধান ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

বঙ্গবন্ধ বলেন, পাকিস্তানে প্রায় ৩ লক্ষ বাঙালিকে আটক রাখার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হইয়াছে। তিনি বলেন যে, দুর্ভাগ্য লোকদের চাকরি হইতে অপসারণ করিয়া চরম দুরবস্থার মধ্যে বন্দি শিবিরে পাঠানো হইয়াছে। তিনি আরও বলেন যে, পাকিস্তানের সংবিধানের এক ধারায় বাংলাদেশের সমগ্র ভূখণ্ডের উপর দাবি পর্যন্ত সন্নিবেশিত করা হইয়াছে, যাহার অর্থ দাঁড়ায় আগ্রাসী নীতি। তিনি বলেন, যে, পাকিস্তানের সংবিধানে এ ধারা এমন এক সময় সন্নিবেশিত হইয়াছে যখন ৯৫টিরও বেশি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানাইয়াছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, এইসব উস্কানি সত্ত্বেও মানবিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গত এপ্রিল মাসে আমরা ভারতের সঙ্গে একত্রে একটি বড় রকমের পদক্ষেপ গ্রহণের দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। স্বীকৃতির প্রশ্ন, আলাদা রাখিয়াও আমরা একযোগে পাকিস্তানে আটক সমস্ত বাঙালি, বাংলাদেশে অবস্থানরত সমস্ত পাকিস্তানি এবং যাহাদের বিরুদ্ধে জঘন্যতম যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ রহিয়াছে এইরকম ১ শত ৯৫ জন ব্যতীত ৯২ হাজার যুদ্ধবন্দি ও আটক অসামরিক ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের জন্য আমাদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করি।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব এই যুক্ত ঘোষণাকে অভিনন্দন জানায়। যে সমস্ত কমনওয়েলথ দেশ এই ঘোষণাকে সমর্থন জানাইয়াছে তিনি তাহাদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের এই প্রয়াসের ফলে যুক্ত ঘোষণার ভিত্তিতে গত সপ্তাহে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আন্তরিক আশা প্রকাশ করেন যে, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকে সমাধানের পথ খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে। তিনি বলেন যে, ইহাতে শুধু পাঁচ লক্ষের মতো লোকেরই দুঃখ-দুর্দশার পরিসমাপ্তি হইবে না বরং শান্তিরপথও সুগম হইবে।

জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি
বঙ্গবন্ধু বলেন যে, উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে কোন প্রয়াসকে আন্তরিক সহযোগিতা দান করিব। সংঘর্ষ-সংঘাতমুক্ত ও পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন পরিবেশকে স্বাগত জানাইয়া তিনি বলেন যে, আমরা স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইন্দোচীন প্রসঙ্গে
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে অভিনন্দন জানাইয়া বঙ্গবন্ধু বলেন যে, প্যারিস শান্তি চুক্তির ধারাগুলি যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় ও কম্বোডিয়ার বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় শান্তি স্থাপন সুদূরপরাহত।

ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে
বঙ্গবন্ধু ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমস্ত সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তিনি মোজাম্বিকে গণহত্যা ও আফ্রিকার অন্যত্র বর্ণবৈষম্যের নিন্দা করেন এবং মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা ও আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলসহ বিশ্বের সর্বত্র স্বাধীনতাকামীদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তিনি আরব ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরাইলি দখল ও তজ্জনিত শান্তির প্রতি হুমকির অবসান কামনা করেন।

কমনওয়েলথ প্রসঙ্গে
কমনওয়েলথ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, এই রাষ্ট্রসংঘে উন্নত ও উন্নয়নগামী দেশসমূহের প্রতিনিধিত্ব রহিয়াছে। তিনি অনুন্নত দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে উন্নত দেশগুলির ভূমিকার গুরুত্ব উল্লেখ করিয়া আশা প্রকাশ করেন যে, উন্নয়নগামী দেশগুলির স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া উন্নত দেশগুলি তাহাদের নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিবে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানাইয়া বঙ্গবন্ধু বলেন যে, অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ও পারমাণবিক পরীক্ষা দ্বারা আবহাওয়া দূষিত করার বিরুদ্ধে কমনওয়েলথের উচিত জনমত গড়িয়া তোলা।

বঙ্গবন্ধু বলেন যে, আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ভয়াবহ দিনগুলিতে কমনওয়েলথ হইতে আমরা প্রেরণা লাভ করিয়াছি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময়ও আমরা উপলব্ধি করিতেছি যে, আমরা নিঃসঙ্গ নাই।

তথ্যসূত্র : এই দেশ মাটি গ্রন্থ। (গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত)

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি