ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশের মোবাইল খাত (পর্ব-১)

গার্মেন্টের মতো বড় শিল্প হতে পারে মুঠোফোন ডিভাইস

প্রকাশিত : ১৮:০৫, ২৮ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৮:০৫, ২৮ মে ২০১৮

মোবাইল হ্যান্ডসেট ডিভাইসের বাজার বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনাময়ী এক খাত। এর বর্তমান বাজার ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী দুই বছর পর (২০২০ সাল নাগাদ) তা বেড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। এমনকি তৈরি পোশাকের মতো বিশাল এক শিল্প হয়ে উঠতে পারে মুঠোফোন যন্ত্রাংশের এই বাজার। এই খাতে বহু সংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট ও নেটওয়ার্ক নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

মোবাইল হ্যান্ডসেট খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে হ্যান্ডসেট ডিভাইসের বাজার ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। ২০২০ সালে এই বাজারের আর্থিক মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৫ হাজার কোটি টাকায়। এমনকি ছাড়িয়ে যেতে পারে এই সংখ্যাও। তাই এই খাতের দিকে এখনই আরও মনযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল গ্রাহক আছেন। তবে অনেকে একাধিক মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করায় সঠিক গ্রাহক সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১০ কোটি। এদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। বাকি ৭০ শতাংশই এখনও ফিচার ফোন (বাটনযুক্ত) মুঠোফোন ব্যবহার করেন।

সম্প্রতি দেশে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোর-জি চালু হওয়ায় স্মার্টফোনের চাহিদা বেড়েছে ফিচার ফোন ব্যবহারীদের মধ্যে। আর তাই প্রায় সাত কোটি গ্রাহক আছেন যাদের কাছে স্মার্টফোনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া আরও অন্তত চার কোটি গ্রাহক আছেন যারা এখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তাই সব মিলিয়ে মোবাইল খাতে প্রায় ১১ কোটি গ্রাহক আছে যাদেরকে ঘিরে এই খাতে অপেক্ষা করছে অপার এক সম্ভাবনা।

তবে বাংলাদেশের মুঠোফোন বাজার এখন পুরোটাই আমদানি নির্ভর মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর নির্ভরশীল । ২০১৫ সালে ফিচার ও স্মার্টফোন মিলিয়ে মোবাইল আমদানি হয় প্রায় ২৭ মিলিয়ন। ২০১৬ সালে ৩১ মিলিয়ন আর ২০১৭ সালে তার পরিমাণ ৩০ লাখ বেড়ে আমদানিকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংখ্যা হয় ৩৪ মিলিয়ন। মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, চলতি ২০১৮ সালে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন হ্যান্ডসেট আমদানি হতে পারে । আর ২০২০ সালে আমদানিকৃত মোবাইলের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৪১ মিলিয়নেরও বেশি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আমদানি করা মুঠোফোনের সংখ্যার দিক থেকে সবথেকে বেশি সংখ্যক স্মার্টফোন আমদানি করে শীর্ষে আছে দক্ষিণ কোরিও ব্র্যান্ড স্যামসাং। বাজারে তাদের দখল প্রায় ২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় আর তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে সিম্ফোনি (২১ শতাংশ) এবং হুয়াওয়ে (১৩ শতাংশ)। এছাড়া পরের অবস্থানগুলোতে আছে অপ্পো, ওয়ালটন, লাভা, শাওমি, আইটেল ও নকিয়া।

তবে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোন মিলিয়ে বিক্রির দিক থেকে ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস) শীর্ষে আছে সিম্ফোনি (২৭ শতাংশ)। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ট্রানসন হোল্ডিংসের ব্র্যান্ড আইটেল (১২ শতাংশ)। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে ওয়ালটন (৯ শতাংশ)। স্যামসাং, হুয়াওয়ে বা শাওমির মতো ব্র্যান্ডগুলোর অবস্থান এর পরের দিকে।

দেশের বাজারের মুঠোফোনের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ ডিভাইস স্মার্টফোনের। কিন্তু সামনের সময়গুলোতে স্মার্টফোনের বাজার ফিচার ফোনের থেকে বাড়বে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনও আসতে যাচ্ছে বাজারে।

বর্তমানে সীমিত পরিসরে দেশেই হ্যান্ডসেট তৈরি করছে ওয়ালটন। এছাড়া চলতি বছরেই দেশে উৎপাদনে যেতে পারে স্যামসাং, আইটেল (ট্রানসন) এবং সিম্ফোনি। এর বাইরে দেশে মোবাইল ফোন প্রস্তুত করার জন্য কারখানা স্থাপনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে আরও ৩০টি প্রতিষ্ঠান। মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে যদি মোবাইল ফোন প্রস্তুত করা যায় তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা রফতানিও করা যাবে বিশ্ব বাজারে। আর সেসব মুঠোফোনের উৎপাদন ব্যয় চায়নার থেকে হবে অনেক কম। মান হবে ভালো।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ট্রানশন হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক জানান, ‘চায়না এখন আর লাইট (ক্ষুদ্র) ইন্ডাস্ট্রির দিকে সেভাবে মনযোগী না। তারা এখন ভারী আর বড় ধরনের ইন্ডাস্ট্রির দিকে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আমরা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারি। ভারত কিছু কিছু নিয়ে নিচ্ছে। তবে এখনও অনেক সুযোগ আছে আমাদের জন্য’।

তিনি আরও বলেন, চায়নাতে যে লেবার কস্ট (শ্রম ব্যয়) তার থেকে আমাদের এখানে লেবার কস্ট অনেক কম। আমরা যদি এই ইন্ডাস্ট্রিটা নিজের করে নিতে পারি তাহলে প্রচুর কর্মসংস্থান আর বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। যেমন স্যামসাং বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ করেছে। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের মতো আকার পেতে পারে এই ইন্ডাস্ট্রি। নিজেদের দেশ তো বটেই বাইরের দেশেও মোবাইল ফোনের জন্য বিশাল এক গ্রাহক শ্রেণী অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমবিএ) সভাপতি ও টেলিলিংক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু বলেন, বাংলাদেশে এখন বাইরে থেকে যেসব সেট আসে তার ওপর ৩০.১৯ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক দিতে হচ্ছে। তবে আমরা যদি এখানেই মুঠোফোন তৈরি করি তাহলে শুল্ক দিতে হবে ১৬ শতাংশের মতো। অর্থ্যাৎ মুঠোফোনের মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ এখানেই কমে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশে দক্ষ শ্রমিক আছে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো যায়। সরকার যদি এই খাতে গুরুত্ব দেয় তাহলে বাংলাদেশ থেকেই দেশের বাইরে মুঠোফোন রপ্তানি করা সম্ভব। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু মুঠোফোন এখন আমরা রফতানি করছি। বিষয়টি এখনও সেভাবে প্রকাশ পায়নি কারণ তা পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে। ইন্ডিয়া, ইতালির মতো দেশে যাচ্ছে এগুলো।

বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন এই খাতের বিনিয়োগকারীরা। জিএসএম গ্লোবাল এসোসিয়েশনের এক তথ্যমতে, মোবাইল ফোন ব্যবহারীদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে এমনিতেই বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে আছে। সেই হিসেবে বড় একটি বাজার এমনিতেই এখানে আছে। এর সঙ্গে যদি দেশে হ্যান্ডসেট বানানো যায় তাহলে তার বিস্তৃতি বাড়বে আরও বড় পরিসরে।

বাংলাদেশের মোবাইল খাত নিয়ে পরবর্তী প্রতিবেদন পড়ার জন্য চোখ রাখুন ইটিভি অনলাইনে। দেশের অবৈধ ও নকল মুঠোফোনের বাজার নিয়ে বিস্তারিত থাকবে সেই প্রতিবেদনে।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি