ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪

দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই

প্রকাশিত : ১৩:০৮, ১০ এপ্রিল ২০১৯

আসলে প্রেম হলো কেবল দেয়ার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ চিন্তা করে নি যে কে কী পাবে। তারা যখন অপারেশনে বের হতেন ভাবতেন এটিই হয়তো তার শেষ যাত্রা বা শেষ অপারেশন। ফিরে আসবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। 

বড় বড় কাজ যখন সময় হবে করব কিন্তু ঠিক এখনই কী করতে পারি? মন দিয়ে পড়তে পারি, মন দিয়ে কাজ করতে পারি, মন দিয়ে সন্তান লালন পালন করতে পারি, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারি, নিরক্ষর মানুষটিকে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি। সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে পারি, ঘরের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে পারি, সময়খাদক টিভি সিরিয়াল এবং ফেসবুক দেখা থেকে বিরত থাকতে পারি। নিজে প্রশান্ত থেকে যদি অশান্তি সৃষ্টি করা থেকে দূরে থাকি, নিজেকে যদি আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি তাও দেশপ্রেম।
রক্তদান করতে পারি- এই রক্ত যদি আমরা একজন মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করতে পারি তাহলে একজন ব্যক্তির জীবন বাঁচানো সমগ্র জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ হতে পারে। যাদের বয়স ১৯ হয়েছে এবং শারীরিক সক্ষমতা যদি অর্জন করি, তাহলে নিজ দায়িত্বেই চার মাস পর পর ল্যাবে গিয়ে রক্ত দিয়ে মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি।

নিজেকে শিক্ষা দীক্ষা ও জ্ঞানে-গুণে সুন্দর ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। পবিত্র কোরআনের সূরা জুমার ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি কখনো সমান হতে পারে?’ এজন্যে শেখার দরজাটা সবসময় উন্মুক্ত রাখতে হবে। যখনই একজন মানুষ মনে করে আমি অনেক জেনে গেছি, সেখান থেকেই তার ধ্বস শুরু হয়। জানতে হবে কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা, কোন উপকারি কোনটা অপকারি, কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায়। শিষ্টাচার, আচার-আচরণ ও নৈতিক জ্ঞান সবকিছু শিখতে হবে। নৈতিক জ্ঞানে যত সমুন্নত হবো তত বিকাশটা সুন্দর হবে। এজন্যে নিয়মিত ধর্মবাণী পড়তে হবে।

আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমাদের এখন বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমাদের যুদ্ধ নিজের অক্ষমতার বিরুদ্ধে, নিজের অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, নিজের আলস্যের বিরুদ্ধে। আসলে নিজে বদলালেই দেশ বদলাবে, পৃথিবী বদলে যাবে। এই সত্যকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আমাদের দেশ বিশ্বের সেরা জাতিতে রূপান্তরিত হবে ইনাশাল্লাহ।

দায়িত্ববান মানুষই সবসময় সম্মানিত হয়, সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়। আসলে যারাই দায়িত্ব নিতে পেরেছে তারাই অমরত্ব পেয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে আলোকিত করার জন্যে বই পড়া কর্মসূচির দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। যে কারণে মাত্র ৩৫ টাকা দিয়ে শুরু করা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ প্রায় সবকটি জেলায় তাদের শাখা রয়েছে।

দায়িত্ব নেয়া প্রসঙ্গে একটি গল্প রয়েছে। একবার এক বনে আগুন লেগেছিল। বনের অন্যান্য সব পাখি আগুনের কাছে এসে হা হুতাশ করছিল। ব্যতিক্রম ছিল একটি হামিং বার্ড। বনের পাশেই ছিল একটি পাহাড়ি নদী। পাখিটি নদী থেকে তার ছোট্ট ঠোটে করে খুব সামান্য পরিমাণ পানি এনে আগুনে ফেলতে লাগল। অন্য সব পাখিরা দেখে বলতে লাগল, ‘তোমার সামান্য পানির ফোটা দিয়ে কীভাবে এই দাবানল নেভাবে? পাখিটি জবাব দিয়েছিল, স্রষ্টা আমাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছে সেটুকুই কাজে লাগাচ্ছি। একদিন বলতে পারব এই আগুন নেভানোতে আমার অবদান ছিল তা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন। আসলে আমরাও ঐ রকম পাখির মতো করে বলতে চাই, আমার করণীয়টুকু সুন্দরভাবে করার চেষ্টা করেছি, দায়িত্ব নিয়েছি।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি এই দেশ আমাদের গর্ব, এ মাটি আমাদের কাছে সোনা। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। একথা শুধু বললে হবে না। কাজের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে।


টিআর/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি