ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাইড্রোজেন বোমা ও আণবিক বোমার পার্থক্য কী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:২২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

যুদ্ধ ও বোমা নিয়ে এখন সরগরম গোটা বিশ্ব৷ উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি, পাল্টা হুমকিতে বারবার ঘুরেফিরে আসছে পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমার কথা ৷

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা। পারমাণবিক বোমার শক্তি বিশ্ববিদিত ৷ কিন্তু তার চেয়েও শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা৷

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধ নিয়ে যে হুমকি, পাল্টা হুমকির পর্ব চলছে, তাতে এই দুটি বোমার প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসছে৷ উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তার কাছে পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা আছে ৷ এর একটাও যদি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তবে গোটা বিশ্ব তার ফল ভোগ করবে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের উপর যখন আমেরিকা লিটল বয় ও ফ্যাট ম্যান ফেলেছিল, তখন কী হয়েছিল, তা কারোরই অজানা নয়৷ দুটোই ছিল পারমাণবিক বোমা ৷ নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় এই বোমা তৈরি করা হয় ৷ বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটালে তার মধ্যস্থিত ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়ামের পরমাণু ভাঙতে থাকে৷ সেখান থেকেই এনার্জি তৈরি হয়৷ যার পরিণতি ইতিমধ্যেই হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দেখেছে বিশ্ব৷

এ-বোমা (অ্যাটোমিক বোম) প্রথম টেস্ট করা হয় মরুভূমিতে৷ জায়গাটি ছিল আমেরিকার নিউ মেক্সিকোয়৷ সময়টি ছিল ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই৷ মনহাট্টন প্রজেক্টের এটি ছিল সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর গবেষনা শুরু হয়৷ ব্রিটেন ও কানাডার সহযোগিতায় আমেরিকা এটি শুরু করেছিল । প্রজেক্টের দেশগুলি মনে করেছিল নাজি জার্মানিও এমনই কিছু পরিকল্পনা করছে৷

১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট আমেরিকা জাপানের হিরোশিমার উপর প্রথম পরমাণু বোমাটি ফেলে৷ বোমার নাম ছিল লিটল বয়৷ বিস্ফোরণের ফলে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷ তবে অবস্থার এখানেই শেষ নয়৷ এখনও পর্যন্ত এর প্রভাব বয়ে চলেছে হিরোশিমায়৷ এর ঠিক ৩ দিন পর নাগাসাকির উপর ফ্যাট ম্যান ফেলে আমেরিকা৷ সেখানে ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷ এই বোমা দুটির বিস্ফোরণের ফলে যে এনার্জি উত্পন্ন হয়, তা প্রায় ২০ হাজার টিএনটি (ট্রাই নাইট্রো টলুইন)-র সমান৷

দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায় সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ ১৯৪৯ সালে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তারা৷ ব্রিটেন হল তৃতীয় দেশ যেটি পারমাণবিক বোমা টেস্ট করে৷ চিন, ফ্রান্স, ভারত, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের কাছে পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷ ইজরায়েলের কাছে এই বোমা আছে কিনা তা জানাতে অস্বীকার করেছে তারা৷

পারমাণবিক বোমার থেকেও শক্তিশালি হাইড্রোজেন বোমা৷ এর আর এক নাম থার্মোনিউক্লিয়ার বোম৷ হাউড্রোজেনের আইসোটোপের নিউক্লিয় সংযোজন পদ্ধতিতে এই বোমা কাজ করে৷ এই বোমা বিস্ফোরণের ফলে যে উত্তাপ তৈরি হয় সেটি সূর্যের মধ্যস্থিত শক্তির সমান৷ এখনও পর্যন্ত হাইড্রোজেন বোমা কোনো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি৷

হাইড্রোজেন বোম দুই প্রক্রিয়ায় বিস্ফোরণ হয় ৷ প্রথমে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ হয়৷ এর ফলে প্রচুর পরিমাণে তাপ উত্পন্ন হয়৷ তারপর সেটি নিউক্লিয়ার ফিউশনকে উদ্দীপ্ত করে৷ গোটা প্রক্রিয়ায় বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে৷

মার্কিন সেনারা প্রথম হাইড্রোজেন বোমা টেস্ট করে ১৯৫২ সালে৷ পারমাণবিক বোমার চেয়ে এটি ৭০০ গুণ বেশি শক্তিশালী৷ এর এক বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজের হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়৷ সালটি ছিল ১৯৬১৷ তসার বোম্বা নামে একটি হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তারা ৷ বিস্ফোরণের ফলে প্রায় ৫৭ মেগা টন শক্তি উত্পন্ন হয়৷ তবে এখনও পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি৷ ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া একটি হাইড্রোজেন বোমা টেস্ট করে৷ উত্তর কোরিয়া ৩ সেপ্টেম্বর আরও একটি হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা করে।

সূত্র: কলকাতা টুয়েন্টি ফোর

/এম/এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি