আকাশ থেকে তেহরান খুব সুন্দর, যে কারণে বললেন ইসরায়েলি পাইলট
প্রকাশিত : ১১:০৩, ২৭ জুন ২০২৫

ইরানের পরমাণু স্থাপনা ও অন্যান্য স্থানে বোমা ফেলা এক ইসরায়েল পাইলট বলেছেন, তেহরান ওপর থেকে দেখতে খুবই সুন্দর। সুযোগ হলে তিনি ইরানের রাজধানী শহরটিতে যেতে চান। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর রিজার্ভ নেভিগেটর ‘এ’ নামের এক পাইলট এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন যেন পুরো একটা বছর কেটে গেল।’ তিনি সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংসে ইসরায়েলের দাবি করা অভিযানে অংশ নেন। এই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন।’ ১৩ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত চলা এই অপারেশনে অংশ নেওয়া ‘এ’ বলেন, ‘এত উত্থান-পতন, এত আনন্দ আর অনিশ্চয়তা—প্রতিটি দিন যেন একটি রহস্য উপন্যাসের বইয়ে বলা গল্পের মতো।’
এই রিজার্ভ পাইলট সাধারণত ইসরায়েলের মধ্যপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ফোর্থ কোয়ার্টারে’ কাজ করেন। এই আন্দোলনের বাৎসরিক সম্মেলনের মাঝেই তাঁর ফোনে আসে ছোট্ট একটি মেসেজ, ‘ভোরবেলায় স্কোয়াড্রনে রিপোর্ট করো। আগামীকালই হচ্ছে—ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক হামলা।’
‘এ’ বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। মনে একটা ক্ষীণ আশাই থাকে, হয়তো কোনো দিন এটা দরকার পড়বে না, হয়তো হুমকি অন্যভাবে সরানো যাবে।’ কিন্তু চারপাশে থাকা হাজারো আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী আর অতিথিদের তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘চমকে দেওয়াই আসল। চারপাশে আমার মা-বাবা, স্ত্রী, বাচ্চারা, ফোর্থ কোয়ার্টারের বন্ধুরা ছিল। অথচ আমাকে এমন ভাব করতে হয়েছে যেন সবকিছু স্বাভাবিক। আমি জানতাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বাসার দিকেও হয়তো ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসবে। কিন্তু যদি কাউকে সতর্ক করি, পুরো মিশনটাই ভেস্তে যেতে পারে। এটা খুব কঠিন অনুভূতি—জীবন বাঁচাতে ঠোঁট কামড়ে চুপ করে থাকা।’
ভোরবেলায় তিনি সন্তানদের বিদায় চুমু দিয়ে বের হন। ‘এ’ বলেন, ‘ওরা বাবার রিজার্ভে যাওয়ার ব্যাপারে অভ্যস্ত। শুধু জিজ্ঞেস করে, কবে ফিরব। বাইরে আমি শান্ত ছিলাম, ভেতরে বুক ধড়ফড় করছিল।’ তাঁর স্ত্রী চোখে চোখ রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ “যা করতেই হয় করো। আমরা আছি, তোমাকে সাহস দিচ্ছি। ” ওই আলিঙ্গনটাই ছিল শুদ্ধ অক্সিজেন।’
অভিযানের ব্রিফিং ছিল স্পষ্ট ও কঠোর। ‘এ’ বলেন, ‘আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হলো, শত্রু অত্যন্ত চালাক, দক্ষ, তাদের কাছে আমাদের ক্ষতি করার মতো সব রকমের অস্ত্র আছে। শুধু তখনই আমরা আক্রমণে যাই, যখন জাতীয় স্বার্থে সেটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে—এটাই সেই মুহূর্ত।’
এই অভিযানের ফ্লাইট প্ল্যান ছিল অত্যন্ত জটিল। দরকার ছিল অতিরিক্ত জ্বালানি, আকাশে থেকেই ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা এবং প্রতিটি সম্ভাব্য ত্রুটি ও বিপর্যয়ের জন্য ‘অন্তহীন চেকলিস্ট’। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে উড়ে যাওয়ার পরও মনে হচ্ছিল সময় যেন মুহূর্তেই কেটে যাচ্ছে। পুরো সময়জুড়ে ছিল প্রায় সম্পূর্ণ রেডিও নীরবতা।
৩০ হাজার ফুট ওপর থেকে ইরানের রাজধানী তেহরানকে দেখে মনে হচ্ছিল শহরটা খুবই শান্ত। তিনি বলেন, ‘এই দৃশ্য আমরা শুধু ছবিতে দেখেছি আগে। বাইবেল উল্লিখিত অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে উড়ে গেছি। ইরানের পাহাড়গুলো দারুণ সুন্দর। শহরটাও যে খুব ভিন্ন কিছু, তা না—সব শহরের মতোই, চারণভূমির মতো শান্ত। হয়তো নিচের মানুষেরা আতঙ্কে ছিল, কিন্তু ওপর থেকে দেখলে সবই স্থির।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা রাখি, একদিন এই শহরে যেতে পারব।’
ইরানের আকাশসীমা পেরিয়ে আসার পরই ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা কমতে শুরু করে। ‘এ’ আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওপর দিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান নিয়ে ওভাবে উড়া সত্যিই পাগলামি। এর পেছনে রয়েছেন টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার, মোসাদের কর্মকর্তা, গোটা গোয়েন্দা বিভাগ—তাদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। ইসরায়েলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মিনিটের মধ্যেই আমরা অবতরণের জন্য সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়ি।’
আরও পড়ুন