ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪

সাহিত্যিক জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৪, ৩ আগস্ট ২০২১

সাহিত্যিক জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮২ সালের ৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে অমর হয়ে থাকা এই মানুষটি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্প, উপন্যাসের ব্যতিক্রর্মী জ্যোতিষ্ক। মানুষটি ছিলেন সাদামাটা। আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন লেখকই হবেন। শুধুমাত্র লেখার প্রয়োজনে বস্তিতে থাকতে পর্যন্ত কার্পণ্য করেননি। বাস্তব অভিজাতার আলোকে উপলব্ধিগুলো ফুটে ওঠে তার রচনায়।

জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী জন্মগ্রহণ করেন ১৯১২ সালের ২০ আগস্ট অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। তার ডাকনাম ছিল ধনু। বাবা অপূর্বচন্দ্র নন্দী ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। মায়ের নাম চারুবালা দেবী। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৩৫ সালে প্রাইভেটে বিএ পাস করেন।

কর্মসূত্রে কলকাতায় যান প্রথম চাকরি পান বেঙ্গল ইমিউনিটিতে। এরপর টাটা এয়ারক্রাফ্ট, জে ওয়ালটার থমসন-এর পাশাপাশি কাজ করেছেন যুগান্তর সংবাদপত্রের সাব এডিটর হিসেবে এবং মৌলানা আজাদ খান সম্পাদিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। তার কর্মক্ষেত্রে ছিল ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার মুখপত্র মজদুর ও জনসেবক পত্রিকা।

ছোটবেলা থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন। স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩১ সালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এক বছর গৃহবন্দী থাকাকালীন তার সাহিত্যচর্চার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। 'জ্যোৎস্না রায়' ছদ্মনামে সোনার বাংলা ও ঢাকা থেকে প্রচারিত বাংলার বাণী পত্রিকায় তার লেখা কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। কলকাতায় তিনি সাগরময় ঘোষের সান্নিধ্যে আসেন ও দেশ পত্রিকায় ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় ছোটগল্প 'রাইচরণের বাবরি'। এছাড়াও মাতৃভূমি, ভারতবর্ষ, চতুরঙ্গ কিংবা পরিচয় পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে।

তার লেখা ছোটগল্প ভাত ও গাছ, ট্যাক্সিওয়ালা, নীল পেয়ালা, সিঁদেল, একঝাঁক দেবশিশু ও নীলফুল এবং বলদ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৪৮ সালে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাস ‘সূর্যমুখী’ প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে তিনি সাহিত্যচর্চাকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন। তার উপন্যাসগুলো হলো সূর্যমুখী, মীরার দুপুর, গ্রীষ্ম বাসর, নিশ্চিন্তপুরের মানুষ, হৃদয়ের রং, প্রেমের চেয়ে বড়, সর্পিল, তিন পরী ছয় প্রেমিক, নীল রাত্রি, বনানীর প্রেম ইত্যাদি।

জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী ১৯৬৫ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ও ১৯৬৬ সালে আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হন। তাকে কল্লোল যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকার বলে মনে করা হয়। তার উপন্যাসের সংখ্যা ২০টি ও গল্পগ্রন্থ আছে ৫৩টি।

সাদামাঠা জীবনই ছিল তার আজীবন সঙ্গী। নিয়মানুবর্তিতাও মেনে চলতেন। চূড়ান্ত আর্থিক কষ্ট, অনটনেও তার নিয়মানুবর্তিতায় কোনো খাদ ছিল না। সে এক মেয়ে ও দুই ছেলের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনই হোক কিংবা লেখাই হোক না কেন। লেখা আসুক আর না আসুক, রোজ নিয়ম করে লেখার খাতার সঙ্গে তার সময় কাটানো চাই-ই চাই।

স্ত্রী পারুল নন্দী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘লেখার সময়ও ছিল অত্যন্ত বাঁধা। যখনই মনে হলো তখনই লিখতে বসলাম একদম পছন্দ করতেন না। যখনই মনে হলো রাতে বাড়ি ফিরলাম একদমই পছন্দ করতেন না। আমার স্বামী নিজেই ঘড়ি হয়ে যেন নিজেকে এবং সেই সঙ্গে সংসারটিকে চালনা করতেন।’

সকাল ও বিকেল দু’বেলা নিয়ম করে হাঁটতে যেতেন। কিন্তু ওই হাঁটার সময়ে খুব একটা কথাবার্তা পছন্দ করতেন না। মনে করতেন, সাধারণ কথা-গল্পের চেয়ে ওই সময়ে যদি কোনো গল্প-উপন্যাসের ভাবনা তার মাথায় আসে, তাতেই অনেক লাভ। লেখার জন্যে এভাবেই নিজেকে একা করেছেন, বিযুক্ত করেছেন সকল কিছুর থেকে।

জ্যোতিরিন্দ্র আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন লেখকই হবেন। হয়েছিলেনও তাই। সবসময় ভেতরে ছিল আরো ভালো লেখার তাগিদ। বাংলার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নরনারীর জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন তার গল্প-উপন্যাসে।
এসএ/


 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি