ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪

অর্ধশত ঘোড়দৌড়ের ৩০টিতেই চ্যাম্পিয়ন

তাসমিন চায় পুলিশ হতে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১৪, ৭ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৪৭, ৮ মে ২০১৮

তাসমিনা খাতুন। বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরট উপজেলার চকসুবল গ্রামে। বাবা ওবায়দুল, মা তহুরা আক্তার। পড়াশুনা করে শঙ্কারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেনিতে। ছোটাবেলা থেকেই নেশা ঘোড়া ছোটানো। সেই নেশা থেকেই তাসমিনার সারাদিন কাটে ঘোড়ার পিটের উপর চড়ে।

ঘুম থেকে উঠে একমুঠো খেয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে তাসমিনা। দুপুরে এসে একটু খেয়ে আবারও ঘোড়া নিয়ে বের হয়। দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিযোগিতার কথা শুনলেই ছুটে চলে তাসমিনা। কিন্তু দারিদ্রের কারণে তাসমিনের বাবা তার ঘোড়াটি বিক্রি করে দেয়।

এরপর প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো নিজের ঘোড়া না থাকলেও মেয়েটির এমন আগ্রহ উলফাত কাদের নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘোড়া ভাড়া নেন তারা বাবা। এরপরই নজর কাড়া পারফরমেন্সের পর তাকে একটা ঘোড়া উপহার দেন। কিন্তু ঘোড়াটির এক চোখ অন্ধ থাকার কারণে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারতো না ঘোড়াটি। তবুও থেমে থামাতে পারেনি তাসমিনাকে। কোথাও ঘোড়া প্রতিযোগিতা হবে শুনলেই তাসমিনাকে নিয়ে ছোটেন তার বাবা। নিজের ঘোড়া অন্ধ হওয়ার কারণে তাসমিনা অন্যের ঘোড়াকে জিতিয়ে নিতে কাজ করতেন। তার বদলে তার নাম ঘোষিত হয় বিজয়ী হিসাবে। তবে সব পুরস্কার ঘোড়ার মালিককে দিয়ে খালি হাতেই ঘরে ফিরতো তাসমিনা।

সাত বছরের শিশু তাসমিনা বর্তমানে ১২ বছরের কিশোরী। এরই মধ্যে সে হয়ে উঠেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়সওয়ার। যেকোনো প্রতিযোগিতায় সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায় তাসমিনার দুরন্ত ঘোড়া। প্রতিযোগিতা দেখতে আসা হাজারো দর্শকের হর্ষধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার ময়দান। বারবার জয়ী হয়ে তাসমিনা তার ভক্তকুলকে নির্মল আনন্দে ভাসিয়ে দেয়।

নওগাঁর মেয়ে তাসমিনা এরইমধ্যে প্রায় অর্ধশত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ৩০টিতে অধিকার করেছে প্রথম স্থান। তাসমিনার পাওয়া পুরস্কারের তালিকাটি যথেষ্ট দীর্ঘ। তাসমিনা খাতুন সাহস, শক্তি, সংকল্প ও নারী ক্ষমতার স্বীকৃতি সরূপ এবছর তাকে নাসরীন স্মৃতি পদক প্রদান করছেন একশন এইড। সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনের কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাতকাটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন: এতোকিছুর মাঝে কেন আপনার ঘোড়াটির পিঠে চেপে বসার স্বপ্ন তৈরি হলো?   

তাসমিনা খাতুন: বাবা দরিদ্র দিনমজুর হলেও ছিল একটি ঘোড়া। বাবা যখন ঘোড়াটিকে ঘাস খাওয়াতেন, পরিচর্যা করতেন, বিষয়গুলো এইটুকুন আমাকে আকৃষ্ট করত। আমি সাত বছর বয়েসে ঘোড়া লালন-পালনে বাবাকে সহযোগিতার করতাম। এসব করতে করতে কেমন যেন এক মায়ায় জড়িয়ে পড়ি। ধীরে ধীরে একদিন ঘোড়াটির পিঠে চেপে বসে। সাহস করে দেয় ছুট। সেই যে শুরু, আর থামেনি।  

একুশে টিভি অনলাইন: প্রথমে কিভাবে এই স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয় ?

তাসমিনা খাতুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমার স্বপ্নের যাত্রা। এরপর একে একে রংপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মেলাসহ নানা আয়োজনে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। মেলা-পার্বণে অন্য আয়োজনের সঙ্গে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে এলাকার মানুষের জন্য বিশেষ বিনোদন, বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

একুশে টিভি অনলাইন: ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণে আপনার পড়াশুনার কোন অসুবিধা হয় কি?

তাসমিনা খাতুন: কিছু সমস্যা তো অবশ্যই হয়। আমি যখন কোন প্রতিযোগিতা শুরু হয় তখন তিন থেকে চার পড়াশুনার বাহিরে থাকতে হবে। আমি যে কারণে পড়াশুনা ভাল করে করতে পারি নি। তবে যতটুকু সময় পায় পড়াশুনা করি।

একুশে টিভি অনলাইন: লেখাপড়া শেষ করে আপনি কি হতে চান?

তাসমিনা খাতুন: ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় দর্শকের বিপুল সাড়া আমাকে অনেক আন্দন দেয়। সেই আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বারবার চেষ্টা করি প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে। লেখাপড়া শেষ করে পুলিশে চাকরি করতে চাই।

একুশে টিভি অনলাইন: নাসরিন স্মৃতি পদক পেয়েছেন, আপনার কেমন লাগছে।

তাসমিনা খাতুন: নারী ক্ষমতায়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নাসরীন পদক পাওয়ার চেয়ে আনন্দের বিষয় আমার কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি, মানুষকে আন্দন দেওয়া একটা কাজ। চাইলেই সব নারী যে কোনো কাজে ভালো করতে পারেন।

টিআর/ এমজে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি