ঢাকা, মঙ্গলবার   ১২ আগস্ট ২০২৫

‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে ফিরতে চান হাসিনা

নাজমুল হক রাইয়ান

প্রকাশিত : ২১:২৬, ১১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ২১:২৯, ১১ আগস্ট ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হটিয়ে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আবারও ক্ষমতায় বসানোর প্ল্যান করছে একটি চক্র। একের পর এক চক্রান্ত চলছে। তাদের এই চক্রান্ত বহুমাত্রিক, ধাপে ধাপে সাজানো, আর প্রতিটি ধাপেই লুকিয়ে ভয়ঙ্কর নাশকতার আঁচ। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনা, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এক অভিজ্ঞ ও সমন্বিত টিম দিনের পর দিন ছায়ার মতো তদারকিতে সম্প্রতি এই চক্রের ‘আগস্ট রিটার্ন হিট প্ল্যান’ ভেস্তে গেছে। তবে চক্রটি এখনো বসে নেই। 

ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম প্ল্যান ভেস্তে গেলেও খেলা এখানেই শেষ নয়। রাজনৈতিক অন্ধকারের গোপন করিডরে বসে তারা ইতিমধ্যেই চালু করেছে ‘হিট প্ল্যান-২’। নতুন পরিকল্পনার মূল সময়সীমা, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। এই তিন মাসই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশকে এক নতুন ঝড়ের মুখে ঠেলে দেওয়ার প্রস্তুতিপর্ব। 

পুলিশ সদরদপ্তরের উচ্চপদস্থ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, দ্বিতীয় ধাপের ছক আগের চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, পরিকল্পনা-২র প্রথম পদক্ষেপ হবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। সেখানকার কৌশলগত কিছু এলাকায় নাশকতার আগুন জ্বালিয়ে কেন্দ্রীয় শাসনকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা হবে। এই গোপন অভিযানে সমন্বয় করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুবউল আলম হানিফ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আরও অনেকে। 

তাদের যোগাযোগ ও সমন্বয়ের জন্য কলকাতা ও দিল্লিতে ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে দুটি গোপন অফিস। সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এ চক্র। আর তাদের ছায়াসঙ্গী হিসেবে কাজ করছে কিছু ‘বেঈমান’ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যারা আড়াল থেকে প্রয়োজনীয় রসদ ও তথ্য সরবরাহ করছে।

এই চক্র এগোচ্ছে  ‘থ্রি টার্গেট’ সামনে রেখে। প্রথম লক্ষ্য ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেওয়া। দ্বিতীয় লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঠেকানো। আর তৃতীয়, সবচেয়ে বিপজ্জনক লক্ষ্য, দেশে এমন ধারাবাহিক ঘটনা ঘটানো, যা ধীরে ধীরে পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। 

সৃষ্ট “প্রতিবিপ্লবের আগুন”-এ তখন যেন শেখ হাসিনা ‘জনতার ত্রাণকর্তা’ রূপে নাটকীয়ভাবে ফিরে এসে আবার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারেন।

যেভাবে সক্রিয় হচ্ছে প্ল্যান-২।  গোপনে প্রস্তুত করা হচ্ছে লজিস্টিক নেটওয়ার্ক, গোপন তহবিল, আর অনুগত ক্যাডার বাহিনী। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু নদীবন্দর, কৌশলগত সড়ক ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোকে নাশকতার প্রথম টার্গেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, ঢাকায় সরকারবিরোধী উত্তেজনা ছড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এবং প্রোপাগান্ডা ভিডিও ছড়ানোর কাজও চলছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। প্রথম ধাপের মতো এবারও সেনা, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর একটি সমন্বিত ‘শ্যাডো টিম’ ছায়ায় থেকে নজর রাখছে প্রতিটি গতিবিধির ওপর। তাদের হাতে আছে যোগাযোগ ট্র্যাকিং সিস্টেম, ফিল্ড সোর্স এবং গোপন তথ্যদাতা নেটওয়ার্ক। তবে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় ধাপের ছক অনেক বেশি কৌশলী, কারণ এবার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক লবিং, সীমান্তপারের রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা এবং আর্থিক জোট।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ এক পরীক্ষা, তারা কি দ্বিতীয় দফার ঝড়কে আগাম থামাতে পারবে, নাকি ষড়যন্ত্রকারীরা সত্যিই দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে ফেলবে? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে সময়ের স্রোতে। 

কিন্তু নিশ্চিত একটি বিষয়, পরবর্তী কয়েক মাস বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে হতে যাচ্ছে এক ভয়াবহ সময়।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি