ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

‘ঐ দেখা যায় তালগাছ/ ঐ আমাদের গাঁ/ ঐ খানেতে বাস করে/ কানা বগীর ছা/ ও বগী তুই খাস কি/ পান্তাভাত চাস কি/ পান্তা আমি খাই না/ পুঁটিমাছ পাই না/ একটা যদি পাই/ অমনি ধরে গাপুস-গুপুস খাই।’-এই জনপ্রিয় ছড়াটির রচয়িতা কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুবার্ষিকী।

শিশু সাহিত্যিক খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও সাহিত্যে অবদানের জন্য সকলের হৃদয়ে তিনি চির অমর হয়ে রয়েছেন। তিনি আধুনিক সাহিত্যের এক অগ্রণী পুরুষ। বহুমুখী প্রতিভার এ কবি সারা জীবন শিশুদের মনোভূমি উৎকর্ষতার জন্য নিরলস ভাবে সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন।

কবি মঈনুদ্দীন ছোটবেলা থেকে ব্যাপৃত ছিলেন জীবন সংগ্রামে। তার একাগ্রসাধনা, অধ্যবসায় ফলে তিনি সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে একের পর এক সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম হন।

তার বাবার নাম মুহম্মদ মমরেজ উদ্দীন খান ও মায়ের নাম রাকিবুন নেসা খানম। পিতা-মাতার চার ছেলে দু’মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম সন্তান। তিনি শৈশবে নিজগ্রামের পাঠশালায় শিক্ষায় হাতেখড়ি নেন। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে বালক মঈনুদ্দীন কলকাতায় গিয়ে প্রথম জীবনে বুক বাইন্ডিং পেশায় নিয়োজিত হন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে লেখাপড়া শিখে কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষকতাকালীন সময়েই তিনি লেখালেখির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

বাল্যকালে তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে মাত্র ৯ বছর বয়সে মাতা ও ১২ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে এক নিরন্তর দুঃখ কষ্টের মাঝে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন।

ছোটবেলায় বই পড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল মঈনুদ্দীনের। নতুন বইয়ের গন্ধে আর ছড়ার ছন্দ ঝংকারে উৎফুল্ল হয়ে ওঠতেন। তিনি জীবন জীবিকার পাশাপাশি সাহিত্য সাধনায় নিমগ্ন হন। তার সাহিত্যিক জীবনের শুরু ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উত্তাল ১৯২০ -এর দশকের শুরুতেই। তখন সোভিয়েত বিপ্লব সম্পন্ন হয়ে বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন শিশুতোষ কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার রচিত অনেক ছড়া এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মুখে উচ্চারিত হয়। তার রচিত উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬), আমাদের নবী (১৯৪১), ডা. শফিকের মোটর বোট (১৯৪৯), খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৫১), আরব্য রজনী (১৯৫৭), বাবা আদম (১৯৫৮), স্বপন দেখি (১৯৫৯), লাল মোরগ (১৯৬১), শাপলা ফুল (১৯৬২)।

তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ— পালের নাও (১৯৫৬), হে মানুষ (১৯৫৮), আর্তনাদ (১৯৫৮); উপন্যাস— অনাথিনী (সহচর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ১৯২৬), নয়া সড়ক (১৯৬৭); ছোটগল্প— ঝুমকোলতা (১৯৫৬)। তিনি যুগস্রষ্টা নজরুল (১৯৫৭) শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থও রচনা করেছেন।

খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), যুগস্রষ্টা নজরুল রচনার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০) এবং একুশে পদক (১৯৭৮) লাভ করেন। এছাড়াও নজরুল একাডেমি স্বর্ণপদক (১৯৭৪) লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি