ঢেঁড়শের যত গুণ
প্রকাশিত : ০৯:৩৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নানা রকমের সবজির মধ্যে ঢেঁড়শ এমন একটি সবজি যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যদিও এটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। তবে কম বেশি সব সময় বাজারে পাওয়া যায়। ঢেঁড়শ ভাজি হিসেবে বেশি প্রচলিত, অনেকেই ঢেঁড়শ ভর্তা করেও খান। এই সবজিটি প্রায় সবাই পছন্দ করেন।
ঢেঁড়শের অন্য নাম হলো ভেন্ডি। মালভেসি পরিবারের এক প্রকারের সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি তুলা, কোকো ও হিবিস্কাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঢেঁড়শ গাছের কাঁচা ফলকে সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus; অথবা Hibiscus esculentus L।
ঢেঁড়শ গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা ১০-২০ সেমি দীর্ঘ এবং চওড়া। পাতায় ৫-৭টি অংশ থাকে। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া, পাঁপড়ির রঙ সাদাটে হলুদ, ৫টি পাঁপড়ি থাকে। প্রতিটি পাঁপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপী বিন্দু থাকে। ঢেঁড়শ ফল ক্যাপসুল আকারের, প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, এবং এর ভেতরে অসংখ্য বিচি থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়শের পুষ্টিগত মান
শক্তি ১৪৫ কিজু, শর্করা ৭.৬ গ্রাম, ফাইবার ৩.২ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.১ গ্রাম, প্রোটিন ২.০ গ্রাম, ভিটামিন সি (২৫%) ২১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম (৮%) ৭৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম (১৬%) ৫৭ মিলিগ্রাম।
ঢেঁড়শ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি। যা আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে। ঢেঁড়শে রয়েছে সলিউবল ফাইবার পেকটিন যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে। ঢেঁড়শের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে। এবার জেনে নেই পুষ্টিগুণে ভরপুর ঢেঁড়শের উপকারিতা সম্পর্কে-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ঢেঁড়শের মধ্যে থাকা উপকারী ফাইবার দেহের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে রাখে। তাই ডায়াবেটিস কমাতে ঢেঁড়শ অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। ডায়াবেটিক রোগীদের প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ঢেঁড়শ রাখা উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ঢেঁড়শের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এগুলোও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা রোধ করে
ঢেঁড়শের আয়রন ও ভিটামিন কে দেহে রক্ত জমাটের সমস্যা রোধ করে, দেহে প্রয়োজনীয় লাল প্লেটলেট তৈরি করে এবং দেহের দুর্বলতা রোধ করে থাকে। তাই রক্তশূন্যতার সমস্যায় বেশি করে ঢেঁড়শ খাওয়া উচিত।
ওজন কমাতে সহায়ক
ঢেঁড়শে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম তাই এটি ওজন কমানোর ডায়েট মেন্যুতে রাখতে পারেন। ঢেঁড়শের ফাইবার ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরা রাখে, তাই ক্যালরি বহুল খাবার থেকে বিরত থাকা যায়।
চুলের যত্নে
ঢেঁড়শ চুলের জন্য খুব উপকারী, এটি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে, খুশকি ও উকুন রোধ করে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও ঢেঁড়শ ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল কমায়
ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন যা দেহ থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রতিরোধ করে।
হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ঢেঁড়শে রয়েছে অধিক পরিমাণ আঁশ এবং পেকটিন যা হজমে সাহায্য করে। পেকটিন অন্ত্রের স্ফীতিভাব কমায় এবং অন্ত্র থেকে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার করে। তাছাড়া ঢেঁড়শের ফাইবার বা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং সহজে হজম হয় বলে বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করে।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে
ঢেঁড়শ হাঁপানী রোগে খুবই উপকারী। ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। প্রাচীন হারবাল চিকিৎসায় হাঁপানি রোগ সারাতে ঢেঁড়শকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারা করা হত।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
ঢেঁড়শে বিদ্যমান ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন এবং লিউটিন চোখের গ্লুকোমা এবং চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও ঢেঁড়শ হাড় মজবুত রাখে। দাঁত ও মাড়ির রোগেও ঢেঁড়শ উপকারী। ঢেঁড়শের নানা ধরনের উপাদান আমাদের ত্বকের সমস্যা ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ঢেঁড়শ গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে এবং মিসক্যারেজ হওয়াও রোধ করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন ঢেঁড়শ।
এএইচ/