ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোস্তাফা জব্বারের অজানা গল্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩৮, ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২০:১৩, ১৫ এপ্রিল ২০১৮

ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার  মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান চলতি বছরের ২ জানুয়ারি। এর আগে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ( বেসিস) এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তথ্য ও কম্পিউটার খাতকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। বাংলা সফটওয়্যার বিজয়ের উদ্ভাবকও এই গুণী ব্যক্তি।   কম্পিউটারের সাথে তার সখ্যতা কীভাবে গড়ে উঠেছিলে সেই গল্প শুনালেন তিনি।  রাজধানীর একটি হোটেলে চলমান বিপিও সামিট-২০১৮-এর একটি সেশনে তিনি নিজেই শোনালেন  এই গল্প। একুশে টেলিভিশনের পাঠকদের জন্য তা তুলে দেওয়া হলো:

 " তোমাদের মধ্যে কম বেশি সবাই তরুণ। তাই তোমাদের মাঝে এসে আমার ভালো লাগছে। আমার সবচেয়ে পছন্দের বয়স ছয় থেকে চৌদ্দ। এ সময় ওরা কাদামাটির মতো থাকে। তাদেরকে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে গড়ে তোলা যায়। আমি তাদের যে কোনো অনুষ্ঠানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে পারি। কিন্তু পঞ্চাশ বছর বা তার ঊর্ধ্বে যারা আছে তাদের বদলানো যাবেনা। মানুষের আত্মবিশ্বাস থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। ইচ্ছা শক্তি মানুষের চলার পথকে সহজ করে দেয়।

আমি সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। তখন কম্পিউটার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিলনা। আমি সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে ঢাকায় আসি ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২। সাংবাদিকতা করতাম জীবীকার তাগিদে। এক পর্যায়ে তা ছেড়ে দিলাম। পেইন্টিং নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটার নিয়ে নানা জনের মুখে শুনতাম। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সে কম্পিউটার শেখানো হতো। ভর্তি হয়ে গেলাম। প্রথম দিন ক্লাস করলাম। কিছুই বুঝলাম না। শিক্ষক আমাদেরকে অঙ্ক বুঝালেন। ক্লাস শেষ করে শিক্ষককে গিয়ে বললাম, আপনি আমাদেরকে অঙ্ক শেখাচ্ছেন কেন? কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয় সেটা শিখান। শিক্ষক বললেন, কম্পিউটার চালাতে হলে আগে অঙ্ক শিখতে হয়। আমি বললাম, স্যার তাহলে আজকেই আপনার সাথে আমার প্রথম ও শেষ দেখা। এভাবে কম্পিউটার শেখা আমার পক্ষে সম্ভব না।

১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল আমি প্রথম কম্পিউপার কিনি। সত্যি কথা, তখন কম্পিউপারের কিছুই বুঝতাম না। ম্যানুয়েল দেখে দেখে কম্পিউটারের পার্টস গুলো জোড়া লাগালাম। ম্যানুয়েল দেখে প্রিন্টারের সংযোগ দিলাম। ম্যানুয়েল দেখে প্রিন্ট আউট দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তোমরা শুনে আশ্চর্য হবে, প্রিন্ট আউট দিতে আমাকে টানা ২৪ ঘণ্টা চেষ্টা করতে হয়েছিল। কোনো ভাবেই পারিনা। একটা না একটা সমস্যা হয়ে যায়। অবশেষে ২৪ ঘণ্টা পরে পারলাম। আমি স্বভাবতই ঘাড় তেড়া লোক। ইংরেরিতে প্রিন্ট আউট করে খুশি হলাম না। বাংলায় করার জিদ চেপে বসল মাথায়। তখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কম্পিউটারে পত্রিকার কাজ করা হচ্ছে। এর ফলে সীসা দিয়ে হরফ তৈরির ঝামেলা নাই। পরিশ্রম কম।

অবশেষে ১৬ মে ১৮ দিনের মাথায় আমি আমার নিজের কম্পিউটারে বাংলায় পত্রিকা বের করি। আমার একার পক্ষে এ কাজ সম্ভব হতো না, যদি না আমাকে দু`জন লোক সহযোগিতা না করতো। তাদের একজন আবদুল হক। তিনি সচিবালয়ে কাজ করতেন। আরেক জন একটি মেয়ে। তার নাম পলি। এই দু`জন আগে কখনো কম্পিউটার দেখেনি। তোমরা শুনলে হয়তো বিশ্বাস করবেনা, তাদেরকে আমি একবার যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছি, দ্বিতীয়বার তা আর দেখাতে হয়নি। কাজে এতোটা মনোযোগ ছিল তাদের। তোমাদেরকে যারা বলে "তোমাদেরকে দিয়ে হবে না", "তোমরা পারবে না", এমন কথায় পাত্তা দিওনা। তোমরাই পারবে। চেষ্টা চালিয়ে যাও। ধৈর্য হারাবে না। দেখবে, সফলতা আসবেই। ধন্যবাদ সবাইকে।"

টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি