ডেসটিনির মেজর সাকিবুজ্জামানসহ (অব) চারজন কারাগারে

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকদের চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর সাকিবুজ্জামান খানসহ (অব.) চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অপর তিন আসামি হলেন- ডেসটিনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেস্ট এভিয়েশনের এ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার মোল্লা আল আমিন, হেড অব ফাইনেন্স কাজী মোহাম্মদ ফজলুর করিম ও কন্ট্রলার সুনিল বর্মণ কর্মকার।

বুধবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ১২ মে আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম। রায়ে মেজর সাকিবুজ্জামান খানের (অব.) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা, মোল্লা আল আমিনের ৪ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা, কাজী মোহাম্মদ ফজলুর করিমের ৫ বছরের কারাদণ্ড ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও সুনিল বর্মণ কর্মকারের ৮ বছর কারাদণ্ড ও ৫ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় তারা পলাতক থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। গত ১২ মে আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করে।

রায়ে ব্যাস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

একই সঙ্গে গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের চার বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। মামলার বাকি ৪৩ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, সাঈদ-উর-রহমান, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিনের ১০ বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের নয় বছরের কারাদণ্ড, ৩০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদণ্ড, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দীবা, জমশেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়বুর রহমান ও নেপাল চন্দ্র বিশ্বাসের আট বছরের কারাদণ্ড, ৪০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছর কারাদণ্ড, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন ও সুমন আলী খানের নয় বছরের কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছর ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ, সাইফুল ইসলাম রুবেল, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলমের আট বছরের কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছর ছয় মাস কারাদণ্ড, ড. এম হায়দারুজ্জামানের ছয় বছরের কারাদণ্ড, দশ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের ছয় বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, কাজী মো. ফজলুল করিমের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, মোল্লা আল আমীনের আট বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড, শফিউল ইসলামের সাত বছরের কারাদণ্ড, দশ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, জিয়াউল হক মোল্লা, খন্দকার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলমের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, দশ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, ওমর ফারুকের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকারের আট বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ফরিদ আকতারের আট বছরের কারাদণ্ড, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড, এস সহিদুজ্জামান চয়নের আট বছরের কারাদণ্ড, ১৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদণ্ড, আবদুর রহমান তপন ও মো. শফিকুল হকের সাত বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান ও জেসমিন আক্তার মিলনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, এসএম আহসানুল কবির, এএইচএম আতাউর রহমান রেজার আট বছরের কারাদণ্ড, দশ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদণ্ড, গোলাম কিবরিয়া মিল্টনের আট বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদণ্ড, মো. আতিকুর রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদণ্ড, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেনের সাত বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ মোট আসামি ৪৬ জন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। কারাগারে আছেন এমডি রফিকুল আমীন ও ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। অন্য ৩৯ আসামি পলাতক।

অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারি পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক মামলা করেন। ২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মোজাহার আলী সরদার। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই আসামি হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল এক হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে আট লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়।

এসি