ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বের সকল শান্তিকামী শক্তি সুসংহত হউন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৮, ১১ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১০:০৯, ১২ মার্চ ২০২০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ছবি: সংগৃহীত

‘জুলিও কুরি’ পদকে সম্মানিত হওয়ার পর এশীয় শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা ‘বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক এবং সকল শান্তিকামী শক্তি সুসংহত হউক- ইহাই আমরা চাই।’

ঢাকার শের-এ বাংলা নগরে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে এশীয় শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত হওয়ার পর ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু এই উক্তি করেন।

বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, আরব রাষ্ট্রসমূহ, পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রায় দেড়শত প্রতিনিধি যোগদান করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্বে বিশ্বশান্তি পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল শ্রী রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করেন এবং ভাষণদান করেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁহার ভাষণে বলেন, বৃহৎ শক্তিবর্গ, বিশেষভাবে আগ্রাসী নীতি অনুসারী কতিপয় মহাশক্তির অস্ত্রসজ্জা তথা অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে আজ এক সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। তিনি বলেন, আমরা চাই অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয়িত অর্থ দুনিয়ার দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়োগ করা হউক।

জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্বশান্তি আন্দোলনের সহকর্মী প্রতিনিধিরা আমাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদকে ভূষিত করিয়া যে সম্মান দিয়াছেন, আমি একান্তভাবে অনুভাব করি যে, ইহা কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, ইহা বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের।

বঙ্গবন্ধু বলেন, এই সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের। তিনি বলেন, ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক সমগ্র বাঙালি জাতির।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহার ভাষণে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্বশান্তি পরিষদের কার্যকলাপ কৃতজ্ঞতার সহিত লক্ষ্য করিয়া আসিতেছেন। বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা যাঁহারা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সহিত একাত্মতা ঘোষণা করিয়াছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিশ্বশান্তি পরিষদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয় বলিয়া প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, বিশ্বশান্তিই তাঁহার জীবনদর্শনের অন্যতম মূলনীতি। তিনি বলেন, নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত, শান্তি ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ, সে বিশ্বের যে কোন স্থানেই হোক না কেন, তাঁহাদের সাথে আমি রহিয়াছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সহিত বন্ধুত্ব, কাহারও প্রতি বিদ্বেষ নয়- শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের এই নীতিতে আমরা আস্থাশীল।

বঙ্গবন্ধু বলেন যে, মুক্তিকামী মানুষের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম অস্ত্রের জোরে স্তব্ধ করা যায় না। সেই জন্যই ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, আংগোলা, মোজাম্বিকসহ দুনিয়ার সকল উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশ অকুণ্ঠ সমর্থন জানাইয়াছে বলিয়া বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহার ভাষণে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের সকল স্থানের বর্ণভেদবাদী নীতির তীব্র নিন্দা করেন। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সহিত উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানের একগুঁয়ে নীতি উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই দিকে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সর্বশেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তির সৈনিকদের অভ্যর্থনা জানাইয়া ও সম্মেলনের সাফল্য কামনা করিয়া এই মহান সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সূত্র: এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ। (গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত)

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি