ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি শুরু হলো যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সরকারিভাবে বন্ধ্যাকরণের কর্মসূচি প্রথম শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৭ সালে দেশটির ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে করা হয় এ সংক্রান্ত একটি আইন, যাতে বলা হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে অবশ্যই বন্ধ্যাকরণ করতে হবে। এটাই ছিল প্রজনন সংক্রান্ত প্রথম কোন আইন।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের আরো অনেক রাজ্যে এ ধরনের আইন পাস করা হয়। নাৎসিরা পরে ইহুদিদের বন্ধ্যাকরণের জন্যে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বর্ণবাদী প্রজনন আইনকে নজির হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

পরে ১৯৭০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে করা এসংক্রান্ত আইনগুলো বাতিল করা হয়েছিল। তখন নারীবাদ এবং যৌনতার বিষয়ে বিপ্লবের প্রসার ঘটার কারণে জন্মনিরোধক বড়ির জনপ্রিয়তাও বাড়তে শুরু করে।

কিন্তু ঠিক এই একই সময়ে ফিলিপিন, ভারত ও বাংলাদেশসহ ঔপনিবেশিক বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বন্ধ্যাকরণের কর্মসূচি শুরু হয়। এজন্যে অর্থ দেওয়া হতো চীন এবং পেরুকেও।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারীকে বন্ধ্যাকরণ করা হয় ভারতে। ভারতই হচ্ছে বিশ্বের প্রথম কোন দেশ যেখানে পরিবার পরিকল্পনার জন্যে গঠন করা হয়েছিল সরকারি বিভাগ। তাদের কাজই ছিল মূলত বন্ধ্যাকরণ।

ভারত সরকার এই কর্মসূচি জোরেশোরে শুরু করে ১৯৭০ এর দশকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ তখন ভারতকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং ফোর্ড ফাউন্ডেশন।

সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা দপ্তরের পরিচালক আর টি র্যাভেনহোল্ট বলেছিলেন সরকারের লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বে সন্তান জন্মদানে সক্ষম যত নারী আছে তার এক চতুর্থাংশের বন্ধ্যাকরণ। এদের সংখ্যা ১০ কোটি।

তার যুক্তি ছিল - যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে। আর সেকারণে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখাও তাদের দায়িত্ব। কিন্তু এজন্যে পুরুষদের পরিবর্তে বেছে নেওয়া হয়েছিল নারীদেরকেই।

পরিবার পরিকল্পনার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের বহু দেশকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এই কর্মসূচিকে বলা হয় ইউএসএইড। ২০১৪ সালে এই কর্মসূচির উদ্যোগে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছিল সারা বিশ্বে বন্ধ্যাকরণের সংখ্যা বেড়েছে।

ভারতে পুরুষদের লক্ষ্য করেও এরকম একটি কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল যার আওতায় নিম্ন আয়ের ৬০ লাখ পুরুষকে ভ্যাসেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে অক্ষম করে তোলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে ২,০০০ পুরুষের মৃত্যুর পর পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে সরকার তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে।

এর আগে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সামনে একটা টার্গেট ছিল যে তাদেরকে এতো সংখ্যক নারীর লাইগেশন করাতে হবে। কিন্তু এরপর থেকে তারা খাবার বড়ির মতো অস্থায়ী পদ্ধতির পেছনে অর্থ খরচ করতে শুরু করে।

সরকারি উদ্যোগে গত দু`বছর ধরে চলছে মিশন পরিবার বিকাশ নামের একটি কর্মসূচি, এর আওতায় তিন ধরনের হরমোনাল পদ্ধতির ব্যবহারের জন্যে লোকজনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যার একটি প্রোজেস্টিন-ভিত্তিক জন্মনিরোধক বড়ি।

তারপরেও ভারতে যে বন্ধ্যাকরণ শুধু জনপ্রিয় সেটাই নয়, এই পদ্ধতি ব্যবহারের সংখ্যাও বাড়ছে। জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক দশকে সারা বিশ্বে বিবাহিত কিংবা দাম্পত্য সম্পর্কে আছে এরকম নারীদের মধ্যে বন্ধ্যাকরণের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে কমে গেছে। কিন্তু ভারতে এই সংখ্যা ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। বন্ধ্যাকরণের জন্যে সরকারি ক্যাম্পও চালু ছিল ২০১৬ সাল পর্যন্ত।

যুক্তরাষ্ট্রেও এই বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি খাবার বড়ির চাইতেও জনপ্রিয়। জাতিসংঘের হিসেবে যাদের সন্তান জন্মদানের বয়স হয়েছে তাদের ২২ শতাংশ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন কিন্তু বড়ি খান ১৬ শতাংশ। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এই পরিসংখ্যান একেবারেই বিপরীত।

এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বীমার কথা যাতে অন্যান্য অস্থায়ী জন্মনিরোধক ব্যবহারের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এছাড়াও একবার বন্ধ্যাকরণ করে নিলে সেটা সারা জীবন ধরে বড়ি খাওয়ার চেয়ে সস্তা। এছাড়াও অতীতে বিভিন্ন রাজ্য সরকারও স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের জন্যেই নারীদের, বিশেষ করে দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক নারীদের উৎসাহিত করতো।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএইচ/ এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি