ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

১৬৬তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪৬, ৩০ জুন ২০২১

আজ ৩০ জনু, সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। এ বছর দিবসটির ১৬৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৮৫৫ সালের আজকের এই দিনে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা যুদ্ধ শুরু করেছিল। প্রায় দেড় বছর যুদ্ধ শেষে তারা পরাজিত হয়েছিল। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে ১৬৪ বছর পূর্বে ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন তারিখে সাওতাল সম্প্রদা য়ের চার ভাই সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরোর নেতৃত্বে  তারা বৃটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্বক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা।

ইতিহাস হতে আরও জানা যায়, দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ। বহু কষ্ট করে জঙ্গল কেটে বন সাফ করে তারা তাদের জনপদ গড়ে তুলেছিল। অতীতে যে মাটিতে কোন মানুষের পা পড়েনি, সে মাটিকে তারা বাসযোগ্য করে গড়ে তুলেছিল আর সে মাটিতে ফলিয়েছিল ধান, ভুট্টা, নানা ধরণের সবজি আর সোনালী ফসল। সুখে ছিল তারা দামিন-ই কোহতে। নিজেদের আলাদা একটি জগৎ তৈরী করেছিল তারা। সে জগতে কোন মহাজন, দালাল, জমিদার ছিলনা। কেউ ঋণী ছিলনা তখন। কিন্তু ব্যবসায়ী ও মহাজন শ্রেণী দলে দলে আসতে শুরু করল সাঁওতাল পরগনায়। মহাজন ও ব্যবসায়ী শ্রেণী সাঁওতাল পরগনায় ঢুকে বিপুল পরিমাণ ধান, সরিষা ও অন্যান্য তৈলবীজ গরুর গাড়ী বোঝাই করে নিয়ে যেত। বিনিময়ে সাঁওতালদের দেওয়া হতো সামান্য লবণ, টাকা-পয়সা, তামাক অথবা কাপড়। এখানে বিনিময়ের সময় চরমভাবে ঠকানো হতো সাঁওতালদের। কিছু অর্থ, কিছু চাল বা অন্য কোন দ্রব্য ঋণ দিয়ে দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে বসত মহাজনরা। ফসল কাটার মৌসুম এলে মহাজন শ্রেণী গরুর গাড়ী ও ঘোড়া নিয়ে সাঁওতাল পরগনায় আসত। বার্ষিক আদায়ে আসার সময় মহাজনরা একটি পাথরে সিদুর মাখিয়ে নিয়ে আসত এবং সাঁওতালদের বলত যে, এ পাথরের ওজন নির্ভূল। এ পাথরের সাহায্যে ওজন করে মহাজনরা সাঁওতালদের সমস্ত ফসল তুলে নিয়ে যেত। কিন্তু তারপরও  তাদের  ঋণের বোঝা সামান্য হ্রাস পেত না। মহাজনদের ঋণের সুদের হার ছিল অতি উচ্চ। একজন সাঁওতালকে তার ঋণের জন্য তার জমির ফসল, লাঙ্গলের বলদ এমনকি নিজেকেও বলি দিতে হতো তার পরিবারের কাছ থেকে। আর সেই ঋণের দশগুণ পরিশোধ করলেও পূর্বে যেরুপ ছিল পরেও সেইরুপ ঋণ অবশিষ্ট থাকত।

মহাজন, দালাল, জমিদার কর্ত্তৃক নিরীহ ও সরল  মানুষদের শোষণ ও নির্যাতনে পরোক্ষ মদদ দিতো বৃটিশ সৈন্য বাহিনী। এ কারণে তারা বৃটিশ সেনাবাহিনীর  বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে তা শেষ হয়। সাওতাঁলরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেও ইংরেজ বাহিনীর হাতে ছিলো বন্দুক ও কামান। তারা ঘোড়া ও হাতি যুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা যায়। সাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা বৃটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধে সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরর পর্যায়ক্রমে নিহত হলে ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় ও বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের শ্রমিক ও আদীবাসী ফোরাম হবিগঞ্জ জেলার আহবায়ক স্বপন সাঁওতাল জানান, আমরা প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করলেও করোনার জন্য গতবছর কোন কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। এবারও সীমিত আকারে দুই একটি বাগানে কর্মসূচি পালন করা হবে। 

দিবসটি উপলক্ষে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার চা বাগানগুলোতে বসবাসকারী প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল প্রতি বছর দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করলেও এবার করোনার জন্য কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।
সূত্র : বাসস
এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি