ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

দুঃখ খোঁজে দুঃখী

এস ইউ আহমদ

প্রকাশিত : ১৬:৫৮, ২৭ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২০:৪৮, ২৭ এপ্রিল ২০২০

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এত দীর্ঘ জীবনে শুধুই যদি সুখ থাকতো তাহলে তো জীবনের প্রতি এক ঘেয়েমি ধরে যেতো, হয়ে যেতাম দুঃখবিলাসি। জীবনে সুখ দুঃখ দুটোই আসে বলে মনের অবস্থা একেক সময় একেক রকম থাকে। 

দুঃখ কাটানোর ব্যস্ততা নিয়ে অথবা সুখ উপভোগ করতে করতে জীবনের এত দীর্ঘ সময়টা অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। দুঃখ খোঁজলে জীবনে প্রতি ক্ষনে ক্ষনে দুঃখের অভাব হবে না। এক কথায় বলা যায় দুঃখী ভাবলেই দুঃখী, আমি যদি নিজেকে প্রশ্ন করি আমি কি দুঃখী, তাহলে আমি অবশ্যই দুঃখী, মনের ভিতরে ভেসে উঠবে দুঃখের হাজারো কাহিনি। অতীতে আমার অনেক দুঃখ ছিল, এখনো দুঃখের সঙ্গেই বসবাস। ভবিষ্যতে আরো কত দুঃখ আমার জন্য অপেক্ষা করছে তার ইয়ত্তা নেই। ভেবে যাই যার যার নিজস্ব ধারায়। দুঃখ নিয়ে নানান জন নানা রকম ভাবে, বলেনও নানা রকম কথা। যে যার মতো ভাবি যার যার ভাবনা তার তার। কিন্তু একবারো কি ভেবে দেখেছি কেন আমি দুঃখী- শুধুই কি জীবনের না পাওয়ায় দুঃখী, পেয়ে হারানোর দুঃখ কি নেই? চাইলেও পাবোনা এমন দুঃখও তো আছে, কিন্তু কেন? নিজের দোষে, নিজের অলসতায়, অজ্ঞতায়, অগ্রীম চিন্তায়, নাকি দোষটা অন্য কারো। পরশ্রীকাতরতায়ও আমরা দুঃখী হইনা তা কিন্তু নয়। 

দুঃখ নিয়ে ভাবতে চাইলে প্রথমেই ভাবা যায়, কেন এমন হলো, নিজের দোষে, খোজঁতে থাকি আমার কি কি দোষ, দোষ নিয়ে ভাবনা শেষ করার আগেই ভাবতে পারি যোগ্যতার অভাবেও এমন হতে পারে, নাকি যা করেছি তাতে অনেক ভুল ছিল, কি কি ভুল ছিল, কি ভুল করেছি, আমার জীবনের দুঃখ আসার কারণ আমার অলসতাও হতে পারে, যখনকার কাজ তখন করলে মনে হয় কাজটা ভালো মতোই হতো, কাজটা ভালো মতো করতে গেলে যতটুকু জ্ঞান দরকার ততটুকু মনে হয় আমার ছিল না, থাকলে মনে হয় এমন হতো না। শুধু যে বর্তমান নিয়ে ভাবছি তা নয়, ভবিষ্যতে যে কি আছে কে জানে; অগ্রীম চিন্তায় চিন্তায় দুঃখ বোধ, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি আসবে যা আমার দুঃখের কারণ হতে পারে, দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলে তো সর্বনাশ, রাজীনৈতিক অস্থিতিশীতা আসলেও তা কাটিয়ে উঠা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আরো কতো কি ভাবনায় নিজের মনকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে ফেলি। 

মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি সঠিক, আমি নির্ভুল, আমি কর্মঠ, যা হবার বা যা হচ্ছে সবই মনে হয় কপালের দোষ, আমি হাজারো চেষ্টা করে লাভ কি, এমন যদি নাও ভাবি, অন্তত একবার হলেও ভাবি অন্যের কারণে আমার কাজটা ঠিক মতো হচ্ছে না বা হয়নি। আমার চেয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন, আমার চেয়ে অলস, কোন দিক দিয়েই আমার সমকক্ষ না, এমন লোকও জীবনে কতকি করে ফেলেছে, আমার চেয়ে খারাপ লোকরাও তো ভালোই আছে। মোদ্দা কথা পরশ্রীকাতরতায় আমরা দুঃখী হই। আমরা মেনে নিতে বাধ্য জীবনটা আমার ইচ্ছে মতো চলবে না। 

আমাদের একেক জন জীবনে একেক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।  যে যাই হতে চাই , সবাই কিন্তু তা হতে পারি না, লক্ষ্যে পৌছতে না পেরে মন খারাপ হয় , মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরি, মনে দুঃখে জীবনের লক্ষ্য আর ঠিট করা হয় না।  যা হতে পারিনি তার চেয়ে ও বড় লক্ষ্য কয়জনইবা ঠিক করতে পারে, কথাটা বলতে গেলে মনেপড়ে যায় ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি আবুল পাকির জয়নুল-আবেদীন আব্দুল কালাম সংক্ষেপে যাকে আমরা এপিজে আব্দুল কালাম হিসেবেই চিনি । 
তিনি ছাত্রাবস্থায় জীবনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, তা পূরণ হয়নি,  তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ভেঙে পড়েননি তিনি। তিনি পৌঁছে গেলেন আগের লক্ষ্যের চেয়ে আরো বড় লক্ষ্যে  । হতে চেয়েছিলেন যুদ্ধ বিমানের পাইলট কিন্তু পারেন নি। তাতে কি হয়ে, সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে তিনি আরো বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখলেন হয়ে   গেলেন রকেট বিজ্ঞানী। ১৯৮০ সালে মহাকাশ যানের সাহায্যেই  ভারত তার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিণী উৎক্ষেপণ করে। তিনি প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-টু পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার পেছনেও  । আর রাষ্ট্রপতি  হওয়ার কথা তো আমাদের সবারই জানা, তাই জীবনের লক্ষ্যে পৌছনে না পারাটা আফসোসের না করে আমাদের উচিৎ আরো বড় লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যাওয়া, আফসোস না করে স্বপ্ন দেখতে হবে, অনেক বড় স্বপ্ন ।

দুঃসময় মানুষের জীবনে আসতেই পারে। ভাবতে হবে কিভাবে বিপদ কাটিয়ে উঠা যায়। বিপদ কাটিয়ে উঠার জন্য বিপদের মাত্রা অনুযায়ি কাজ করতে হবে। সুখে থাকার জন্য সুখ খোঁজতে হবে। জীবনে সুখে থাকার জন্য আমরা অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক কিছু আছে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখ গুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সুখ নিয়ে ভাবুন, ভাবুন আপনি সুখে আছেন, খোঁজে নিতে হবে কি কি কারণে আপনি সুখি। সুখ রয়েছে পরোপকারের মাঝে, প্রকৃতির মাঝে, রয়েছে সচেতনতায়। এসবকে মেনে চললে আপনি সুখী হবেন।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি