ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৬, ২৪ জুলাই ২০২৩

খাবার স্রষ্টার দেয়া অনেক বড় নেয়ামত। বেঁচে থাকার জন্যে তো বটেই, সুস্বাস্থ্যের জন্যেও খাবার অপরিহার্য। অবৈজ্ঞানিক খাবার একদিকে মানুষকে রোগগ্রস্ত করতে পারে; অন্যদিকে পুষ্টিবিজ্ঞানসম্মত সুষম খাবার মানুষকে রোগমুক্ত দীর্ঘজীবনের অধিকারী করে। তবে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে হলে খেতে হবে নিয়মমতো। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, খাবার খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে।

খাবার হজমের প্রক্রিয়া শুরু হয় মুখ থেকে, চিবানোর মাধ্যমে। যখন খুব ভালোভাবে চিবানো হয়, খাবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। খাবারের এই ক্ষুদ্র কণা মুখনিঃসৃত লালার সাথে মিশে যায়, যাতে রয়েছে বেশ কিছু এনজাইম যেমন : এমাইলেজ, মালটেজ, লিংগুয়াল লাইপেজ, লাইসোজাইম, কার্বোনিক এনহাইড্রেজ ইত্যাদি। ফলে সব ধরনের খাবারের প্রাথমিক হজম প্রক্রিয়া শুরু হয় এই এনজাইমগুলোর সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে। যখন খুব ভালোভাবে চিবানো হয়, তখন খাবার ক্ষুদ্রতম কণায় পরিণত হয়। খাদ্য যত ক্ষুদ্রতম কণায় রূপান্তরিত হয়, প্রাথমিক হজমপ্রক্রিয়া তত সুন্দর হয়।

কতবার চিবালে ভালোভাবে চিবানো হবে, এটি নির্ভর করে খাবারের ধরনের ওপর। আমেরিকার ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের মতে, নরম খাবার – যেমন নরম ফল ৫-১০ বার চিবালেই যথেষ্ট, আবার মাংস জাতীয় জমাট খাবার ৩০ বার পর্যন্ত চিবাতে হতে পারে।

যখন খাবার ভালোভাবে চিবানো হয় তখন পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে বার্তা চলে যায় যে, খাবার আসছে, প্রস্তুতি গ্রহণ করো। ফলে পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রাস্ত্র পরবর্তী ধাপের হজমপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যে পূর্ণপ্রস্তুতি গ্রহণ করে। পাকস্থলীতে পর্যাপ্ত এনজাইম ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়, যা হজমপ্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ চমৎকারভাবে সুসম্পন্ন করে।

হজমপ্রক্রিয়ার তৃতীয় ও শেষ ধাপ সম্পন্ন হয় ক্ষুদ্রান্ত্রে । প্রস্তুতিপর্ব ভালো থাকলে হজম পর্বও সুন্দর হয় এবং হজম শেষে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান রক্তে প্রবেশ করে। আর অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অবস্থান নেয় বৃহদান্ত্রে ।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাবার চিবানোর পুরো প্রক্রিয়ার সাথে মস্তিষ্কের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সংযোগ। আমরা যতই ক্ষুধার্ত থাকি, খাবারের মেন্যু আর পরিমাণ যা-ই থাকুক, কোনো খাবারই ১৪/১৫ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে আমরা চিবাতে পারব না। ১৫ মিনিট ধরে চিবাতে থাকলে মস্তিষ্ক সংকেত পাঠাতে থাকবে যে খাওয়া হয়ে গেছে, এবার থামো!

শুধু তা-ই নয়, যখন আপনি অল্প পরিমাণ খাবারও দীর্ঘসময় ধরে চিবিয়ে খাবেন, তখন এই অল্প পরিমাণ খাবারও আপনার পেট ভরা বা ক্ষুধা নিবৃত্তির অনুভূতি সৃষ্টি করবে এবং চাইলেও তখন বেশি খেতে পারবেন না। ফলে ওজন বাড়বে না। আর বাড়তি ওজন থাকলে তা সহজে কমে যাবে।

যথাযথ পরিমাণ না চিবিয়ে দ্রুত বা তাড়াহুড়ো করে খেলে যে-সব সমস্যা হতে পারে :

# বদহজম, ডায়রিয়া

# পেটে গ্যাস/ পেট ফাপা/ পেট ফুলে যাওয়া

# এসিড রিফ্লাক্স

# পেটব্যথা

# বমি বমি ভাব

# মাথাব্যথা

# অস্বস্তি বিরক্তি অসহিষ্ণুতা

# অপুষ্টি

# ওজন বৃদ্ধি

পরিপূর্ণ হজমের জন্যে খাবার গ্রহণের ২০-৩০ মিনিট পূর্বে অথবা পরে পানি পান করুন। যদি ওজন কমাতে চান, তবে অবশ্যই আপনি খাবার পান করুন আর পানি চিবিয়ে খান'। অর্থাৎ খাবার পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে ভালোভাবে চিবিয়ে খান, যেন খাবারটা মুখের ভেতর অনেকটা তরল হয়ে যায়। এরপর গিলে ফেলুন। তাহলেই খাবার যে স্রষ্টার কত বড় নেয়ামত, সেটি আপনি অনুভব করতে পারবেন।

পানি পানের বেলায়ও তা-ই। যতই তৃষ্ণার্ত কিংবা ব্যস্ত থাকুন, তাড়াহুড়ো করে এক ঢোকে কখনো গ্লাসের সবটা পানি পান করবেন না। সবসময় এক গ্লাস পানি একাধিক চুমুকে ও একাধিক ঢোকে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে পান করুন। সুস্বাস্থ্যের জন্যে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ।

এসবি/ 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি