ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আলোচনাসভায় বক্তারা

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে দেশে বিদেশে জনমত গড়ে তুলবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ

তানভীর সুমন

প্রকাশিত : ২০:২৪, ২৫ মার্চ ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে দেশে বিদেশে আবারও সোচ্চার হবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। যতোদিন পর্যন্ত দাবিটি পূরণ হবে না ততোদিন প্রবাসী বাঙালিদের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।  রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সোমবার অনুষ্ঠিত ভয়াল ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবসের আলোচনাসভায় উঠে আসে কালরাতের আদ্যোপান্ত।  

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল-যিনি সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরীর জামাতা।   

প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ৫৩ বছরের বাংলাদেশ ২১ বছর ধরেই চলেছে উল্টোপথে। মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পাকিস্তানীদের এদেশীয় চক্র রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেছে। আইএসআইকে খুশি করতে তাদের সন্তানেরা জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত হয়ে প্রগতিশীলদের হত্যা করেছে। এদেশের মানুষ ২৫ মার্চ শোক জানাতে পারেনি। এমনকি ৭ মার্চ শেখ মুজিবের ভাষণ বাজানো সম্ভব হয়নি। যত্রতত্র পুলিশ পিটিয়েছে, মামলা দিয়েছে। সেসব বাধা উতরে গণতন্ত্রের নেত্রী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে বিস্ময়কর স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। আশা করি স্বাধীনতাকামী বাঙালির চেতনার ফল হিসেবে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অল্পদিনে আদায় হবে। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পিতা রাজাকার ছিলেন উল্লেখ করে নানক আরও বলেন, বিএনপি ২৫ মার্চ পালন করে না। কারণ তাদের চেতনায় এখনো পাকিস্তান। তাই তারা বাংলাদেশের অন্যতম মিত্র ভারত বিরোধিতার মাধ্যমে স্বাধীনতার মাসে নতুন করে জানান দিচ্ছে তাদের পাকপ্রীতি। নতুন প্রজন্মের জাগরণে বিএনপির এ আস্ফালন ধুলিস্যাত হয়ে যাবে। 
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দ্য গড়তে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। বৈঠকে সংগঠনটির আহ্ববায়ক বিশিষ্ট অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আজ থেকে সম্প্রীতির প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমি কর্মী হিসেবে সম্পৃক্ত থাকবো। সংগঠনের সমস্ত কর্মকান্ডে ব্যাপৃত হয়ে দেশে বিদেশে কাজ করবো। সবাই মিলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোই আমাদের আদর্শিক যুদ্ধ। 
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পাওয়া সংগঠক এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. উত্তম বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, মেজর (অব.) আফিজুর রহমান প্রমুখ।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের প্রবাসী সংগঠকেরা জাতিসংঘের কাছে কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের দাবি জানাবে তার প্রাথমিক রূপরেখা তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ধারণা, একসঙ্গে লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আমরা ২৫ মার্চ গণহত্যার স্বীকৃতি পাব। দেশে বিদেশে আমাদের সংগঠকেরা কাজ করছেন। কাক্সিক্ষত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সম্মিলিতভাবে সোচ্চার থাকবো। আমাদের সরকার জোড়েসোড়ে কাজ করছে। বিভিন্ন সংগঠনও মাঠে রয়েছে। আশা করি আমাদের সাফল্য আসবেই। এরইমধ্যে রাষ্ট্র গণহত্যার দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালির দাবি পূরণ করতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মহলে কথা বলেছেন। 

বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যার বিষয়গুলো বিভাবে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত তা প্রমাণসহ তুলে ধরেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।  তাঁর অভিমত, আর্জেন্টিনা, কানাডা, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণহত্যার মতো ঐতিহাসিক বিষয় ক্লাসে গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হয়। অথচ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সবের নজির নেই বললেই চলে। 

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, টিক্কা খাঁন, রাও ফরমান আলীর দোসরেরা এখনও সোচ্চার। তারা শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সব বয়সী মানুষের মধ্যে জনমত গড়ে তুলে এদের বিচার করা দরকার। 
২৫ মার্চ কাল রাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী আলীম চৌধুরীর সহধর্মিণী একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। তিনি বলেন, জাতিকে মেধাশূণ্য করতেই ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা। একদিকে ঢাকায়  সভা আহ্বান অপরদিকে নৃশংস হত্যার নীলনক্সা। এতেই বোঝা যায় পাকিস্তানীরা কতোটা ভয়ঙ্করভাবে বাঙালি নিধন করার পাঁয়তারা এঁটেছিল। 

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে একদিন হয়তো তাবৎ বিশ্ব দিনটিকে গণহত্যার মর্যাদা দেবে।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধগবেষক আব্রহাম লিংকন-যিনি সম্প্রীতি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার আহ্ববায়ক। এ বৈঠকে বলেন, পাকিস্তানীরা নিজেই স্বীকার করেছে যে, প্রতিদিন গড়ে তারা ৬ থেকে ৭ হাজার বাঙালি হত্যা করেছে। দেশি-বিদেশি জার্নাল, জাতিসংঘ ও প্রবাসী সাংবাদিকেরা এসব তথ্য বহু আগেই প্রকাশ করেছে। এরপরও কিছু মুর্খ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এদেরকে প্রতিহত করে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। কুড়িগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘরসহ গবেষণাধর্মী গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছেন আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেন, একাত্তরে পিচ কমিটি রেজ্যুলেশন করেই হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে। কবে কাকে কিভাবে হত্যা করবে, কার বাড়িতে আগুন দেবে, কোন এলাকায় নির্যাতন চালাবে তার সবই লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত নিত রাজাকার ও পাকিস্তানীরা মিলেমিশে। যার ডকুমেন্ট জাদুঘরে রক্ষিত। এরপর কোনো ধরণের মিথ্যাচার সাজে না তাদের। সুতরাং স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার লাগাতারভাবে চালাতেই হবে।
ডা. উত্তম বড়–য়া বলেন, জিয়া ও এরশাদের কারসাজিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোমায় চলে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতার চেতনার নবজাগরণ ঘটেছে। এটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। 
অন্যদের মধ্যে গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের অন্যতম সংগঠক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, সাইফ আহমেদ, আবু তালেব ফকির, একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ড. অখিল পোদ্দার, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান, কলামিস্ট তাপস হালদার, রাজিব কর প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সংগঠন ও রাষ্ট্রের দাবির প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন আইনপ্রণেতা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ একটি আইন প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভুত কংগ্রেসম্যান রো খান্নার ও কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট ১৯৭১ সালে বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস কর্মকান্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য এই আইন পেশ করেন। সম্প্রীতি বাংলাদেশসহ আরও কিছু সংগঠন অনেকদিন ধরেই রাষ্ট্রের কাছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে লাগাতারভাবে দাবি জানিয়ে আসছে।     
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি