ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

১৫ আগস্টের আগে ও পরে

নীলিমা ইব্রাহীম

প্রকাশিত : ১৫:১৭, ৭ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৫:২০, ৭ আগস্ট ২০১৯

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যুর পর কবি নজরুল ইসলাম এক অপূর্ব শোকগাঁথা রচনা করেন। তার প্রথম দুটি পঙক্তি এ রকম :
আজ ভারতে ইন্দ্রপতন বিশ্বের দুর্দিন,
পাষাণ বাংলা পড়ে এক কোণে স্তব্ধ অশ্রুহীন।

দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী পর বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ সম্পর্কে আমরা একই চরণদ্বয় উচ্চারণ করতে পারি। সত্যিই পনের আগস্ট সকালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার সংবাদ শুনে সকল প্রকৃত বাঙালি অশ্রুহীন চোখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। পারিবারিক জীবনে পিতৃবিয়োগে আমরা চিৎকার করে কাঁদতে পেরেছি, কিন্তু এখানে কণ্ঠ রুদ্ধ, বাষ্পাচ্ছন্ন। 

কিন্তু এই নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনা, এই পৈশাচিক বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড কেন ঘটলো তার সঠিক কারণ আজও রহস্যাবৃত, কুয়াশাচ্ছন্ন। কারণ যারা রহস্য উন্মোচন করবেন তারাই তাৎক্ষণিক আইন করে একে কালো আবরণে আবৃত করেন। 

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু ঘটবে এমনটা না ভাবলেও বঙ্গবন্ধুর শাসনামল যে দ্রুত সমাপ্তির পথে- এ বিষয়টি অনেকের কাছেই আশঙ্কায় পরিণত হয়েছিল। কেমন যেন চারদিকে একটা গোপনীয়তার শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ অনুভব করেছিলাম তখন। বাতাসে, কিছু বুদ্ধিজীবী মহল (বিশেষ করে, যারা দালাল আইনে পড়েছিলেন) স্বার্থান্ধ রাজনীতিবিদদের মুখে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইংল্যান্ড, আমেরিকার পত্রপত্রিকায় নানা কুৎসা শুনছিলাম এবং পড়ছিলাম।

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগগুলো ছিল এ ধরনের:

ক. আকাঙ্ক্ষিত মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করা।
খ. ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ চুক্তি আত্মসমর্পণতুল্য।
গ. দ্রুত সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রবর্তন এবং নিজে রাষ্ট্রপতি হয়ে সর্বক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ।
ঘ. একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা এবং কমিউনিজমের প্রতি অতি আকর্ষণ যা খাঁটি মুসলমান মাত্রেই ঘৃণা করেন।
ঙ. সংবাদপত্রের সঙ্কোচন।
চ. ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা এবং অতঃপর এর সঙ্গে যুক্ত হলো ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ।

সমালোচকদের মতে, ওপরের সবগুলো বিষয়ই ছিল সত্য এবং এসব কিছুর জন্য শেখ মুজিব দায়ী এবং আজও যত্রতত্র সরকারি দল বর্তমান বিরোধী দলের সমালোচনা করতে উঠেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পুঁথি পড়ার মতো এগুলো বলতে থাকেন।

তবে এ সকল অপরাধের মূল কথা সাধের পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসা এবং স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকাল থেকে আজ পর্যন্ত এ ব্যর্থ-বেদনা পাক-সন্তানদের মন থেকে মুছে গেল না এবং যিনি যত পাকিস্তানমুখী, বর্তমান বাংলাদেশে তিনি তত উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত। অবশ্য এরা নিশ্চিত ছিলেন যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর অনতিবিলম্বে আবার পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবে। 

মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের নানাবর্ণের ও আকারের নানা টুপি দেখেছিলাম শপথ গ্রহণকারীদের মাথায়। কিন্তু এসবের নেতা সময় পেলেন না। মাত্র তিন মাসের মাথায় গদিচ্যুত হলেন। ক্ষমতায় এলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। কেউ তার যত সমালোচনাই করুক, তার স্বদেশপ্রীতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কটাক্ষ করার সুযোগ তিনি কাউকে দেননি এবং তিনি মনেপ্রাণে স্বদেশকে ভালোবাসতেন।

রাজাকার-আলবদরদের তিনি পুনর্বাসিত করেছিলেন একথা সত্য কিন্তু তাদের মাথা তুলতে দেননি। তবে সঙ্গত কারণেই তার প্রতি মুজিব অনুসারীদের আস্থা ছিল না, এবং সে কারণে পুরনো রাজনীতিবিদরা যারা মুজিবের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন তারা তার সঙ্গে সহযোগিতা করেননি বা স্ব-আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেননি।

যাই হোক, আমরা উপরোক্ত অভিযোগগুলো ছাড়া আরও কিছু বিষয় দেখতে পাই যা মুজিব সরকারকে লোকচক্ষে হেয় করেছিল। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা দূরে সরে গেল। সংগ্রামে যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল তাদের বিভক্ত করা হলো মুজিব বাহিনীর জন্ম দিয়ে। নিয়মিত সেনাবাহিনীকে সামনে রেখেও উন্নততর ব্যবস্থায় রক্ষীবাহিনী সৃষ্টি করা হলো। এ দরিদ্র দেশে দুটোর একটাকে অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিল, ফলে সামরিক বাহিনীতে অসন্তোষ দেখা দিলো।

শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের মাধ্যমে লুটপাট শুরু হয়ে গেল। যারা এ চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত ছিলেন তারা রটনা করলেন, ভারতীয়রা নিয়ে গেছে সব। অথচ মুক্তিযোদ্ধার আবরণে যারা আরামে দিল্লি-কলকাতায় অবস্থান করেছেন তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো পদে যোগ দিলেন মুক্তিযোদ্ধার অধিকার নিয়ে। আর যারা শরণার্থীরূপে ১০ মাস অফিস-আদালতে, ঘরে-বাইরে সংগ্রাম করে বেঁচেছিলেন তারা হয়ে গেলেন দালাল, কিছু কিছু লোভাতুরের স্বার্থে।

এভাবে সর্বত্র সর্বক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলল তার দায়ভার গিয়ে পড়ল শেখ মুজিবের ওপর। বাড়ি দখল, বাড়ির ফার্নিচার ও অন্যান্য জিনিস নিয়েছেন যারা, তারা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। এরা সংখ্যায় কম হলেও শেখ মুজিবের ওপর কম  কালিমা লেপন করেননি। যারা ক্ষুব্ধ ছিলেন, তারা এ সুযোগ গ্রহণ করলেন।

রাতারাতি অনেকে মুজিববাদী বনে গেলেন। মন্ত্রিসভার ভেতরে যারা ছুরি শান দিচ্ছিলেন তারা পুলকিত হলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হলো আত্মীয় পোষণের অপবাদ, আত্মীয়রা নিজেরাই নিজেদের তোষণ করেছেন শেখ মুজিবের অগোচরে কিন্তু অপরাধী সাব্যস্ত হলেন শেখ মুজিব।

কিছু সুযোগ সন্ধানী নব্যনেতা বঙ্গবন্ধুকে লোকচক্ষু থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেবার জন্য সযত্ন প্রয়াস চালাল। মিথ্যা আশ্বাসবাক্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তুষ্ট রেখেছিল তারা। শেষের দিকে মুজিব এ খেলা বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু তার ফিরবার পথ তখন আর খোলা নেই। ১৯৭২ সালে সমগ্র জাতি যেমন তার কাছে নতি স্বীকার করে আজ্ঞাবহ রূপে উপস্থিত হয়েছিল, দুর্জনের ছলনায় তারা অধিকাংশই দূরে চলে গেল এবং মৃদুস্বরে হলেও বঙ্গবন্ধুর সমালোচনায় বিমুখ ছিল না।

ছাত্র সংগঠনে ভাঙন ধরল, জাসদের জন্ম হলো। দেশে বন্দুকধারীদের অত্যাচার বৃদ্ধি পেল। সিরাজ শিকদারের মৃত্যুর ফলে আগুনে ঘি পড়ল। এলো ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ, সমগ্র পৃথিবীতে এবছর প্রচণ্ড খাদ্যাভাব হয়েছিল। আমেরিকা খাদ্যভর্তি জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে গেল।

খাদ্যমন্ত্রী ফণীভূষণ মজুমদার নগদ ডলার হাতে নিয়েও বিশ্ব বাজারের কোন জায়গা থেকে চাল কিনতে পারলেন না। সব অপরাধের বোঝা শেখ মুজিবের মাথায় এসে পড়ল। প্রবীণ সহকর্মীরা ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগলেন। কারণ নবীনরা অনেক সময় তাদের নেতা বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে দিতেন না। 

পঁচিশ মার্চের পর দেশে কী ঘটেছিল, কীভাবে স্বাধীনতা ঘোষিত হবার পর মুক্তিযুদ্ধ চলেছিল, সেসব কথাও বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করবার সময় ও সুযোগ বঙ্গবন্ধু দিলেন না। যুদ্ধকালীন এক নেতা ‘তাজউদ্দীন ভারতের দালাল ...’ তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের এ ধারণাকে কিছুটা হলেও মৌনভাবে গ্রহণ করলেন বঙ্গবন্ধু। দুর্দিনের বন্ধু জনারণ্যে হারিয়ে গেল। তার ওপর আরেক অস্বস্তি, আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে কখনও একা কথা বলতে পারতাম না। দু’চারজন উপস্থিত থাকতেনই। সঙ্কোচ এড়িয়ে যদি বলতাম, বঙ্গবন্ধু আমার কিছু নিজস্ব কথা আছে। বলতেন : ‘আরে এরা আমাদের লোক। বলেন কি কথা আছে।’ বক্তব্য বুকে নিয়ে ব্যথা-বেদনা ও অসম্মানের জ্বালা নিয়ে ফিরে আসতাম। কিন্তু শেষের দিকে তিনি সব বুঝেছিলেন;  রীতিমতো ধমক দিয়ে বলতেন : ‘বাইরে যা, কথা বলতে দে।’ কিন্তু ততদিনে সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে।

একদিন দুঃখ করে বলেছিলেন : ‘আপা প্রতিদিন এত লোক আসে কিন্তু কি করলে দেশের ভালো হবে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে সে কথা কেউ বলে না।’ জিজ্ঞেস করলাম : তা হলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে এত লোক আসে তারা বলে কি! ম্লান হেসে উত্তর দিলেন : ছেলের বিদেশ পড়া, জামাইয়ের চাকরি, ভাগ্নের প্রমোশন, শত্রুসম্পত্তি দান, জমি বরাদ্দ এসব বলে ম্লান হাসলেন। তিনি কল্পতরু ছিলেন না, তার ক্ষমতাও ছিল সীমিত, তাই যাদের আশা তিনি পূর্ণ করতে পারেননি তারাই প্রচার করেছে মিথ্যা অপবাদ।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সবার জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা, দেশবাসীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস। তিনি জানতেন, বাংলার মাটি তার জন্য দুর্জয় ঘাঁটি, এখানে তার কোনো ভয়, কোনো সংশয় নেই। কথা প্রসঙ্গে একদিন গল্প করছিলেন, তিনি মার্শাল টিটোকে নিয়ে দাউদকান্দি গিয়েছিলেন, উদ্দেশ্য নৌ-ভ্রমণ। ঘাটের কিছু দূরে লঞ্চ থেমেছে। গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে ন’দশ বছরের একটি ছেলে চিৎকার করছে, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু অনেকবার তাকে কাছে আসতে বললেন, সে হাত নেড়ে অপারগতা জানাল, তারপর লোকজনকে বলায় ওকে ধরে নিয়ে এলো। ছেলেটি উলঙ্গ। বঙ্গবন্ধু অশ্রুসজল চোখে বললেন, ‘আপা, ওকে খাবার, পরনের বস্ত্র কিছুই দিতে পারিনি; তবুও বলেছে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। পারলাম না শুধু ফর্সা কাপড় পরা লোকগুলোর সাথে।’ বঙ্গবন্ধু থাকলে দেখতেন শুধু তিনি নন, এ ফর্সা কাপড় পরা লোকগুলো কতবার পীরবদল করেছে এবং করে যাচ্ছে।

আমরা শেখ মুজিবের কাছে সব কিছু চেয়েছিলাম, যা আমাদের প্রাপ্য নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা-ই। তার হাতে আলাউদ্দীনের যাদুর চেরাগ ছিল না, তিনি তাই সকলের উদর পূর্তি করতে পারেননি, নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন।

ছোট-বড় অনেক কিছুই তাকে অনিবার্য পরিণামের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু চলে যাবার মাস দু’তিন আগে একদিন বিমানবন্দরে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বললাম: ‘কাদের, তোমার বাঘ তো খাঁচায় বন্দি হয়েছে।’ কাদের তার বীরজনোচিত ভঙ্গিতে বলল : ‘খালাম্মা, আমার বাঘ সময় হলে লোহার খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারবে।’ কাদেরের মতো শিশুসুলভ সরল বিশ্বাস আমার ছিল না। তবুও ভাবি, যদি কাদেরের কাছে হেরে যেতাম তা হলেই সেই পরাজয় আমাকে জয়ী করত।

যাক, বঙ্গবন্ধু চলে যাবার পর নেতা ও কর্মীরা কেউ কেউ জেল-জুলুমের শিকার হলেন, কেউ গা-ঢাকা দিলেন, কেউ বা অম্লান বদনে উল্টো পাগড়ি বাঁধতে উদ্যোগী হলেন। আমার যতদূর মনে পড়ে, ফণীভূষণ মজুমদার ও সাজেদা চৌধুরীই প্রথম রিকশার পর্দা ফেলে দলে কাজ করতে এগিয়ে এলেন। তাদের উদ্যোগে পনের আগস্ট পালিত হলো হোটেল ইডেনের ছাদে। সভাপতি মালেক উকিল, মূল বক্তা আবু জাফর শামসুদ্দিন, সঙ্গে দোহাররূপে আমি ও জাতিসংঘ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসেন। কবীর চৌধুরী সাহেবের আসবার কথা ছিল কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। ওখানে শ্রোতার চেয়ে পুলিশ ছিল বেশি। 

মোস্তফা সারওয়ারের ছোট ভাই খোকা আমাকে কোনোমতে বের করে এনে তার গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেল। সব জায়গা থেকে, এমনকি কণ্ঠ থেকেও মুজিবের নাম মুছে ফেলতে প্রয়াসী হলেন কেউ কেউ। তারপর ধীরে ধীরে এগুলো এক-পা দু’পা করে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, নেতাকর্মী যারা ছিলেন তারা মুক্তি পেলেন। শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে এসে দলে সভানেত্রীর দায়িত্ব নিলেন। আওয়ামী লীগ সংগঠিত হলো।

কিন্তু একি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ? কোথায় সে নেতৃত্ব? কোথায় সে দুঃখী মানুষের জন্য প্রাণোৎসর্গ? পরস্পরের মধ্যে বিরোধ, সকলেই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করছে। নিষ্ঠাবান কর্মীরা, বর্ষীয়ান নেতারা কতটুকু মর্যাদা পাচ্ছেন দলের ভেতরে? কেন দলীয় সদস্যদের বাইরে যেতে হচ্ছে? বিএনপির ভাবমূর্তি এ দু’বছরে যেটুকু ক্ষুণ্ন হয়েছে, আওয়ামী লীগ তো সেটুকুও তার দিকে টেনে আনতে পারেনি। ক্ষমতার অঙ্ক না কষে একতাবদ্ধ এগিয়ে না এলে ভবিষ্যতের গর্ভে কি আছে জানি না। আওয়ামী লীগ এত বড় একটা দল, তার নিজস্ব কোন সংবাদপত্র নেই, এ  একটা আশ্চর্য ব্যাপার।

পথেঘাটে রাম-রহীম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দলীয় অতীত সম্পর্কে কটূক্তি করছে, তার উপযুক্ত জবাব নেই। বললে উত্তর পাই, আমরা সভায় বলেছি। একি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান যে সবাই সব কাজ ফেলে সভায় দৌড়াবে? একে অপরের প্রতি দোষারোপ চলছে কিন্তু মূল বিরোধিতার জবাব দেবার কেউ নেই। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সংসদ আজও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরবার জন্য সচেষ্ট। কিন্তু তাদের জন্য পুষ্টি যেখান থেকে আসা প্রয়োজন সে যথাকর্তব্য কি পালিত হচ্ছে?

আজ পনের আগস্টের সামনে এসে মস্তক স্বততই নত হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায়, আর নিজের অক্ষমতায়। পিতৃ পরিচয় দিতে যে ব্যক্তি অক্ষম সে শুধু সমাজে হেয় নয়, উপাঙক্তেয়। আমরাও আজ নিষ্ফলের দলে। তবে একথা নির্ভীক কণ্ঠে বলা যায়, আজ হোক আর কাল থেকে, সসম্মানে ফিরে আসবেন বঙ্গবন্ধু তার স্বমর্যাদায়, তার সন্তানেরাই তাকে পুনরুজ্জীবিত করবে এ বিশ্বাস আমার, আপনার, আমাদের সকলের।
(এই লেখাটি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু গ্রন্থ থেকে নেয়া)

এএইচ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি